হাওর ডেস্ক::
বাংলাদেশের ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে নৌকা। হাজার বছর ধরে নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে নৌকা। মহান মুক্তিযদ্ধের সময়েও পাকিস্তনি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দুঃসাহসিক সব অভিযানে নৌকা ব্যবহার করেছেন অকুতভয় মুক্তিসেনারা। সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নের সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে বাহারি আকৃতির শত প্রকারের নৌকা। যুগ যুগ ধরে নতুন প্রজন্মের সামনে বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য বাহারি আকৃতির এসব নৌকাকে তুলে ধরতে উপকূলীয় জেলা বরগুনায় স্থাপন করা হয়েছে দেশের প্রথম নৌকা জাদুঘর।
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে নির্মিত এ জাদুঘরের নাম রাখা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর’। দেশ বিদেশের বাহারি নকশার ১০০টি নৌকার দৃষ্টিনন্দন অনুকৃতি নিয়ে শুরু হল এ বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর। বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহর পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টায় বৈশ্বিক মহামারিসহ নানা প্রতিকূলতার মাঝেও মাত্র ৮১ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয় বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর নির্মাণের কাজ। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ জাদুঘরের শুভ উদ্বোধন করেন বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।
এ সময় বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গীর কবিরসহ জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শহরের প্রাণকেন্দ্রে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন ৭৮ শতাংশ জমি জুড়ে স্থাপন করা হয়েছে এ বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর। বিশাল নৌকার আদলে তৈরি এ জাদুঘরটির দৈর্ঘ্য ১৬৫ ফিট এবং প্রস্থ ৩০ ফিট। স্বয়ংসম্পূর্ণ এ জাদুঘরে থাকবে নৌকা গবেষণা কেন্দ্র, আধুনিক পাঠাগার, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, শিশু বিনোদন কেন্দ্র এবং ফুটকোটসহ নানা আয়োজন।
বরগুনার বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব চিত্ত রঞ্জন শীল জানান, জেলা প্রশাসক মোস্তাাইন বিল্লাহর একক প্রচেষ্টা এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় স্থাপিত এ বঙ্গবন্ধু জাদুঘরটি বরগুনার ইকোটুরিজমকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করবে।
প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, প্রবীণ সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন মনোয়ার বলেন, যুগ যুগ ধরে নতুন প্রজন্মের সামনে বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য বাহারি আকৃতির এসব নৌকাকে তুলে ধরতে এ উদ্যোগ কার্যকরি ভূমিকা রাখবে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাাইন বিল্লাহ বলেন, ‘আমাদের দেশের নদনদীতে একসময় শত প্রকারের নৌকা ছিলো। সেসব নৌকা আমাদের এখন হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের শিশুরা এখন নৌকা চেনে না। তরুণরাও এখন ঐতিহ্যবাহী সেসব নৌকার কথা জানে না। আমাদের চুয়ান্ন, আমাদের সত্তর, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের বঙ্গবন্ধু অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। তাই নতুন প্রজন্মের সামনে এসব নৌকাকে তুলে ধরতে জেলা প্রশাসন বরগুনার পক্ষ থেকে আমরা মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর স্থাপন করেছি।
(কালের কণ্ঠ)