অনলাইন ডেক্স::
রাজধানী ঢাকার আশকোনায় র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পে আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। শুক্রবার বিকালে আইএসের সংবাদ মাধ্যম আমাক মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের মাধ্যমে এই হামলার দায় স্বীকার করে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই জঙ্গিগোষ্ঠী প্রথমে আরবি ভাষায় প্রচারিত আমাক নিউজ এজেন্সিতে এবং পরে বাংলা সাইট আত তামকিনেও একই দাবি করে। বিবিসির এক প্রতিবেদনেও এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া সুইডেনে অবস্থানরত সংবাদকর্মী তাসনিম খলিলও টুইটারে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট টুইট করেন।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্রে ঢাকা শহরে এলিট ফোর্সের একটি সামরিক ক্যাম্পে বিস্ফোরক বেল্ট দ্বারা সংঘটিত একটি ইসতিশহাদী হামলা আঘাত হানে।
এর আগে দুপুর ১টার দিকে আশকোনায় হাজি ক্যাম্পের পাশে র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পে আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় এক ব্যক্তি। ওই ঘটনায় দুইজন র্যাব সদস্য আহত হন। বিস্ফোরণে হামলাকারীর দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তার মাথা আর দুই পা বাদে শরীরের কঙ্কাল-কাঠামো ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া একাধিক ছবি দেখে এবং একাধিক র্যাব কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিস্ফোরণে ওই ব্যক্তির শরীরের পুরো মাংসই উড়ে গেছে। বিস্ফোরিত বোমা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তার শরীরের একখ- মাংসপি- ৫০ মিটারের বেশি দূরের একটি পাইপে গিয়ে পড়ে।
আত্মঘাতী বিস্ফোরণে হামলাকারীর মৃতদেহ ক্ষতবিক্ষত হওয়ায় তার শরীরে আরো বোমা থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন র্যাব সদস্যরা। তাই জায়গাটিকে নিরাপদ করার জন্য বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট পুরো ঘটনাস্থল সার্চ করছে। নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে।
এর আগে বিকাল তিনটায় ঘটনাস্থলে এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান। তিনি বলেন, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা আমাদের সদর দফতর নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জায়গা। এখানে যেহেতু কাজ হচ্ছে, এই কাজের যারা দেখাশোনা করে তারা এবং আমাদের কিছু এডমিনের লোকজন থাকে। এছাড়া কিছু স্টোর আছে এই জায়গাটাতে। আর একটা মেইনগেট আছে, যেখানে সাধারণত যানবাহনসহ অন্যান্য জিনিস নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
মুফতি মাহমুদ বলেন, এখানে বাউন্ডারি সংলগ্ন একটি জায়গা আছে যেখানে আমাদের এডমিনের লোকজন গোসল করে এবং জামা কাপড় পরিষ্কার করে। আনুমানিক বেলা ১টার দিকে নামাজের ঠিক আগে একজন অপরিচিত লোককে বাউন্ডারির দেয়ালের নিচ দিয়ে আসতে দেখে গোসল করতে থাকা র্যাব সদস্যরা। পরে তারা তাকে চ্যালেঞ্জ করে। চ্যালেঞ্জ করার পরিপ্রেক্ষিতেই ওই লোক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ঠিক তখনই একটি বিস্ফোরণ হয় এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমাদের যে দুইজন সদস্য ওই ব্যক্তিকে চ্যালেঞ্জ করেছিল তারাও ওই বিস্ফোরণে আহত হন। তাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে এবং তারা এখন আশঙ্কামুক্ত ও মোটামোটি সুস্থ আছেন।’
তিনি বলেন, যেহেতু বিস্ফোরণ হয়েছে সেহেতু ওই জায়গাটাকে নিরাপদ করা জন্য আমাদের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট আসছে। আশেপাশের পুরো জায়গা আমরা তল্লাশি করে নিশ্চিত হতে চাই যে এখানে আর কোনো আশঙ্কা নেই, আর কোনো ধরণের বিস্ফোরক নেই। বাকি যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো এখনই জানানো সম্ভব নয়। কারণ মৃতদেহটা ওইখানেই পড়ে আছে, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট পুরো জায়গাটাতে তল্লাশি চালাচ্ছেন।
মুফতি মাহমুদ আরো বলেন, যেহেতু বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং মৃতদেহ যেটা আছে সেটা ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, সেই ভিত্তিতে ধারণা করা যেতেই পারে তার বডিতে অন্য কোনো বোমা থাকতে পারে। আমরা সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে চাইছি। কারণ এখানে যারা কাজ করবে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই আমরা। এরপর আনুষাঙ্গিক অন্যান্য যে প্রক্রিয়াগুলো আছে সেটা সম্পূর্ণ করা হবে। তবে কোনো লিফলেট বা অন্য কোনোকিছু পাওয়া যায়নি।