বিশেষ প্রতিনিধি::
মরমী কবি ‘হাসন রাজা’ ও ‘বখত’ পরিবার সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দুটি পরিবার। স্থানীয় নির্বাচনে নিয়মিত প্রতিদ্বন্ধিতা করে ঘুরে ফিরে এই দুই পরিবারই নাগরিকদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। কিন্তু এবার বখত পরিবার নির্বাচনে থাকলেও হাসন পরিবারের কেউ নেই। তাই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র নাদের বখত অনেকটা নির্ভার হয়ে নিজের কর্মী-সমর্থক নিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তবে তার সঙ্গে বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মোরশেদ আলম ও বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলনের আরো দুই মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় নাদেরের কর্মী সমর্থকদেরও উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে।
সুনামগঞ্জে মরমী কবি দেওয়ান হাসন রাজার পরিবার থেকে বিভিন্ন সময়ে পৌরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন দেওয়ান ওবায়দুর রেজা চৌধুরী, দেওয়ান জয়নুল জাকেরিন চৌধুরী ও দেওয়ান মনিনুল মউজদীন চৌধুরী। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট রাজনৈতিক সহচর ও সুনামগঞ্জ শহরের প্রিয় মুখ হোসেন বখতের পরিবার থেকে তার তিন সন্তান মনোয়ার বখত নেক, আয়ূব বখত জগলুল এবং নাদের বখত পৌরপিতা হিসেবে কাজ করছেন। এই পরিবরাই গত অর্ধ শতাব্দি ধরে পালাক্রমে পৌরপিতা নির্বাচিত হয়ে কাজ করছেন।
২০১৮ সালে এই পরিবারের জনপ্রিয় মেয়র আয়ূব বখত জগলুল ঢাকায় ঋদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তার আমেরিকাপ্রবাসী ছোট ভাই নাদের বখত মনোনয়ন পান। শহরে মিশুক ও বিনয়ী হিসেবে খ্যাত নাদের বখতও প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ উপনির্বাচনে জয়ী হোন। আয়ূব বখত জগলুল ও নাদের বখতের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা করেন হাসন পরিবারের সন্তান দেওয়ান গণিউল সালাদীন। তিনি সামান্য ভোটে পরাজিত হন। মেয়র নির্বাচতে মাত্র দেড় বছরে সেবা দিয়ে আস্তা অর্জন করেন নাদের বখত। করোনার শুরুতে মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে তিনি কাজ করে প্রশংসিত হন। তার ওই সময়ের বিভিন্ন কাজের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। প্রশংসায় ভাসতে থাকেন তিনি। তাছাড়া সম্প্রতি শহরে ড্রেনেজ ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করে দৃষ্টি কেড়েছেন নাগরিকদের।
তবে আসন্ন পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাদের বখতের সামনে শক্তিশালী কোন মেয়র প্রার্থী না থাকায় তার বিজয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছে বলে মনে করেন নাগরিকরা। তাদের মতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. মোরশেদ আলমের প্রতিদ্বন্ধিতা গড়ে তোলার কোন সম্ভাবনা নেই। নাদের বখতের মতো পারিবারিক ইমেইজের তার নিজের কোন ভোট ব্যাংকও নেই। অপর প্রার্থী ইসলামিক আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী রহমত উল্লাহকেও চিনেননা অধিকাংশ নাগরিকই। তাই ভোট ব্যাংক, জনপ্রিয়তা ও উন্নয়নজজ্ঞের কারণে এগিয়ে আছেন নাদের বখতই।
ব্যবসায়ী মানবেন্দ্র কর পাপ্পু বলেন, এবারের মেয়র পদে ভোটাভুটি পানসে হয়ে গেছে। কারণ নাদের বখতের ই-মেইজের সামনে কোন শক্তিশালী প্রার্থী নেই। তাই মেয়রের বদলে কাউন্সিলর পদের নির্বাচনই নাগরিকরা উপভোগ করবেন বলে জানান তিনি।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোরশেদ আলম বলেন, আমি শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।
নাদের বখত বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা অবশ্যই সুনামগঞ্জে আবারও বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন নাগরিকরা।