শাল্লা উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের অজিদ দাস ও প্রজেশ দাসের ঘটনা সম্পর্কিত বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসীকে জড়িয়ে যে মানববন্ধনের সংবাদটি ১ ডিসেম্বর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা আমার দৃষ্টিগোচর হয়। উপজেলার শহীদ মিনারে ‘আনন্দপুর গ্রামবাসীর উদ্যোগে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর প্রতিবাদে মানববন্ধন।’ মূলত ওই মানববন্ধনটি ছিল
পারিবারিক ও প্রজেশ দাসের অনুসারীদের মানববন্ধন। যা গ্রামবাসীর ব্যানারে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আনন্দপুর একটি বৃহৎ গ্রাম এবং অসাম্প্রদায়িক গ্রাম হিসেবেই সুপরিচিত। গ্রামটি প্রভুত সম্প্রদায়ভুক্ত। গ্রামটিতে বসবাসরত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ছয়শত। প্রজেশ দাস একজন হাঁস খামারি ও মাদকসেবী হিসেবেই গ্রামে পরিচিতি তার। মদ খেয়ে গ্রামের মানুষকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে প্রায়শই। দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে প্রকাশিত মানববন্ধন পরিচালনা করেন অভিযুক্ত প্রজেশ দাসের বড় ভাই রাধেশ দাস। ওই মানববন্ধনে একই গ্রামের বিভিন্ন নারীকে ধর্ষণ চেষ্টার আরেক চিহ্নত অপরাধী বীরেন্দ্র দাসও বক্তব্য দেয়। চলতি বছরের ৩১অক্টোবর এক নারীকে দীর্ঘদিন ধরে যৌন হয়রানীর অপরাধে বীরেন্দ্র দাসকে ৫বছরের জন্য আনন্দপুর গ্রামের মধ্যহাটিতে তার আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সালিশি বোর্ড। উক্ত সালিশ সভাটি অনুষ্ঠিত হয় হবিবপুর ইউপির ২নং ওয়ার্ড মেম্বার সুব্রত সরকারের বাড়িতে। সভার সিদ্ধান্ত অমান্য করে মধ্য হাটিতে প্রবেশ করলে ২০হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হবে বীরেন্দ্র দাসকে। সেই সালিশি সভায় আমি সহ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। ২০১৪ সালে বীরেন্দ্র দাস একই গ্রামের নমশুদ্র মহল্লায় আরেক দলিত নারীকে গভীর রাতে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। তখন ওই নারী দা দিয়ে বীরেন্দ্র দাসের পায়ে আঘাত করে। পাশাপাশি তার স্বামী স্ত্রীর চিৎকার শুনে ঘুুম থেকে উঠে ভল্লম দিয়ে আঘাত করে বীরেন্দ্র দাসকে। এই ঘটনায়ও বীরেন্দ্র দাসকে শাস্তি দেওয়া হয় গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে। এছাড়াও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন অধীকাংশ হাঁস খামারিদের লোকজন। যারা অভিযুক্ত ও প্রভাবশালী প্রজেশ দাসের সমর্থক। এছাড়াও মানববন্ধনে একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম উল্লেখ করা হয়। যিনি সম্প্রতি পুত্র বিয়োগে কখন যে কি বলেন তার ঠিক নেই। একবার বলেন প্রজেশ দাসের শাস্তি হওয়া দরকার আবার মানববন্ধনে গিয়ে অজিদ দাসের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। আমার প্রশ্ন এখানেই-যদি গ্রামবাসীর আয়োজনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হত-তাহলে গ্রামের শিক্ষিত সমাজ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মানববন্ধনে উপস্থিত নেই কেন? আমি আমার গ্রামের বহু মানুষের সাথে কথা বলেছি। সবাই একবাক্যে গ্রামবাসীর উদ্যোগে যে মানববন্ধন হয়নি তা অস্বীকার করেছেন। হাজারো মানুুুষের বসবাসরত একটি অসাম্প্রদায়িক গ্রামকে জড়িয়ে যে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে- কার্যত তা একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মানববন্ধন। এই মানববন্ধনের দায় গ্রামবাসী নিবেননা। এটা একান্তই অভিযুক্ত পরিবারের একটি কৌশলগত প্রক্রিয়া।
আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীকে জড়িয়ে যে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে- তার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।
(প্রকাশিত লেখার সম্পূর্ণ দায় লেখকের)