আবিদ ফায়সাল:: উত্তর-উপনিবেশী ভাবচর্চা : লাগসই আলাপ শীর্ষক বক্তৃতা করছিলেন তাত্ত্বিক, কবি ও অনুবাদক ফয়েজ আলম। সুনামগঞ্জ শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি হলরুমে শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায়। আয়োজন করে প্রতিস্বর।
ফয়েজ আলম বলেন, উপনিবেশী শাসকদের উদ্যোগে-সমর্থনে পরিচালিত স্বার্থসংশ্লিষ্ট শিক্ষাব্যবস্থা ও জ্ঞানচর্চার কারণে বিভিন্ন দেশ ও জাতির ঐতিহ্য-অভিজ্ঞতা, ভাবনার জগৎ ও তার চর্চার ক্ষেত্রে যেসব নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত ও দূর করা এবং আধিপত্যমুক্ত জ্ঞানচর্চার পথ খুলে দেওয়ার কিছু তাত্ত্বিক প্রণোদনা ও উপায় এবং একরকম আন্দোলন বলা যেতে পারে উত্তর-উপনিবেশবাদকে।
সেমিনার সঞ্চালক ছিলেন এনামুল কবির। গোছাগোছা নিরুত্তর মানুষ হলের ভেতরে বসে আছেন। কথা বলছেন ফয়েজ আলম। তাঁর কথার একটা মায়াবী সুতো বেঁধে ফেলতে চাইছে। চাইছে কী! উপনিবেশ প্রভাব থেকে উত্তরণের চিন্তাও বুনে দিচ্ছে।
ফয়েজ আলম বলছেন, বি-উপনিবেশায়ন কথাটি দুই ধাপে বিস্তৃত। প্রথমে, বি-উপনিবেশায়ন হলো উপনিবেশায়ন অবসান, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে স্বাধীনতা অর্জন। বি-উপনিবেশায়নের অতীত ও রাজনৈতিক পর্যায়টি ছিল রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পথে ভূমির পুনরুদ্ধার ও রাজনৈতিক-প্রশাসনিক স্বাধীনতা অর্জন ; কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে বলা যায় তার অবসান হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী এক যুগের মধ্যে। উত্তর উপনিবেশবাদী তত্ত্ব বি- উপনবেশায়নের পরবর্তী ধাপের অর্থই প্রাসঙ্গিক। উপনিবেশ স্বাধীন হওয়ার পর উপনিবেশক সংস্কৃতির প্রভাব বহাল থাকে স্বাধীন জনগোষ্ঠীর মধ্যে, যাকে বলা হয় উত্তর-উপনিবেশী পরিস্থিতি। এই প্রভাব কাটিয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটাই হলো বি-উপনিবেশায়ন। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্বাধীনতার পর এখন আত্ম-উদবোধন ও প্রতিরোধ সংগ্রাম মূলত উত্তর-উপনিবেশী পরিস্থিতির বিরুদ্ধে, সাংস্কৃতিক ও ভাবাধিপত্যের নিরবচ্ছিন্ন কিন্তু অসম উপস্থিতি ছুড়ে ফেলার জন্য। এর শুরু সাংস্কৃতিক ক্রিয়াশীলতায়, বোধ ও ভাবের সংগ্রামে।
ফয়েজ আলমের কথা বলা শেষ হলে শুরু হয় প্রশ্ন-উত্তরপর্ব। এসময়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত এবং প্রশ্নকর্তা ছিলেন কবি ইকবাল কাগজী, মোহাম্মদ সুবাসউদ্দিন, সুখেন্দু সেন, কুমার সৌরভ, আবিদ ফায়সাল, মালেকুল হক, সায়েম পাঠান, শামস শামীম, মো. মশিউর রহমান, অনুপ নারায়ণ, সুবল বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর আলম, দোলন দেবনাথ, সুলেমান কবির, ওয়াহিদ রোকন, ফয়সল আহমদ, ছায়াদ হোসেন সবুজ, আসাদ মনি, সুমন পাল, রিয়াজ আহমদ প্রমুখ।
তাঁরা বলেন, পশ্চিমারা শাসন শোষণের স্বার্থে, উপনিবেশ কায়েম রাখার স্বার্থে যেজ্ঞানভাষ্য তৈরি করেছে তাতে উপনিবেশিতদের মানসিকভাবে দাসে পরিণত করেছে। মনোজগতের এই উপনিবেশ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই উত্তর উপনিবেশী ভাবচর্চা জরুরি। আমাদের দাসত্ববোধকে, হিনম্মন্যতার ভূতকে তাড়াতে হবে। একই সঙ্গে, যা ভালো ছিল, গৌরবগাথাকে দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধার করে আমাদের চর্চায় আনতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় মনোজাগরণের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।