বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম জগদলে নির্মিত ২০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি অবশেষে মানুষের সেবার জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে প্রত্যন্ত এলাকার সাধারণ মানুষ আনন্দিত হলেও রাজনৈতিক কারণে প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সমর্থক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করছে। তারা এই অনুষ্ঠানকে বিএনপির অনুষ্ঠান আখ্যায়িত করলেও ২০১৩ সনের ২৩ অক্টোবর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তই সরকারি খরচে নির্মিত এই হাসপাতালের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন স্বাস্থ্য উপদেষ্ঠা সৈয়দ ডা. মোদাচ্ছের আলীকে নিয়ে। কিন্তু হাসপাতাল নির্মাণের সেই সময়ের নেপথ্যের মানুষ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিবকে বিএনপি আখ্যায়িত করে এবার সুরঞ্জিতের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরুর বিরোধীতা করছেন তারই সমর্থকরা। এ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতি এখন সরগরম।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হাওরঘেরা জনপদ দিরাই উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে ২০১৩ সনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখানে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শেষ করে। এটি চালু হলে দিরাই পূর্বাঞ্চলের লাখো মানুষেন স্বাস্থ্যসেবার পথ খুলে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও জগদলের সন্তান মো. মিজানুর রহমান নেপথ্য থেকে কাজ করেছিলেন। জাতীয়তাবাদী আদর্শের এই সাবেক আমলার মাধ্যমে এটি চালু হলে মানুষ তাকেই বাহবা দিবে এ কারণে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালুর ব্যাপারে নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেও কোন আগ্রহ দেখাননি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ২০১৭ সনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মারা গেলে তার স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা এমপি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ থেকে ড. জয়া সেনগুপ্তা আবারও এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু একই কারণে তিনি নির্মিত হাসপাতালটি চালুর উদ্যোগ নেননি। যার ফলে দিরাই পূর্বাঞ্চলের লাখো মানুষ এখনো স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত।
এই অবস্থায় সম্প্রতি সাবেক যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমান স্থানীয় তৃণমূল আওয়ামী লীগের মাধ্যমে হাসপাতালটি চালু করতে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের শরণাপন্ন হন। স্বাস্থ্যসেবা তৃণমূল মানুষের বিশেষ করে দুর্গম হাওরের মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা সংশ্লিষ্টদের স্মরণ করিয়ে হাসপাতালে সেবার দ্বার উদঘাটনের নির্দেশনা দেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে তিনি আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি এই হাসপাতালটির সেবা উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। স্থানীয় প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা নুনু মিয়া এ উপলক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। তবে মন্ত্রী যাতে হাসপাতালটি উদ্বোধন না করেন তার জন্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সমর্থকরা আবারও মাঠে নেমেছেন। সরকারের খরচে নির্মিত হাসপাতালের সেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে বিএনপির অনুষ্ঠান বলে এর বিরোধীতা করে ১৬ ফেব্রুয়ারি সভা করেছে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
জগদল বাজারের ব্যবসায়ী নজির মিয়া বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ রাজনীতি বুঝিনা। আমরা বুঝি গরিব অসহায় মানুষের জন্য হাসপাতালটি চালু হওয়া দরকার। ৮ বছর আগে কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো চালু হচ্ছেনা। এটি চালু হলে চারটি ইউনিয়নের গরিব মানুষের খুবই উপকার হবে।
প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা নুনু মিয়া বলেন, আমরা এলাকাবাসী পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের প্রতি কৃতজ্ঞ। কারণ তিনি অজোপাড়াগায়ে সরকারি খরচে নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের স্বাস্থসেবার দ্বারোদঘাটন করতে আসছেন। সরকার এত টাকা খরচ করে হাসপাতালটি তৈরি করলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে চালু হচ্ছেনা। এতে ক্ষতি হচ্ছে হাওরের গরিব মানুষের। এটা নিয়ে রাজনীতি যারা করছে তারা গরিব মানুষ উপকৃত হোক এটা চায়না।
জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নূরুল হুদা মুুকুট বলেন, আমরা পরিকল্পনামন্ত্রীর মতো একজন সজ্জন ও উন্নয়নমুখি মানুষ পেয়ে গর্বিত। ৮ বছর ধরে পড়ে থাকা হাসপাতালটির সেবার দ্বারোদঘাটন করতে যাচ্ছেন তিনি। এই খবরে আনন্দিত সাধারণ মানুষজন। আমরাও জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে যাব।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে হাওরের মানুষের উপকার হয় এমন কাজ করার জন্য। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটি অযতেœ পড়ে আছে। সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছেনা। এলাকার সাধারণ মানুষ আমাকে এই বিষয়টি বলার পর আমি হাওরের দুর্গম এলাকার এই হাসপাতালটিতে সেবা কার্যক্রম চালু করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি। প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহধর্মিনী এমপি ড. জয়া সেনগুপ্তাকেও টেলিফোন করেছিলাম। তিনি ফোন ধরেননি। আমি চাই আমরা সবাই মিলে আমাদের নেত্রীর সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে।