জাকির হোসেন রাজু::
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়নে শাখা যাদুকাটা নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পাহাড়ী ঢল ও প্রবল বর্ষনের তোড়ে নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে ডালারপাড় ও বাগগাঁও গ্রাম দুটির আবাদি জমি, ফলের বাগান, বাঁশ ঝাড়, ঘর-বাড়িসহ অনেক স্থাপনা। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হলে আগামি বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে ভাঙ্গন কবলিত দুই গ্রামের বাসিন্দারা। বর্তমানে সর্বনাশী এই শাখা যাদুকাটা নদীর ভাঙ্গনের আতঙ্কে দুটি গ্রামের প্রায় ৫শত পরিবার।
ভাঙ্গনের কারণ হিসেবে সেখানকার অধিবাসীরা বলছেন, সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর এই শাখা নদীটি থেকে বালি ও পাথর উত্তোলন করার ফলে ২০০৪ সাল হতে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে দুটি গ্রাম। প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলের তোড়ে নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য ঘর বাড়ি ও কৃষির উপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর আবাদি জমি। ফলে নদীর পাড়ের প্রায় ৫হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। আর ভাঙ্গন হুমকিতে রয়েছে তাদের অনেক আবাদি জমি ও বসতভিটা। ইতোমধ্যে গ্রাম দুটির তিনশত বিঘার বেশি আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে বলে ওই এলাকার ভুক্তভোগী লোকজন জানিয়েছেন। এই ভাঙনে আবাদি জমি, ফলের বাগান, বাঁশ ঝাড়, জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন লোকজন।
আরো জানা যায়, বন্যায় প্রতি বছর নদী থেকে বালু এসে ফসলি জমিতে পড়ে চাষাবাদের অযোগ্য করে ফেলছে। এলাকাবাসী জানান, নদীর ভাঙ্গন এভাবে অব্যাহত থাকলে দু’তিন বছরের মধ্যে দুটি গ্রামকে নদী গর্ভে বিলিন করে ফেলবে। নদীর এই ভাঙ্গন থেকে দুইগ্রামের বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে ভাঙ্গন কবলিত এলাকাবাসী। নদী পাড়ের মানুষের অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে এক এক জনপ্রতিনিধিরা পরিদর্শনে গিয়ে সান্তনার বানী শোনালেও ভাঙ্গন রোধে কোন স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি আজও।
বুধবার সকালে সরেজমিনে নদীভাঙ্গন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘর-বাড়ি রক্ষা করতে অনেকে বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে ঘরবাড়ি আবাদি জমি। নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা দেখে নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলোর অনেকেই বাড়ি-ঘর সরিয়ে ফেলছেন নিরাপদ স্থানে। কেটে ফেলছেন মূল্যবান সব গাছ-পালা।
ডালারপাড় গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০০৪ সাল হতে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়। গত কয়েক বছরে ডালারপাড় ও বাগগাঁও গ্রাম দুটি নদীর অব্যাহত ভাঙনে আকারে অর্ধেক হয়ে গেছে। নদীর করাল গ্রাসে কিছু বাদ যাচ্ছে না। নদী ভাঙনের ফলে কোটি টাকার সম্পদ চিরতরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বাগগাঁও গ্রামের সবচেয়ে বড় ও পুরাতন মসজিদটিও নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এলাকাবাসী বেশ কয়েকবার ভাঙ্গন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন মহলের কাছে পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানিয়েছি, কিন্তু কোন প্রকার সুফল আজও পাইনি।
বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সম্ভব্য চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. জামাল হোসেন বলেন, গত বর্ষাকালে আমি আমার নিজ অর্থায়নে ভাঙ্গন কবলিত নদীর পাড়ের বেশ কিছু জায়গায় বাঁশ, বস্তা দিয়ে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা করেছি। এলাকাবাসীর পক্ষে কর্তৃপক্ষের কাছে আমার দাবি যতো দ্রুত সম্ভব্য সিসি ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে দুটি গ্রামকে রক্ষা করা হোক।
বাগগাঁও পুরাতন জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফরিদ আলম বলেন, ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত হলেই বর্ষা মৌসুমে যাদুকাটা নদীতে বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যার ¯্রােতের কবলের কারণে দুটি গ্রামে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙ্গন পরিস্থিতির। ইতোমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে আবাদি জমি, ফলের বাগান বাঁশ ঝাড়, মসজিদসহ স্থায়ী স্থাপনা। এখনো ভাঙ্গন হুমকিতে রয়েছে এখানকার ৫শতাধিক পরিবারের বসতভিটা। এলাকাবাসীর পক্ষে বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ড, জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ছুটে গিয়েছি বহুবার, কিন্তু গত ১৫ বছরে কোন সুফল মিলেনি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সফর উদ্দিন বলেন, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে আমি জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে বেশ কয়েকবার কথা বলেছি, এই দুটি গ্রামের ভাঙ্গন প্রতিরোধে উপজেলা পরিষদ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করার প্রয়োজন আমরা করবো ।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিউর রহিম জাদিদ বলেন, এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন লেভেলের বাহিরে, যদি ডিজাইন লেভেলের ভিতরে থাকে তাহলে ভাঙ্গন প্রতিরোধে আমরা কাজ করবো।