হাওর ডেস্ক::
হেফাজতে ইসলামের আমির ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী বড় মাদরাসার দীর্ঘদিনের মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মরদেহ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আজগর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৫ বছর। অনুসারীদের কাছে তিনি ‘বড় হুজুর’ নামে পরিচিত ছিলেন।
আজ শনিবার ভোর চারটার সময় তার মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা ছেড়ে যায়।
আজ শনিবার জোহরের নামাজের পর দুপুর ২টায় হাটহাজারী মাদরাসায় আল্লামা শফীর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মাদরাসাসংলগ্ন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে। গতকাল রাত ৯টায় এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে হাটহাজারী মাদরাসার শুরা কমিটি।
দেশের শতবর্ষী প্রবীণ এ আলেমের মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক জানিয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আল্লামা শফীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
আজগর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তথ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৬টার দিকে আল্লামা শফীকে ওই হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে গুরুতর হয়ে পড়লে আল্লামা শফীকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গতকাল বিকেলে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে আনা হয় ঢাকায়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত দুর্বলতায় ভুগছিলেন।
আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জন্ম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে। হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসায় লেখাপড়া শেষে তিনি ভারতের দেওবন্দ মাদরাসায় উচ্চশিক্ষা নেন। তিনি ১৯৮৬ সালে দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী বড় মাদরাসার মহাপরিচালক (মুহতামিম) পদে যোগ দেন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। হাটহাজারীতে এত দিন ধরে তাঁর কথাই ছিল শেষ কথা। এ মাদরাসার শিক্ষকদের বেশির ভাগই তাঁর ছাত্র। যে কারণে তাঁর সঙ্গে কেউই দ্বিমত পোষণ করতেন না।
মৃত্যুর মাত্র এক দিন আগে বৃহস্পতিবার একদল শিক্ষার্থীর আন্দোলনের মুখে হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক (মুহতামিম) পদ থেকে পদত্যাগ করেন আল্লামা শফী। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে মাদরাসার শুরা সদস্যদের বৈঠকে আল্লামা শফী এই ঘোষণা দেন। মজলিসে শুরার বৈঠকের পরপরই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে গত বৃহস্পতিবার দুপুরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন দেশের শীর্ষ কওমি আলেম আল্লামা শফী।
কওমি মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ গঠনের মধ্য দিয়ে জাতীয়ভাবে আলোচনায় আসেন আল্লামা শফী। বিশেষ করে ১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ ও ঢাকার মতিঝিলে শাপলা চত্বরে সমাবেশের মধ্য দিয়ে আল্লামা শফী ও হেফাজতে ইসলামের নাম সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
আল্লামা শফী কওমি শিক্ষার সবচেয়ে বড় শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান। আল্লামা শফীর অন্যতম সাফল্য বর্তমান সরকারের কাছ থেকে কওমি মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি আদায়। ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল গণভবনে তাঁর নেতৃত্বে কওমি আলেমদের উপস্থিতিতে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ সনদ দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামী স্টাডিজে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সংসদে এই বিলও পাস করেন। এই দাবিটি কওমি আলেমদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। তাদের ১৪ বছরের শিক্ষা জীবনের কোনো স্বীকৃতি না থাকায় এত দিন তারা কোনো সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারতেন না।
দেশের আলেমদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র আল্লামা শফী বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে ৯টি বইয়ের রচয়িতা। তিনি দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। ছোট ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী হেফাজতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও হাটহাজারী মাদরাসার সহকারী শিক্ষা পরিচালক ছিলেন। বড় ছেলে মাওলানা মো. ইউছুপ আল্লামা শফীর নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসার পরিচালক (মুহতামিম) হিসেবে কর্মরত।