স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের বড়গোপটিলা গারো মাঠ দখলের বিচার করতে গিয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত দিয়ে এসেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। গারো সম্প্রদায়ের লোকজন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুবিচার চেয়েছেন। উল্লেখ্য মাঠটি গারোদের ফিরিয়ে দিতে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তাহিরপুর উপজেলার কড়ইগড়া সীমান্তের আদিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সম্প্রতি বড়গোপটিলার কতিপয় স্যাটেলার মাঠ থেকে গারো আদিবাসীদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। মাঠে যাতে গারো যুবকেরা খেলাধুলা ও নিজেদের সংস্কৃতিচর্চা না করতে পারে সেজন্য তারা বাঁধা দিচ্ছে। ১৯৪৮ সনে জঙ্গল কেটে মাঠ প্রতিষ্ঠা করে খেলাধুলা, আদিবাসী দিবসসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন কড়ইগড়া, চানপুর, রাজাইসহ সীমান্তের কয়েকটি গ্রামের ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর লোকজন। গত তিনমাস ধরে হঠাৎ করে মাঠ দখলের চেষ্টা চালায় বড়গোপটিলার কতিপয় যুবক। তারা গারো যুবকদের হুমকি ধমকিসহ সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা বলে আসছে। এ নিয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বড়গোপটিলা গারো মাঠে শালিস বসে। ওই শালিসেও আদিবাসীদের পক্ষ থেকে এসব আশঙ্কা ও আক্রমণাতœক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন। শালিসে অকুণ্ঠ চিত্তে গারোদের মাঠ প্রতিষ্ঠার অবদানের কথা স্বীকার করেন শালিসকারীরা। তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে আগের মতো মাঠ ব্যবহারের দাবি জানান।
এদিকে শালিসে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বৃহষ্পতিবার সরেজমিন ঘটনাস্থলে যান তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ। তিনি গারোদের তৈরি মাঠ দখলকারী স্যাটেলার গোষ্ঠীসহ ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক গোষ্ঠীকে মিলেমিশে মাঠ ব্যবহারের কথা বলে চলে আসেন। এমন হটকারি সিদ্ধান্তে উপস্থিত গারো সম্প্রদায়ের লোকজন এবং স্থানীয় স্থানীয় নেতাকর্মীরাও অবাক হন। গারোরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করেছেন। তারা মনে করছেন এতে তাদের তৈরি মাঠ দখলকারীরা উৎসাহিত হবে। জানা গেছে মাঠটি গারোদের তৈরি হলেও সময়ের ব্যবধানে বাঙালিরাও গারোদের মাঠ পরিচালনার নির্দেশনা মেনে শান্তিপূর্ণভাবেই খেলাধুলা করে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি জোরপূর্বক গারোদের হটিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
মাঠ পরিচালনাকারী সুনীল দাজেল বলেন, আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সুবিচার চেয়েছিলাম। তিনি একতরফা ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন। এতে আমরা মাঠের অধিকার হারাব। এ কারণে আমরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করেছি। আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলব। তিনি বলেন, প্রায় ৭২ বছর ধরে আমরা মাঠ ব্যবহার করছি। খেলাধুলা ও উৎসবে আমাদের সঙ্গে বাঙালিরা অংশ নেন। আমরা আক্রমণের শিকার হইনি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সিদ্ধান্তটি মানেননি গারোরা। কারণ এই সিদ্ধান্তে সমাধানের বদলে আরো সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, আমি দুই পক্ষকে মিলে-মিশে খেলাধুলা করতে বলেছি। বিশৃঙ্খলা এড়াতে একটি কমিটিও করে দেব।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরেজমিন গিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিতে বলেছি। তবে তিনি কি সিদ্ধান্ত দিয়ে এসেছেন এখনো জানতে পারিনি।