হাওর ডেস্ক::
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর বাংলা নাটকের শেকড়সন্ধানী, যুগযুগ ধরে বাংলা নাটকের চলমান ধারা বদলে দেওয়া একমাত্র নাট্যকার ড. সেলিম আল দীন। চিত্রকলা, নৃত্যকলা, অভিনয়কলা ও সংগীতের সমন্বয়ে বাংলা নাটকে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন তিনি। বাংলা নাটকের শেকড় সন্ধানে তিনি নাটকের আঙ্গিক ও ভাষার ওপর চালিয়েছেন হাজারও নিরীক্ষা, করেছেন গবেষণা। আর তাই নাট্যাঙ্গনে তিনি নাট্যাচার্য হিসেবেই অধিক পরিচিত।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) ত্রয়োদশ প্রয়াণ দিবসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও কালোত্তীর্ণ এই নাট্যকারকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে। প্রতিবছর দিবসকে কেন্দ্র করে নানা আয়োজন থাকলেও এবছর করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাবের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রয়াণ দিবসের আয়োজন ছিল সীমিত পরিসরে।
দিবসটি উপলক্ষে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করেছে। দিনের কর্মসূচির শুরুতেই অমর একুশ ভাস্কর্যের চত্ত্বর থেকে দুপুর সাড়ে ১২টায় একটি স্মরণযাত্রা সেলিম আল দীনের সমাধিস্থলে গিয়ে শেষ হয়। নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি ড. সোমা মুমতাজ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স বিভাগের সভাপতি, স্বপ্নদল নাট্যসংগঠনের পরিচালক জাহিদ রিপন, দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ, সেলিম আল দীনের আত্মীয়-স্বজন প্রমুখ স্মরণযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
সেলিম আল দীনের সমাধিতে আরো শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন বাংলাদেশ গ্রামথিয়েটার, ঢাকা থিয়েটার, সেলিম আল দীন ফাউন্ডেশন, তালুকনগর থিয়েটার, স্বপ্নদল ঢাকা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, বাংলাদেশের পুতুল নাট্য গবেষণা কেন্দ্র, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, নাটক সংসদ, কলমা থিয়েটার, ভোর হোল, শহীদ টিটু থিয়েটারসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পী ও কলাকুশলীবৃন্দ।
স্মরণযাত্রায় শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের পক্ষে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীর এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি ড. সোমা মুমতাজ কর্তৃক সেলিম আল দীনের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়।
শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পর সেলিম আল দীনের সমাধি চত্ত্বরে অনুষ্ঠিত এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘আচার্য সেলিম আল দীন জাতীয় মনন ও বিশ্ব-ইতিহাস-ঐতিহ্যের সন্ধানে নাট্যচর্চা করেছেন। তাই তিনি আমাদের হয়েও বিশ্বমানব সমাজের একজন উজ্জ্বল মানুষ।’
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আফসার আহমদ বলেন, ‘সেলিম আল দীন তাঁর কাজের মধ্যদিয়ে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। আগামী প্রজন্মের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকগণ তাঁর নাটক নিয়ে গবেষণা করবেন।’
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি ড. সোমা মুমতাজ বলেন, ‘সেলিম আল দীন বাংলা নাটককে বিশ্বনাটকের মর্যাদায় উন্নীত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন।’
এ ছাড়া সেলিম আল দীনের প্রয়াণদিবস উপলক্ষে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ সেমিনার, ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ও নাটক প্রদর্শনের আয়োজন করেছে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনীর সোনাগাজীতে জন্মগ্রহণ করেন কালজয়ী এই মহাপুরুষ। ১৯৭৪ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর হাত ধরেই ১৯৮৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। বিভাগটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর একটি হাসপাতালে পরলোক গমন করেন।