একজন নিপাট ভালো মানুষ, সজ্জন ব্যক্তি, জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক কামাল ভাই ( ৪৫) বড় অসময়ে সৃষ্টিকর্তার ডাকে পরপারে চলে গেলেন গতসন্ধ্যায় ঢাকায় কিডনি ফাউন্ডেশনে চিকিৎসারত অবস্থায়। তিনি ২০১৬ সাল থেকে কিডনি রোগে ভোগছেন। ভারতে কয়েকবার চিকিৎসা নিয়েছেন। সর্বশেষ মৃত্যুর পূর্বে তার দুটো কিডনি অকেজো হয়ে যায়। পরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। কয়েক বছরের দাম্পত্য জীবনে শহরের পৌর ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত তার সহধর্মীনী শেখ ফারজানা সুমা ও ছোট সন্তানকে রেখে এই বিদায় সত্যিই বেদনাদায়ক। তার মৃত্যুটি শহরের সবাইকে হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। সেটা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে উঠে এসেছে। আজ দুপুর দুটায় নিজ প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় জানাজার নামাজ পূর্ব সতীর্থ, স্বজন, সহকর্মী, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের স্মৃতিচারণে উঠে আসে তাঁর জীবনাচরণ। এই অবক্ষয়ের ঘুণে ধরা সমাজে একজন মানুষ চারিত্রিক দিক দিয়ে এতো ভালো হতে পারেন। সেটা ভাবাই যায় না। ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বাবার কাধেঁ সন্তানের লাশ। এর চেয়ে কষ্টকর আর কি হতে পারে। মকবুল হোসেন স্যার ছেলের লাশের পাশে দাড়িঁয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কথা বলতে পারছিলেন না। কামাল ভাইয়ের বাবা আমার প্রিয় মকবুল হোসেন স্যারের স্মৃতিচারণে উঠে আসে পিতা মাতা ভক্ত কামাল ভাই নিজ বাসায় বাবা মাকে নিচ তলায় রেখে দুতলায় থাকতে চাইতেন না। বাবা মায়ের পাশের রুমে থাকতে চাইতেন। মৃত্যুর আধা ঘন্টা পূর্বেও হাসপাতাল থেকে ফোনে বাবা মায়ের খোঁজ নিয়েছেন। বাসা থেকে বের হলে বাবা মায়ের ঔষদ লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করতেন। পরিবারে পাঁচ ভাই বোন সকলের মতো মেধাবী কামাল ভাই প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজি সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০০১ ব্যাচে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিয়ে সুনামগঞ্জে গুনগত শিক্ষা বিস্তারে সমমনা বন্ধুরা মিলে চালু করেন সৃজন একাডেমিক কোচিং। পরে সেটাই সৃজন বিদ্যাপীঠ নামে শহরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সুনামগঞ্জ শহরে তার জন্ম ও বেড়ে উঠা। বাবার প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা, শিক্ষকতা। বাবা মকবুল হোসেন জু্বিলী স্কুলে দীর্ঘ ২৫ বছর শিক্ষকতা করেন। প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে অবসরে যান। আমি নিজেও গর্বিত ক্লাসে স্যারের মতো একজন সৎ, আদর্শবান অনুকরণীয় শিক্ষক পেয়েছি। নিজ প্রতিষ্ঠানে অশ্রুসজল প্রিয়জন ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে প্রিয় কামাল ভাই চির বিদায় নিলেন এই নশ্বর পৃথিবী হতে। বড় অসময়ে। সৃষ্টিকর্তা দ্রুতই নিয়ে গেলেন তার প্রিয় বান্দাকে। সৃষ্টিকর্তার সাথে ছিল তার যোগাযোগ। মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা পূর্বে হাসপাতালে আসরের নামাজ আদায় করেছেন। ভালো থাকুন প্রিয় কামাল ভাই। আমরাও একদিন অাপনার পথের যাত্রী হবো।
লেখক ঃ প্রভাষক, সরকারি দিগেন্দ্র বর্মন কলেজ, বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ