হাওর ডেস্ক::
গত পাঁচ মাসে করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি বা সংক্রমণ হয়নি এমন এলাকা নেই বললেই চলে। কিন্তু সিলেট বিভাগের ৯০টি পুঞ্জিতে এখনো কোন কভিড-১৯ রোগী পাওয়া যায়নি। এমনকি করোনা উপসর্গের কোন রোগীর মৃত্যুও হয়নি।
কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন (পুঞ্জিবাসীদের অধিকার আদায়ের একটি সংগঠন) দেওয়া তথ্যমতে সিলেট বিভাগে প্রায় ৯০টি পুঞ্জি রয়েছে। জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার।
পুঞ্জিগুলোকে করোনামুক্ত রাখতে দিন-রাত মাঠে কাজ করছেন আদিবাসী নেতৃবৃন্দ। তাঁরা এক পুঞ্জি থেকে আরেক পুঞ্জিতে ছুটছেন। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন। পাশাপাশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করাসহ সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে নানামুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। চাল ডাল বাইরে থেকে কিনে আনার পর স্প্রে করা হয় এবং এক সপ্তাহ পুঞ্জির গেইট সংলগ্ন বাড়িতে রাখা হয় যেন কোন রকম ভাইরাস পুঞ্জিতে ছড়াতে না পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, আজ (মঙ্গলবার) পর্যন্ত সিলেটে মোট করোনা রোগী পাওয়া গেছে ১০ হাজার ৮৮জন। এদের মধ্যে মারা গেছে ১৮৭ জন। অথচ পুঞ্জিতে বসবাসকারী আদিবাসীদের ভেতর কোনো করোনা সংক্রমন হয়নি।
এসব এলাকার মানুষ ঠিকমত লকডাউন মানে ও স্বাস্থ্যবিধি মানছে বলেই আজ পযন্ত কোন রোগী পাওয়া যায়নি। তারা মানছেন বলে তাদের এই কর্মকাণ্ডের সুফলও মিলেছে। তিনি পুঞ্জিতে সম্পূর্ণ লকডাউন ও হাইজিন প্রোটোকলকে অনুকরণীয় বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি একটি খুব ভাল অনুশীলন। যে কেউ উদাহরণ হিসাবে এটি অনুসরণ করতে পারে।’
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ইসলা ছড়া পুঞ্জির বাসিন্দা দিপু রেমা জানান, লকডাউন বাস্তবায়নের বিষয়ে তারা গ্রামের সবার সাথে মিটিং করেছেন, যাতে কাউকে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয় না। কভিড-১৯ যদি আমাদের অঞ্চলে প্রবেশ করতে সক্ষম হয় তবে প্রত্যেকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এজন্য আমরা এসব করছি।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মেগাটিলা পুঞ্জির মন্ত্রী (প্রধান) মনিকা খংলা বলেন, ভাইরাসের বিরুদ্ধে সতর্কতা হিসাবে এমনকি বাইরে থেকে কেনা চাল বা ডালের বস্তায় স্প্রে ছিটানো হয় এবং পুঞ্জি ফটক সংলগ্ন একটি ঘরে এক সপ্তাহ রাখা হয়।
সিলেট ডায়োসিসের প্রধান বিশপ বিজয় এন ডি ক্রুজের নেতৃত্বে সচেতনতা বাড়াতে পুঞ্জিতে কাজ করছেন ফাদার যোসেফ গোমেজ ওএমআই এবং তাঁর দলও। তিনি বলেন, আমরা এক পুঞ্জি থেকে অন্য পুঞ্জিতে যাচ্ছি সবাইকে মাস্ক পরাতে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং স্বাস্থ্যবিধি নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছি। তিনি জানান, গত কয়েক মাস ধরে পুঞ্জিগুলোতে জনসাধারণের উপাসনার জন্য একত্রিত হওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং বলেন, সিলেট বিভাগের প্রায় ৯০টি পুঞ্জি আছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার আদিবাসী লোকজন বসবাস করে। বেশিরভাগ এলাকায় পাহাড়ি রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ থাকায় এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায়। এখানে অনেক দুর্গম এলাকা যেখানে আধুনিক সুবিধা নেই।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেছেন, কভিড-১৯ ইস্যুতে পুঞ্জিবাসীরা আন্তরিক ছিলেন। তাদের কড়া নিয়ম ও শৃংখলা আমাদের গর্বিত করে তুলেছে। আমরা তাদেরকে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাতে সহায়তা করছি, যাতে স্বাস্থ্যবিধি মানা বাধ্যতামূলক করা হয়।