হাওর ডেস্ক::
মহান বিপ্লবী চে গেভারা-ফিদেল ক্যাস্ত্রোর দেশ কিউবা। সমাজতান্ত্রিক দেশটি খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসাসেবা আর মানবাধিকারের দিক দিয়ে বিশ্বে সেরা। কিন্তু মার্কিনীরা কখনই এই দেশটিকে দেখতে পারে না। কারণ চে-ফিদেল কেউ মার্কিন কর্তৃত্ববাদ মেনে নেয়নি। সারাবিশ্ব শাসন করা আমেরিকা কিউবানদের বাগে আনতে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিল। সেই ফিদেল ক্যাস্ত্রোর অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন প্রয়াত কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনা। কিউবাকে তিনি ভালোবাসতেন নিজের দেশের মতো।
আজ থেকে ১৮ বছর আগে ২০০২ সালে জাপানে বসেছিল ফিফা বিশ্বকাপের আসর। সেখানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনা। একদিন তিনি অল্প সময়ের জন্য স্থানীয় প্রেসক্লাবে গিয়েছিলেন। সেখানেই সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরেন। ম্যারাডোনার উদ্দেশ্যে কমন প্রশ্ন- ছিয়াশির বিশ্বকাপে সেই ‘হ্যান্ড অব গড’ গোল। এক পর্যায়ে এক মার্কিন সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করে বসেন রাজনৈতিক বিষয়ে। মার্কিন সাংবাদিকরা ম্যারাডোনাকে দেখলেই সাধারণত কিউবা নিয়ে প্রশ্ন করতেন।
তো সেই মার্কিন সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, ‘কিউবা হচ্ছে একনায়কতান্ত্রিক একটি দেশ, মানবাধিকার যেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং যে দেশটিতে বাকস্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। এসব জানার পরেও আপনি কেন কিউবাকে পছন্দ করেন?’ কিছুক্ষণ সেই সাংবাদিকের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ম্যারাডোনা। তারপর দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘হতে পারে কিউবায় সেই অর্থে মানবাধিকার নেই। হতে পারে সেখানে এক ব্যক্তি ও একটি গোষ্ঠী অনেক দিন ধরে ক্ষমতাসীন। তবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি দেখেছেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সেখানে সবাই ভালো চিকিৎসাসেবা পান। সেখানে কাউকে রাস্তায় ভিক্ষা করতে দেখা যায় না। দেশটি অন্যের গলা টিপে ধরে রক্ত চুষে খায় না; আপনারা যে কাজটি করে থাকেন।’
ম্যারাডোনার এই দৃঢ়কণ্ঠের জবাবে সংবাদ সম্মেলন কক্ষ করতালিতে ফেটে পড়ে। সেই মার্কিন সাংবাদিক ছাড়া উপস্থিত প্রায় সবাই আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তিকে করতালির মাধ্যমে অভিনন্দন জানান। এটাই দিয়াগো ম্যারাডোনা। চরম খামখেয়ালী, উড়নচণ্ডী এই মানুষটি আজীবন উচিত কথা বলতে কখনো ভয় পাননি। এজন্যই বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ ম্যারাডোনাকে ভালোবাসে।