1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

একাত্তরের গেরিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা মালু মিয়ার কতকথা

  • আপডেট টাইম :: বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০.৪৬ এএম
  • ২২২ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বালিকান্দি গ্রামের মৃত রহিম উদ্দিনের বড় ছেলে মালু মিয়া। একাত্তরের আগে (তার ভাষায় সঙ্গ দোষে লোহা জলে ভাসে) এলাকার দুর্ধষ জনৈক ডাকাতের খপ্পরে পড়ে নিজেও নাম লেখান এ দলে। তবে দেশমাতৃকার টানে একাত্তরে এই অকুতোভয় বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাক বাহিনীর আতঙ্কে পরিণত হন। রাজাকার-পাঞ্জাবরা তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এলাকায় পুরস্কার ঘোষণা করে।
মুক্তিযোদ্ধা মালু মিয়া (৮৯) দু’টি কারণে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। প্রথমটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ। এই ভাষণ তার রক্তে আগুন ধরায়। দ্বিতীয় করাণটি হলো অগুণতি মা বোনের প্রতি পাক হায়েনাদের পাশবিক নির্যাতনের প্রতিশোধ। যে দুটি কারণে যুদ্ধে গিয়েছিলেন সেরকম আরো ভিন্ন বিষয়েরও আশু সমাধান চান তার স্বাধীন করা রাষ্ট্রের কাছে। কারণ তার আর থর সহ্য হচ্ছে না। অসুখ বিসুখে ভোগে রোগ কাতর এই দরিদ্র মানুষটি আজ হতাশ। শুধু মনোবলই বাকি। আর এই মনোবল থাকতে থাকতেই তিনি দুটি বিষয়ের সমাধান চান রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে। প্রথম বিষয়টি হচ্ছে যোদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার ও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর।
উত্তাল একাত্তর। চারদিকে পাক বাহিনী ও তার এদেশীয় দোসরদের নারকীয় অত্যাচার। সুনামগঞ্জের বর্ডার এলাকার এক সাহসী যুবক মালু মিয়া দেখলেন তার চোখের সামনে কয়েকজন পাক আর্মি তার এক প্রতিবেশী নারীকে টেনে হিচড়ে কানলার হাওর পার্শবর্তী ছনক্ষেতে নিয়ে যাচ্ছে। ওই মহিলা চিৎকার করছেন বাঁচাও বাঁচাও। হায়েনাদের এই লোলুপতায় ওই মেয়েটি তার সম্ভ্রম হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে যায়। কিন্তু নিরস্ত্র মালু দাতে দাত কামড়ে এদৃশ্য দেখেই প্রতিশোদের আগেুনে জ্বলতে থাকেন। তিনি পাকবাহিনীকে আরো কঠিন শাস্তি দিতে মনে মনে পণ করেন। সে অনুযায়ী তিনি তার গ্রামেরই পীর মানিক মিয়ার কাছে এ ঘটনা খুলে বলতেই তিনি তাকে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশ দেন। পরে তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যান বাদশা মিয়ার কাছে গিয়ে কিভাবে মুক্তিবাহিনীর খাতায় নাম লেখাতে হয় তা বুঝে এসে মুক্তির খাতায় নাম লেখান। যুদ্ধের আগে তিনি নরসিংদির একটি কাপড় মিলে শ্রমিকের কাজ করেন। সেখান থেকে এসে এলাকার এক কিশোরীর সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। বাপের সায় সম্পত্তি ছিলো। কিন্তু তার সময়েই সব শেষ হয়ে যায়। যার ফলে মিল থেকে এসে এলাকায় ভবঘুরের মত ঘুরছিলেন। সম্পত্তি হারানোর হতাশায় জড়িয়ে পড়েন নিষিদ্ধ কাজে। এই সময় সীমান্ত এলাকার আতঙ্ক রঙ্গারচর গ্রামের ভয়ঙ্কর মরম আলী ডাকাতের দলে ভিড়ে যান। তবে যুদ্ধের আগে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা হীরা মিয়ার সহায়তায় ও মানিক পীরের আশির্বাদে তিনি পাক বাহিনীকে খতম করার শপথ নিয়ে যুদ্ধের খাতায় নাম লিখান। তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে ষোলঘরস্থ পাক বাহিনীর বাঙ্কারে গ্রেণেড চার্জের দ্বায়িত্ব নেন। সফলভাবে সড়কের নিচু এলাকা বেয়ে বেয়ে একেবারে আনকোরা হলেও গ্রেণেড চার্জ করে সফল হন। তার এই বীরত্বগাথায় তার তার দলনেতা এনামুল হক চৌধুরী তাকে দিয়ে আরো কয়েকটি সফল অপারেশন পরিচালনা করেন। এর আগে তার মতো অকুতোভয় কয়েকজনকে নিয়ে তার ভাষায় একটি ‘ইস্পেশাল বাহিনী’ গঠন করেন। এই বাহিনীর অধিকাংশ অপারেশনেরই নায়ক মালু মিয়া। মালু মিয়া জানান, তিনি কয়েকজন পাঞ্জাবীকে হাতে হত্যা করেন। শায়েস্তা করেন তাদের দোসর রাজাকারদেরও।
৫ নং সেলা সাব সেক্টরের অধীনে ডলুড়া সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ করেন মালু মিয়া। এছাড়াও দিরাই থানায় ভাটি এলাকার দুধর্ষ রাজাকার ছুবা মিয়াকে ধরার জন্যও তাকে পাঠানো হয়। এর আগে সীমান্তের ত্রাস মর্তুজা ডাকাতকে ধরেন তিনি। গ্রেণেড চার্জের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় মাইন পোতার কাজও করেন মালু মিয়া। মরম ডাকাতের দলের মধ্যে তিনি মন্তাজ আলী, মজলিস মিয়া, আবদুর রশিদসহ আরো কয়েকজন ছিলেন তারা। পাক বাহিনীর ক্যাম্পে গ্রেণেড চার্জের কারণে তাকে ধরার জন্য পাঞ্জাবী সৈনিকরা পুরস্কার ঘোষণা করে।
সম্মুখ যুদ্ধে মালু মিয়া যে শুধু অস্ত্র ধরেন তা নয়। গুনগুনিয়ে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে রচিত তার কয়েকটি গানও গাইতেন। অক্ষরজ্ঞানহীন মালু মিয়া গায়ক শিল্পী না হলেও পাক বাহিনীর বিভৎসতা নিয়ে রচনা করেছেন কয়েকটি গান। তার একটি গান হলো‘ আইলোরে পাঞ্জাবী বাংলাতে/ আইলোরে পাঞ্জাবীর দল রেজাকারো সাথে/মা বোনেরও ইজ্জত খানি আইলোরে লুটিতে। এরকম আরো কয়েকটি গান আছে তার। লিখতে না পারায় সেগুলো একটি টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করে রেখেছিলেন, হারিয়ে গেছে।
মালু মিয়া এখনো মনোবল হারাননি। বয়স হলেও লাঠিতে ভর দিয়ে খুড়িয়ে হাটেন। সরকারি ভাতায় কোনরকম চলে যাচ্ছে দিন।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!