আসসালামু আলাইকুম ও শুভ অপরাহ্ন,
সম্মানিত সুনামগঞ্জবাসী,
সর্বপ্রথমে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর প্রতি, গভীর শ্রদ্ধা জানাই জাতীয় ৪ নেতা, ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের প্রতি, যাদের জীবন আর ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। গভীর সম্মান জানাই সুনামগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরংগনা মায়েরা এবং শহিদ পরিবারের সকল সদস্যদের প্রতি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ আদেশে এ জেলায় ৯ আগস্ট ২০১৮ যোগদান করেছিলাম। আমি বিশ্বাস করি সরকারি দায়িত্বের বাইরে সুনামগঞ্জের প্রতি আত্মিক সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল আজ থেকে শুরু হল তার নতুন অধ্যায়। ভালো থেকো সুনামগঞ্জ, ভালো থেকো সুরমার জলরাশি, ভালো থেকো হাওরের সবুজ শ্যামলীমা ও নীলাভ জলরাশি, ভালো থেকো মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪টি স্বাধীনতা উপত্যকার বীর সন্তানগণ, ভালো থেকো জাদুকাটা, কুশিয়ারা, রক্তি, কালনি নদীর পানি, ভালো থাকবেন সুনামগঞ্জের আমার প্রাণপ্রিয় জনসাধারণ। যদি সম্ভব হয়, মনে রেখো আমিও ছিলাম সুনামগঞ্জেরই একজন এবং ভবিষ্যতে তার চেয়েও বেশি কিছু।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বিগত ০৯ আগস্ট ২০১৮ তারিখে সুনামগঞ্জে পথ চলা শুরু। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই সুনামগঞ্জের হাওরের মাটিতে যেমন করে দ্রুত সোনালী ধান ফলে, যেমন করে শিখর গভীরে চলে যায়, তেমনি করে মাত্র ২ বছর ৫ মাসের পথ চলায় আমার হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করেছে সুনামগঞ্জ এর মাটি ও মানুষ। বড় কিছু করেছি কখনোই দাবি করি না। তবে নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সততার সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারে প্রজাতন্ত্রের একজন সেবক হিসেবে পবিত্র দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনসেবায় কিছু করার চেষ্টা করেছি। নিজ অবস্থানে জ্ঞানত বা ইচ্ছাকৃতভাবে কারো সামান্যতম ক্ষতির কারণ যাতে না হই সে বিষয়ে সচেষ্ট থেকেছি। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে সরকার কর্তৃক নির্দেশিত প্রন্থায় সুনামগঞ্জবাসীর সেবার মানোন্নয়নে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার অম্লান স্মৃতিকে আগামীর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য জেলা প্রশাসন, সুনামগঞ্জের মাধ্যমে বিশেষ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি। একই সাথে সুনামগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবী হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনাকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার অনুযায়ী সুনামগঞ্জের ৩৯০৮টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ নতুন ঘর প্রদান উদ্যোগ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেছি।
আমার দাপ্তরিক কিংবা ব্যক্তিগত আচরণ এ কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবার বিনীত অনুরোধ করছি। আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি সুনামগঞ্জের গর্ব হাওর রত্ন মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম. এ. মান্নান এমপি সহ সকল মাননীয় সংসদ সদস্য, সাবেক মাননীয় চেয়ারম্যান বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন ড. মোহাম্মদ সাদিক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব জনাব নজিবুর রহমান, মাননীয় প্রধান তথ্য কমিশনার জনাব মরতুজা আহমদ; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব জনাব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতসহ সুনামগঞ্জের সকল কৃতি সন্তানদের প্রতি। এ ২ বছর ৫ মাস কর্মকালে সরকারের নীতি ও কার্যক্রম বাস্তবায়নে সদয় দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য মাননীয় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, মাননীয় জনপ্রশাসন সচিব, সম্মানিত বিভাগীয় কমিশনার স্যারসহ সকল সিনিয়র স্যারদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমার সকল উদ্যোগ সক্রিয়ভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য কর্মকালে সাবেক সকল সহকর্মী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দ, সিনিয়র সহকারী কমিশনারবৃন্দ, সহকারী কমিশনার (ভূমি)বৃন্দ, সহকারী কমিশনারবৃন্দ, সকল পর্যায়ের/বিভাগের সহকর্মী / জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক সহকর্মী ও সকল পেশাজীবি সংগঠনের সদস্যদের প্রতি হৃদয়ের অন্তরস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সুনামগঞ্জ জেলায় আমার সাথে কর্মরত সকল দপ্তর প্রধান ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাছি। নবাগত জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন এর সকল কার্যক্রমে আপনাদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। আমার ন্যায় তার প্রতিও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবেন সুনামগঞ্জবাসীর সেবায়।
সবশেষে আমি আমার মরহুম বাবার আত্মার শান্তির জন্য দোয়া চাই, দোয়া চাই বয়োবৃদ্ধ মায়ের জন্য। দোয়া চাই আমার সহধর্মিণী ও শিশু সন্তান আহনাফ নাহিরের জন্য। মহান আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন।
বিদায় সুনামগঞ্জ।।
বিদায় আমার প্রাণপ্রিয় সুনামগঞ্জবাসী।
ভাল থেকো সবসময় জলজোস্নার মায়াময় হাওর কন্যা।
বিনয়াবনত,
মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।
(লেখাটি ফেইসবুক থেকে নেওয়া)