জামালগঞ্জ প্রতিনিধি
জামালগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা তুলে ধরতে শহীদ বীরবিক্রম সিরাজের স্মৃতিফলক উন্মোচন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর জামালগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সাচনা বাজারস্থ শহীদ মিনারের সাথে স্মৃতিফলক নির্মাণ ও উন্মোচন করেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জামালগঞ্জে সিরাজসহ বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তুলেন। সেই যুদ্ধে কিশোরগঞ্জ জেলাধীন ইটনা থানার ছিলনী গ্রামের মুক্তুল হোসেন ও গফুরুন্নেসার একমাত্র ছেলে সিরাজুল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ৭ আগস্ট সাচনা জামালগঞ্জ যুদ্ধে সাচনা অংশে তার নেতৃত্বে এক মরণপরণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হলেও কাভারিং ফায়ারে সিরাজুল ইসলাম মারাত্বকভাবে আহত হন। তার সঙ্গীগণ তাঁকে ট্যাকেরঘাট নেওয়ার পর ৮ আগস্ট ২টা ১৮ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সাচনা বাজার শহীদ মিনারের সম্মুখস্থলে সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী জাহানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্টের সভাপতি মো. আব্দুল আহাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. জসীম উদ্দিন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ, ৫নং ট্যাকেরঘাট সাব সেক্টরের যুদ্ধকালীন কমা-ার অ্যাড. আলী আমজদ, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমা-ার নূরুল মোমেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, সাবেক উপজেলা কমা-ার অ্যাড. আসাদ উল্লাহ সরকার, মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সালেহ আহমদ, সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার চৌধুরী লিটন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কলমদর ও শহীদ সিরাজের ভাগ্নে লুৎফুর রহমান মাসুম।
সভার শেষে ইটনা থেকে আগত শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের হাতে মুজিববর্ষ ও মুক্তিযোদ্ধা লগো সম্বলিত ছাতা উপহার দেওয়া হয়।
বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে এপ্রিলের মাঝামাঝি শহীদ সিরাজুল ইসলাম মেঘালয়ে ইকুয়ানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ৫নং ট্যাকেরঘাট সাব সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রথম অপারেশনে তিনি জগৎজ্যোতি দাশের সাথে সদরপুর ব্রিজ ধ্বংস করে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরবর্তীতে ৭ আগস্ট সাচনা ও জামালগঞ্জের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। শহীদ সিরাজের নামে সাচনা বাজারের নামকরণ এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে একটি করে তাদের ইতিহাস সম্বলিত নামফলক করার প্রস্তাব উঠে আসে। মৃত্যুর ৭ দিন আগে পিতার কাছে পাঠানো চিঠির সারগর্ভ কথা উঠে আসে বক্তব্যে।