হাওরে ডেস্ক::
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী শেখকে হাতুড়িপেটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনায় দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ ও র্যাবের যৌথ একটি টিম। তারা হলো জাহাঙ্গীর হোসেন ও আসাদুল হক (৩৫)। জাহাঙ্গীর হোসেন ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং আসাদুল হক ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের সদস্য। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাকিমপুর থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ।
শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোর ৫টার দিকে হাকিমপুর থানাধীন হিলির কালিগঞ্জ এলাকা থেকে আসাদুলকে আটক করা হয়। সে ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুরের আমজাদ হোসেনের ছেলে। আসাদুলই ইউএনওর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হাকিমপুর থানা পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাকিমপুর, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানা এবং র্যাব রংপুরের একটি দল যৌথভাবে শুক্রবার ভোররাত ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে হিলির কালিগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসাদুল হককে আটক করে। তাকে রংপুরে র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে ঘোড়াঘাট থানার ওসি আমিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, র্যাব ও পুলিশের একই টিম জাহাঙ্গীরকে আটক করেছে। সেও ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জাহাঙ্গীর ও আসাদুলের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে হামলা, চাঁদাবাজি, মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ত্রাণ বিতরণকালে ঘোড়াঘাট পৌর মেয়রের ওপর তারা হামলা চালালে মামলাও দায়ের করা হয়। এছাড়াও যুবলীগে তাদের নামে একাধিক অভিযোগ তুলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। তবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, বুধবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। গেটে দারোয়ানকে বেঁধে ফেলে তারা। পরে বাসার পেছনে গিয়ে মই দিয়ে উঠে ভেনটিলেটর ভেঙে বাসায় প্রবেশ করে হামলাকারীরা। ভেতরে ঢুকে ভারী ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং আঘাত করে ইউএনও ওয়াহিদাকে গুরুতর আহত করে তারা। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে (৭০) জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে তারা অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ভোরে স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
ওয়াহিদা খানম বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন। অস্ত্রোপচার শেষে তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। অস্ত্রোপচার সফল হলেও ইউএনও ওয়াহিদা আশঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ইউএনও ওয়াহিদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে এ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। রাত সোয়া ৯টা থেকে শুরু হয়ে রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত চলে এই অস্ত্রোপচার।
ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, যখন প্রথম তাকে নিয়ে আসা হয় তখন ব্যান্ডেজ করা ছিল, অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়ার পর দেখা যায় মাথায় মোট নয়টা আঘাতের চিহ্ন। একটা খুব বড়, যার ভেতর দিয়ে হাড় ভেঙে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। বাকি আটটা ইনজুরি ছিল। তার ভেতরে ছিল মাথার দুই পাশে তিনটা করে ছয়টি, মুখের ওপরে একটি, নাকের ওপরে একটি এবং চোখের নিচে একটি। ভেতরে ঢুকে যাওয়া হাড় বের করা হয়েছে, রক্তরক্ষণ বন্ধ করা হয়েছে। অন্য আঘাতগুলোও সব রিপেয়ার করা হয়েছে। আমার আশাবাদী। তবে এটা হেড ইনজুরি, ব্রেইনের ভেতরে রক্তক্ষরণের ব্যাপার। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন কিনা এখনই আমরা বলতে পারবো না। তাকে অন্তত ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ রাখার পর বলতে পারবো।
তিনি শঙ্কামুক্ত কিনা প্রশ্নে ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, এখনই শঙ্কামুক্ত কথাটা আমরা বলবো না। আগে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কারণ তার মাথায় আঘাত লেগেছে, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ডান পাশ প্যারালাইজড ছিল সেটা আশা করি সচল হয়ে যাবে। তবে তাতে সময় লাগবে।