জগন্নাথপুর প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের আলীগঞ্জ বাজারে মেয়েকে না পেয়ে বৃদ্ধ বাবাকে রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে একদল বখাটে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (৫ অক্টোবর) গভীর রাতে।
ঘটনার পর রাতভর অভিযান চালিয়ে জগন্নাথপুর থানার পুলিশ চারজনকে আটক করেছে। তবে প্রধান অভিযুক্তকে এখনও আটক করতে পারেনি। আটককৃতরা হলো- গোতগাঁও গ্রামের লিটন মিয়া (৩০), আকাই মিয়া(২৭), আলম মিয়া (২৮) ও দিলাক মিয়া (২৫)। এ ঘটনায় ৫ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতিতা নারী মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ আজ মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এদিকে বৃদ্ধকে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও নির্যাতিত বৃদ্ধের পরিবারের লোকজন জানান, সাত বছর আগে গোতগাঁও গ্রামের আনোয়ার আলীর মেয়ের বিয়ে হয় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার রাজারবাগ গ্রামের কবির মিয়ার সঙ্গে। এর দুই বছর পর তাদের মধ্যে দাম্পত্য বিরোধ দেখা দিলে একমাত্র পুত্র সন্তানকে নিয়ে মেয়েটি বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে গ্রামের আগুর মিয়ার বখাটে ছেলে শামীম মিয়ার নজর পড়ে মেয়েটির উপর। প্রায়ই তাকে মেয়েকে উত্যক্ত করত ও কুপ্রস্তাব দিত শামীম। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েটির বাবা গোতগাঁও থেকে আলীগঞ্জ বাজারে একটি কলোনিতে ঘর ভাড়া করে মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। গত একমাস আগে শামীম ওই কলোনি থেকে মেয়েকে তুলে নিয়ে যায় এবং কিছুদিন আটক রেখে তাকে ধর্ষণ করে। পরে মেয়েটি নবীগঞ্জ উপজেলার অভয়নগর গ্রামে গৃহপরিচারিকার কাজ নেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শামীম তার লোকজন নিয়ে আলীগঞ্জ বাজারের কলোনিতে গিয়ে মেয়েটির খোঁজ করে। মেয়েকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবা আনোয়ার আলীকে (৬৫) রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। খবর পেয়ে পুলিশ রাতে অভিযানে নামে এবং ৪ জনকে আটক করে।
নির্যাতনের শিকার আনোয়ার আলী জানান, শামীমের অত্যাচারে মেয়েকে নিয়ে তিনি অনেকদিন ধরে বেকায়দায় আছেন। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করেও কোনো প্রতিকার পাননি। মেয়েকে ঘর থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে তার কাছে আটক রেখে ধর্ষণ করেছে শামীম। লোকলজ্জার ভয়ে মেয়েটি সেখান থেকে চলে গিয়ে নবীগঞ্জে গৃহপরিচারিকার কাজ নেয়। এতে শামীম ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়ের বাবাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে।
পাইলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মখলেছুর রহমান ও ইউপি সদস্য আলী আকবর জানান, শামীম এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে থানায় চুরি ও মাদকের মামলা রয়েছে। মেয়েটিকে উত্যক্ত করা ও জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা তারা লোকমুখে শুনেছেন।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মুসলেহ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা নবীগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে নবীগঞ্জ থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করেছি। মূল আসামি শামীমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’