ইদানিং আমাদের দেশে কোন অপরাধ ঘটলে সেই অপরাধকে বা অপরাধের কঠোরতাকে আড়াল করে আমরা সেটা অন্য নাম দিয়ে লেভেলিং করার চেষ্টা করি।নিজেদের দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভ বা প্রতিহিংসাকে এই অপরাধের সাথে জড়িয়ে সেটা ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করি।
সম্প্রতি সাভারে নীলা রায় নামে এক তরুণকে প্রেমের প্রস্তার প্রত্যাখান করায় ভাইয়ের সামনে থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিখাঘাত করে খুন করে এক বখাটে।সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টা অনেকেই এভাবে প্রকাশ করে যে মুসলিম ছেলের প্রস্তাবে হিন্দু মেয়ে রাজি না হওয়ায় তরুণী খুন! এটা একটা খুন, এর নৃশংসতা যে কাউকে নাড়া দিবে। সেই জঘন্যতাকে বিবেচনায় না রেখে ঘৃণা ছড়াচ্ছে একটা বিশেষ সামাজের বিরোদ্ধে।
গত ২সেপ্টেম্বর,২০২০ খাগড়াছড়িতে ডাকাতিকালে মাকে বেঁধে রেখে গণধর্ষণ করা হয় এক নৃগোষ্ঠীর তরুণীকে।মায়ের সামনে মেয়ের উপর এমন বর্বরতা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।এই অপরাধকে দেখানো চেষ্ট হলো এভাবে যে আদিবাসী মেয়েকে গণ ধর্ষন করলো একদল বাঙালি!এখানেও এমন জঘণ্য ঘটনাকে ধিক্কার দিতে গিয়ে প্রতিহিংসা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে বাঙালি আর অন্য নৃগোষ্ঠীর মধ্যে।
গতকাল সিলেট এর এমসি কলেজে স্বামীর সামনেই গণধর্ষনের শিকার হয় এক স্ত্রী।এখানেও ফোকাসড ছাত্রলীগ।অনেকের প্রতিবাদ করে বলছে সিলেটের পবিত্র মাটি কলঙ্কিত করেছে এরা।তার অর্থ কি এই যে এই অপরাধ অন্যত্র ঘটালে সমস্যা নাই,পবিত্র মাটিতে ঘটানো যাবেনা।
এভাবে প্রতিটি অপরাধকে আমরা ভিন্নভাবে লেভেলিং করে এর দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নিই।সামজিক যোগযোগ তো এখন তথ্য আদান প্রদানের সবচেয় বড় মাধ্যম,এখানই পোস্ট করে অনেক সাম্প্রদায়িক সংঘাত, বিভন্ন সহিংসতা ঘটেছে অতীতে।এতে করে মূল অপরাধটা হালকা হয়ে যায়; কখনো বা আড়াল হয়ে যায়।
এখন আসি মানুষ এইভাবে কেন ঘটনা অন্যদিকে প্রবাহিত করতে চায়।একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় যারাই এসব করে তারা কোন না কোনভাবে ঐ গ্রুপের (যাদের দিকে ঘটনা প্রবাহের চেষ্টা) প্রতি সংক্ষুব্ধ,তারা কোন অবস্থাতেই ঐ গ্রুপের সাথে পেরে উঠেনা।এরা সব সময় নিজেদের বঞ্চিত আর ক্ষুদ্র মনে করে; তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টায় লিপ্ত,যা অপরাধের ফোকাস নষ্ট করে অপরাধকে হালকা করে ফেলে।তার যতটুকু চায় এই অপরাধের বিচার হোক তারচেয়ে বেশি চায় তাদের ফোকাসড গ্রুপের বিরোধে জনরোষ তৈরি হোক, তাদের পতন হোক।
এভাবে ফোকাস ঘুরানোকে কোন অবস্থায়ই সচেতন মহলের প্রতিবাদ ধরা যায় না।সচেতন হলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন সাথে সাথেই।সত্য-মিথ্যাকে স্পষ্ট করে বলার সাহস দেখান। অপরাধীদের চিহ্নিত করতে,তাদের শাস্তি নিশ্চিন করতে সরব থাকুন।তাদের সামাজিকভাবে অসহযোগিতার ব্যাপরে ঐক্যবদ্ধ হোন। অপরাধী যাতে কোন বিশেষ মহলের সমর্থন না পায় সে ব্যাপারে সজাগ থাকুন থাকুন।
লেখক: মোহাম্মদ সেলিম মিয়া, প্রভাষক নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,সিলেট।