হাওর ডেস্ক::
বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীর নৈরাজ্য ঠেকাতে কৃষিজাতপণ্যের মূল্য বেঁধে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এ নিয়ে কাজ করছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে চাল-ডাল, আলু-পেঁয়াজসহ ২০ থেকে ২৫টি কৃষিপণ্যের মূল্য বেঁধে দিতে কাজ এগিয়ে চলছে। এর জন্য প্রান্তিক কৃষকপর্যায়ে পণ্যের উৎপাদন খরচ সংগ্রহ করছে অধিদপ্তর।
বাজার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পণ্যের উৎপাদন বেশি হলে বাজারে দাম পান না কৃষক। অথচ সেই পণ্যই মধ্যস্বত্বভোগীর মাধ্যমে যখন ভোক্তার কাছে পৌঁছায় দাম বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বছরের পর বছর ধরে বাজারে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলে আসছে। আবার মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দিয়ে কৃষকের পণ্য বিপণনের উপায়ও নেই। এ অবস্থায় মূল্য বেঁধে দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা যায় বলে মনে করছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ বলছেন, কৃষি পণ্য মূল্য কমিশন গঠনের কথা।
বর্তমানে যেসব পণ্যের মূল্য তালিকা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া হচ্ছে সেসব পণ্যের উৎপাদন খরচ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরপর পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক খরচগুলোর তথ্যও নেওয়া হবে। তারপর এসব বিষয় নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে মূল্য নির্ধারণ করা হবে। তবে এ নিয়ে এখনো আলাদা কোনো কমিটি করা হয়নি। এখনো বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা রুটিন কাজের মধ্যেই এসব কাজ করছেন।
সূত্র বলছে, এর মধ্যেই অনেক পণ্যের প্রাথমিক উৎপাদন খরচ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন কর্মকর্তারা। আজ মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের একটি বৈঠক করার কথাও রয়েছে।
জানতে চাইলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা কৃষিপণ্যগুলোর মূল্য বেঁধে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। এ জন্য কাজ চলছে। চূড়ান্ত হওয়ার আগে অবশ্যই সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করা হবে। মূল্য বেঁধে দেওয়ার পর সেটা মানতে হবে। দৈনন্দিন মূল্য তালিকায় প্রদর্শন করতে হবে। সময় সময় বাজার তদারকিদল গিয়ে তা পরীক্ষা করবে।’
জানা যায়, বর্তমানে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু, শিম, মুলা, মিষ্টি কুমড়া, মুরগি, ডিম, গরুর মাংসসহ ৩৬টি পণ্যের পাইকারি ও খুচরার যৌক্তিক দাম তুলে ধরছে। তবে এসব মূল্য বেঁধে দেওয়ার জন্য নয়, দেওয়া হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাজার মনিটরিংয়ের জন্য। এ ছাড়া বিভিন্ন পণ্যের প্রতিদিনের খুচরা ও পাইকারি দাম তুলে ধরা হয়। এতে উৎপাদন পর্যায়ের তথ্য থাকে না।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে কৃষি পণ্য মূল্য কমিশন রয়েছে। তারা পণ্যের মূল্য পর্যালোচনা করে মূল্য বেঁধে দেয়। বাজারে পণ্য উদ্বৃত্ত হলে সরকার কিনে নেয় এবং পরে তা চাহিদার সময় বিক্রি করে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে মূল্য কমিশন স্থাপিত হয় ১৯৬৫ সালে। পরবর্তী সময়ে এর নামকরণ করা হয় ‘কৃষি খরচ ও মূল্য কমিশন’ (সিএসিপি)। ভারতে ২৩টি কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন দাম সহায়তা (এমপিএস) দেওয়া হয়। ভারতে মোট উৎপাদিত পণ্যের ১৫ শতাংশ ক্রয় করা হয় পূর্বনির্ধারিত মূল্যে। মাঠের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং কৃষি উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে কমিশন এসব কৃষিপণ্যের জন্য পাঁচটি আলাদা মূল্যনীতি প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দেয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরাও এই পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলছেন। কৃষি মূল্য কমিশন গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ সমস্যা সমাধানে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু সমস্যা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে না পারলে বাজারজাতকরণ সমস্যার সমাধান কঠিন হবে। এ জন্য একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মূল্য কমিশন গঠন করা দরকার। তাতে নিশ্চিত করা যাবে কৃষিপণ্যের লাভজনক মূল্য। এ ছাড়া উৎপাদনের গুরুত্ব বিবেচনায় বিভিন্ন অঞ্চলে সংগ্রহশালা ও হিমাগার গড়ে তুলতে হবে। ভারত ২৩টি কৃষিপণ্যের দাম বেঁধে দিচ্ছে। বিপরীতে আমাদের দেশে বর্তমানে মাত্র তিনটি পণ্যের (আউশ-আমন ধান-চাল এবং গম) দাম পূর্ব নির্ধারণ করা হচ্ছে।’