সিলেটভিউ::
করোনার চিকিৎসার নামে বাণিজ্যে মেতে ওঠেছে সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো। শ্বাসকষ্টের রোগী চিকিৎসা নিতে গেলেই তাকে ভর্তি করে দেয়া হয় করোনা ইউনিটে। এরপর সুরক্ষা সামগ্রীসহ নানা অজুহাতে রোগীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় গলাকাটা ফি।
ভর্তির আগে করোনা ‘নেগেটিভ’ রিপোর্ট নিয়ে গেলেও রোগীদের বাধ্য করে ভর্তি করা হচ্ছে ‘করোনা সাসপেক্টেড ইউনিটে’। ফলে ‘কোভিড প্রটোকলে’ চিকিৎসা নিতে গিয়ে কয়েকগুণ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে রোগীদের। বিল দিতে না পারলে লাশ আটকে রাখার মতো নির্মম ঘটনাও ঘটছে হাসপাতালগুলোতে। চিকিৎসার নামে হাসপাতালগুলো বাণিজ্যে মেতে ওঠলেও রহস্যজনক কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা চোখ বন্ধ করে আছেন।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সিলাম উলালমহলের নাসির উদ্দিন নামের এক শ্বাসকষ্টের রোগী গত ৩ সেপ্টেম্বর রাত ২টায় চিকিৎসা নিতে আসেন নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে। সাথে নিয়ে আসেন করোনা ‘নেগেটিভ’ সার্টিফিকেট। কিন্তু ‘নেগেটিভ সার্টিফিকেট’ অগ্রাহ্য করে ওই রোগীকে ভর্তি করা হয় করোনা সাসপেক্টেড ইউনিটে। কোভিড প্রটোকলে দেয়া হয় চিকিৎসা। পরদিন রাতে অবস্থার অবনতি হলে প্লাজমা দেয়ার জন্য রোগীর স্বজনদের চাপ সৃষ্টি করা হয়।
কিন্তু করোনা সনাক্ত না হওয়ায় স্বজনরা প্লাজমা দিতে অস্বীকৃতি জানান। রাত ৪টার দিকে ওই রোগী মারা গেলে স্বজনদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ৭৭ হাজার ৪৭২ টাকার বিল। দুইদিনের চিকিৎসার বিলে পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রীর মূল্য ধরা হয় সাড়ে ৮ হাজার টাকা। এদিকে, বিল দিতে না পারায় পরদিন সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত লাশ আটকে রাখেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
একইভাবে প্রায় দশ বছরের পুরনো শ^াসকষ্টের রোগী দক্ষিণ সুরমার জালালপুরের আবদুল করিম নর্থ ইস্ট হাসপাতালে ভর্তি হন ২৪ জুলাই। নমুনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসলেও তাকে চিকিৎসা দেয়া হয় কোভিড প্রটোকলে। গত শনিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেয়ার সময় তাকে বিল পরিশোধ করতে হয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু পিপিই ও অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর বিল ছিল ৫৫ হাজার টাকা।
নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো একই অবস্থা সিলেটের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালসহ বেসরকারি সবকটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের। শ^াসকষ্টের রোগী পেলেই রোগের ইতিহাস বা কোভিড পরীক্ষার ফলাফল আমলে না নিয়েই চিকিৎসা শুরু করা হয় কোভিড প্রটোকলে। এতে শুধু সুরক্ষা সামগ্রীর বিল বাবত প্রতিদিন রোগীকে ৪ হাজার ২৫০ টাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। এছাড়া কোভিড প্রটোকলের জন্য চিকিৎসকের ভিজিট থেকে শুরু করে ওয়ার্ড ও কেবিনের বিল বাবত অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে রোগীদের।
তবে অতিরিক্ত বিল আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, উপসর্গ থাকলে রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও রোগীকে কোভিড প্রটোকলেই চিকিৎসা দিতে হয়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে প্রতিদিন একটি পিপিই ও সুরক্ষা সামগ্রীর জন্য ৪ হাজার ২৫০ টাকা করে নেয়া হয়। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া করোনা চিকিৎসার বিল কমানো সম্ভব নয়। সরকারের পক্ষ থেকে সুরক্ষা সামগ্রী, অক্সিজেন ও ঔষধ দেয়া হলে চিকিৎসা ব্যয় অনেক কমে আসবে। বিলের জন্য লাশ আটকে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো তারা তাদের নিয়মে চলে। চিকিৎসা ব্যয় তারাই নির্ধারণ করে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’