সাজ্জাদ হোসেন শাহ্:
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উপজেলার লাউড়েরগড় সীমান্তে বিজিবি ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে বিজিবির দুই কর্মকর্তা, সৈনিক ও শিশুসহ ১০জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি ১১ রাউন্ড এস এম জির ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বাদাঘাট ইউনিয়নের লাউড়েরগড় সীমান্তের শাহিদাবাদ বর্ডার হাট সংলগ্ন(কাটাল বাগান) এলাকায়। আহত শিশু বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের মুকসেদ পুর (উত্তর) গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে সুমন (৮)। আহত অন্যান্যদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায় নি।
এ ঘটনায় লাউড়েরগড় সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সীমান্ত এলাকায় ফের যাতে কোন রকম সংঘর্ষ না ঘটে সেজন্য অতিরিক্ত বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে সুনামগঞ্জ-২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন এর উপ পরিচালক মাহবুব আলম ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন।
সরেজমিনে বুধবার রাত প্রায় ১০ টার দিকে বিজিবির সাথে কথা বলে জানা গেছে, সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহিদাবাদ বর্ডার হাট সংলগ্ন এলাকা দিয়ে বেশ কয়েকজন শ্রমিক কুড়ানো কয়লা নিয়ে আসার পথে বিজিবির সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা ল্যান্স নায়েক নাঈম ইসলাম তাদের পথরোধ করেন। এ সময় কুড়ানো কয়লা ফেলে রেখে দৌড়ে পালিয়ে যায় এবং সাথে থাকা শিশুটিও দৌড় দিলে হোঁচট খেয়ে হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে। পরে স্থানীয় লোকজন শিশুটিকে উদ্ধার করে মোকাম সংলগ্ন একটি দোকান ঘরে নিয়ে পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে।
এদিকে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বিজিবি’র গোয়েন্দা কর্মকর্তা শিশুটিকে বেদম প্রহার করলে গুরুতর আহত হয়ে শিশুটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা মিয়া খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে লাউড়েরগড় বাজারের একটি ফার্মেসিতে এবং পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাঠান।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য বলেন, শিশুটির শরীরে গুরুতর কোন আঘাত দেখা যায়নি, রক্তাক্তও হয়নি।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, বিজিবির প্রহারে শিশুটি মারা গেছে।
এ খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৭টার দিকে স্থানীয় এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে মিছিল করতে থাকে এবং বেশ কিছু স্থানীয় লোকজন বিজিবির গোয়েন্দা কর্মকর্তার উপর অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এ সময় টহলরত সিপাহি আরজু এগিয়ে আসলে উত্তেজিত জনতা তাকে লক্ষ্য করেও পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে টহলরত বিজিবির বাকি সদস্যরাও এগিয়ে আসে। শুরু হয় ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া এবং জনতা লাঠিসোঁটা নিয়ে বিজিবিকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে।
একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাউড়েরগড় সীমান্ত ফাঁড়ির ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার আ. রাজ্জাক এসএমজি’র ১১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেন।
ঘটনার খবর পেয়ে তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ তরফদার এর নেতৃত্বে এসআই দ্বীপঙ্কর কান্তি বিশ্বাস, এস আই পাপেল রায়, এস আই মিজানুর রহমান ও বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান রাত ১০ টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিজিবি এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন। এসময় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
সুনামগঞ্জ-২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল মাকসুদুল আলম জানিয়েছেন,
ঘটনাটি যে ভাবে প্রচার করা হয়েছে তা সঠিক নয়। সীমান্ত সংলগ্ন জাদুকাটা নদীতে শ্রমিকদের ধাওয়া করলে সাথে থাকা শিশু সুমন হোঁচট খেয়ে আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে শিশুটি মারা গেছে।
পরে স্থানীয় লোকজন বিজিবির উপর হামলা চালালে বিজিবি আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ, অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফ তরফদার, ইউপি চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন, সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা নিজাম উদ্দিনসহ স্থানীয় এলাকাবাসীকে নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।