1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
জামালগঞ্জে নবাগত জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা সিলেটে শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসারকে অপসারণের দাবিতে গণস্বাক্ষর কার্যক্রম ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সেবার মান বাড়ানোর দাবিতে মতবিনিময় সুনামগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদ বন্যার্তদের সহায়তায় সুনামগঞ্জে শিল্পকলা একাডেমির ব্যতিক্রমী ছবি আঁকার কর্মসূচি জগন্নাথপুরে শিক্ষিকা লাঞ্চিত: দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সকল কালাকানুন বাতিলের দাবি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পান্নার মরদেহ হস্থান্তর করলো মেঘালয় পুলিশ কাদের সিদ্দিকী বললেন: বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এক নয় বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বন্যায় ২০ লাখ শিশু ঝুঁকিতে : ইউনিসেফ

মৌলিক চিন্তা-ভাবনা ছাড়া কোন জাতি বড় হতে পারে না।। মোহাম্মদ তালুত

  • আপডেট টাইম :: সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১, ৯.১৫ পিএম
  • ২৭৪ বার পড়া হয়েছে

আমাদের মৌলিক চিন্তা-ভাবনা করার ক্ষমতা খুবই কম বা একেবারেই নেই। এর কারণ অনেক, সেটা নিয়ে আগেও লিখেছি। কিন্তু কিভাবে এটা বাড়ানো যায়? সেটা নিয়ে ভাবা দরকার। মৌলিক চিন্তা-ভাবনা ছাড়া কোন জাতি গ্রেট হতে পারে না।
আমি দেখেছি, আজ অবধি আমাদের পর্যবেক্ষণ, পরিবীক্ষণ এবং বিশ্লেষণ ক্ষমতা খুবই কম। এর কারণ হল, শৈশব থেকেই এই ব্যাপারটায় আমাদের কোন স্কিল শেখানো হয় না। না পরিবার থেকে, না স্কুল থেকে। কিন্তু এটার প্রসার দরকার। কিন্তু সেটা কিভাবে করা যেতে পারে, যখন উন্নত বিশ্ব আলোকবর্ষ এগিয়ে গেছে আমাদের তুলনায়? আমরা গাদা গাদা বই পড়ে শুধু জানছি ‘’কি’’ এর উত্তর। কিন্তু ‘’কেন’’ এবং ‘’কিভাবে’’ এই দুই প্রশ্নের উত্তর খোঁজায় আমরা ভীষণ দুর্বল এবং সবসময়ই অন্যের রেফারেন্স খুঁজি। নিজের মাথা খাটিয়ে ‘’কেন’’ এবং ‘’কিভাবে’’ এই দুই ধরণের প্রশ্নের উত্তর বের করায় আমাদের কোন তাগিদ নেই, দক্ষতা নেই, তাই জ্ঞানের মৌলিক শাখায় বিচরণও কম, স্বকীয় অবদান তো নেইই।
একেবারে শুরুর দিকে চলে যাই। ‘’কি’’ থেকে মানুষ কখন ‘’কেন’’ এবং ‘’কিভাবে’’র উত্তর খোঁজা শুরু করল। প্রাচীনতম মানুষ আদম সম্পর্কে একটা কথা বলা হয়, স্রষ্টা তাঁকে বিভিন্ন জিনিসের নাম শিখিয়েছিলেন। অর্থাৎ ‘’কি’’ এর উত্তর শিখিয়েছিলেন। শেখার শুরু ঐখানেই। কিন্তু ‘’কিভাবে’’ আর ‘’কেন’’র শুরু কখন থেকে? ইহুদীদের আদিপিতা (এক অর্থে মুসলমান এবং খ্রিস্টানদেরও) ইব্রাহিম (আঃ) এর কথা ভাবা যেতে পারে। উনিই প্রথম তাঁর গোত্রের মানুষকে প্রশ্ন করা শুরু করলেন, যে তোমরা কেন প্রাণহীন ক্ষমতাহীন মূর্তির উপাসনা করছ, যার একটা ভ্যান্ডালকে প্রতিহত করার ক্ষমতা নেই? তাঁরপর একাধারে সূর্য, চন্দ্র প্রভৃতি জড় বস্তুর উপাস্য হবার যোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। অনেক ভাবনা চিন্তার পর এসবের প্রাকৃতিক গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসলেন যে এরা কোন একক শক্তির ইশারায় পরিচালিত হচ্ছে। আমার মনে হয়, ইব্রাহিম (আঃ) হয়তঃ পৃথিবীর প্রথম ডিপ থিঙ্কারদের একজন। এভাবেই সম্ভবতঃ ‘’কেন’’ এবং ‘’কিভাবে’’ প্রশ্নদ্বয়ের উত্তর খোঁজার প্রয়াস শুরু হয়েছে। ‘’কি’’ হল মানুষের ইনবর্ন ক্যাপাসিটি। আমরা শৈশবে সাধারণ জ্ঞানের বই পড়ে যা জানি, তা হল ‘’কি’’ এর জবাব। যেমনঃ বাংলাদেশের রাজধানী কি? জ্ঞানচর্চার পরবর্তী ধাপ হল, কিভাবে এবং কেন’র জবাব খোঁজা। এটা আসলে কিভাবে হতে পারে? ইবরাহিম (আঃ) এর বিভিন্ন বস্তুর পর্যবেক্ষণ করার বিবরণ পাওয়া যায়। তিনি সকালের সূর্যকে সন্ধ্যায় অস্ত যেতে দেখেছিলেন, যা দেখে সেটার চিরন্তনতা সম্পর্কে অনিশ্চিয়তা বা অনাস্থা প্রকাশ করে বলেন যে সেটা পরম উপাস্য হতে পারে না। এই যে পর্যবেক্ষণ করা এটাই আসলে কিভাবে বা কেনর স্ফুরণ ঘটায়। মজার ব্যাপার হল, ইহুদীদের আদিপিতা ইব্রাহিমের ঐ অনুসন্ধিৎসু ধারা তাদের মধ্যে আজও বর্তমান এবং ক্রমশঃ সেটার চর্চা করতে করতে তারা কোয়ান্টাম মেকানিক্স পেরিয়ে স্ট্রিং থিউরি বা ন্যানোটেকনলজির দুয়ার খুলে ফেলেছে। ইহুদীরা জ্ঞানের চর্চা করত, কিন্তু সেই জ্ঞান তাদের গোত্রের বাইরে বেরুতে দিত না। একটা গোপন গ্রুপ থাকত, যারা এই জ্ঞানগুলো সংরক্ষণ করত। তারা বিশ্বাস করত, যারা নবুয়ত প্রাপ্ত হবে, তারা ঐ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানবে স্বয়ং আল্লাহ্‌র কাছ থেকে। কারও নবুয়ত প্রাপ্তির কথা শুনলে তারা তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে তাঁর নব্যুয়তের অথেন্টিসিটি টেস্ট করত। হযরত মুহম্মদকেও (সঃ) ইহুদীদের কাছ থেকে এমন প্রশ্নমালার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। প্রশ্নগুলো ছিল ‘’কিভাবে’’ টাইপের। যেমন, রূহ কিভাবে দেহের মধ্যে প্রবেশ করে। এটা নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি না। শুধু বুঝাতে চাইছি, ইহুদীদের ‘’কিভাবে’’ এবং ‘’কেন’’র জবাব খোঁজায় কৌতূহল খুবই প্রাচীন যা অন্য কোন জাতিতে অত আগে দেখা গেছে বলে জানা যায় না।
মধ্যপ্রাচ্য থেকেই যে মানুষ ইউরোপে চলে গিয়েছিল, তা জেনেটিক ট্রেইল বিশ্লেষণ করেই বুঝা যায়। হাঙ্গেরিয়ানরা বিশ্বাস করে তারাই প্রথম ইউরোপে পা রাখা মানুষ, মধ্যপ্রাচ্য থেকে। এটা ওদের দিকে তাকালেও বিশ্বাস করতে হয়। অনেকের চেহারাতেই আরব ছাপ প্রকট। আমি নিজের চোখেই দেখেছি জেমস বন্ড স্রষ্টা ইয়ান ফ্লেমিং এর চেহারা অনেক আফগান পাঠানের সাথে মিলে যায় বা অনেক জার্মানের সাথেই আমাদের অঞ্চলের ফর্সা, টিকালো নাকের, লম্বাটে মুখের, চওড়া চোয়ালের ব্রাহ্মণের চেহারা মিলে যায়। আমার মনে হয়, মধ্যপ্রাচ্যই থেকে বহুকাল আগে ‘’কেন’’ এবং ‘’কিভাবে’’ভিত্তিক চিন্তাশীলতার চর্চা নিয়ে ইউরোপে ঢুকেছে মানুষ। আবার সেখান থেকেই আর্যরা ভারতে গিয়ে কিছুটা গভীরতর জ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটিয়েছে। প্রাচীন ভারতের জ্ঞানগুরু কণাদ, আর্যভট্ট, ভাস্করাচার্য এরা সবাই ছিল আর্যরক্তের, মধ্যপ্রাচ্যের খাড়া নাক, ফর্সা চামড়ার মানুষের সাথে মিল ছিল এদের অবয়বে। আর্যদের বাদ দিলে আমাদের প্রাচীন দ্রাবিড়ীয় জ্ঞানচর্চায় মৌলিক অবদান খুবই কম বা অগভীর। অথচ খেয়াল করে দেখুন, সেইসময় গ্রীক জ্ঞানগুরু পিথাগোরাস বা অ্যাপোলনিয়াসের উপপাদ্যগুলো। আমাদের স্কুলের উচ্চতর গণিতে ছিল এটা- ত্রিভূজের যেকোনো দুই বাহুর উপর অংকিত বর্গক্ষেত্রদ্বয়ের ক্ষেত্রফলের সমষ্টি, তৃতীয় বাহুর অর্ধেকের উপর বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল এবং ঐ বাহুর সমদ্বিখন্ডক মধ্যমার উপর অংকিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের সমষ্টির দ্বিগুণ। ভাবা যায়?? তেইশশো বছর আগে একটা মানুষ এত জটিল একটা জ্যামিতি নিয়ে ভেবে তার সামধানও বের করেছেন। গাছ থেকে আপেল পড়তে দেখে নিউটনের মাথায় প্রশ্ন এল, কিভাবে এবং কেন পড়ল সেই আপেল? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মহাকর্ষ, অভিকর্ষ আরও কত কি বেরিয়ে এল!
আমার মতে, ইদানিং মানুষের মনে ন্যাচারালি প্রশ্ন আসাটা এবং নিজ থেকে সেটার উত্তর নিয়ে ভাবা কিন্তু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অজস্র বই আর সহজলভ্য তথ্যের ভিড়ে। কিন্তু তাই বলে, বই পড়া বাদ দেব? না, সেটা নয়। এ ক্ষেত্রে একটা বুদ্ধি খাটান যেতে পারে। কোন কিছু পড়ার আগেই সেটা নিয়ে একটু ভাবা যেতে পারে। ধরুন, আপনি আজকে গাছের পাতা বা মানুষের পরিপাকতন্ত্র নিয়ে পড়বেন। পড়ার আগে নিজে একটু ভাবুন। সবুজ পাতাটা গাছের সাথে লেগে আছে কেন, কি হতে পারে এটার কাজ? কিভাবে এটা প্রতি বছর ঝরে যায়, কেন? আপনি একটা জিনিস খেলেন, কি কারণে পরের দিন রেচনের পর সেটার চেহারা এতটা পরিবর্তিত হয়ে গেল? কেন সেটার আকার কমে গেল? শরীর কি সেটা থেকে কিছু একটা নিয়ে নিয়েছে? সেজন্য সেটার পরিমাণ কম? কিভাবে নিল, কেন নিল? এসব নিয়ে একটু ভাবা যেতে পারে। ক্লাসের শুরুতেই শিক্ষকের উচিৎ যা পড়াবেন তা নিয়ে প্রশ্ন উসকে দেওয়া, ছাত্রদের ভাবানো, এবং সেই ভাবনা পর্যবেক্ষণ করা। পূর্বজ্ঞান ছাড়া কোন কিছু নিয়ে ভাবতে বসলে সম্পূর্ণ নতুন নলেজ ক্রিয়েশনও সম্ভব। এটাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার কারণ নেই। কোন কিছু নিয়ে নতুন ভাবে ভাবতে শেখার ক্ষমতা অর্জনের একটা পথই এটা। প্রথমেই কোন বিষয়ে অনেক কিছু জেনে নিলে নতুন জ্ঞান ক্রিয়েশন করা আমার মতে কঠিন হয়ে যায়, চিন্তাভাবনায় বায়াস চলে আসে, নিজের বুদ্ধি ব্যবহারের ক্ষমতা কমে আসে। প্রথমে নিজে বিষয়টা নিয়ে দেখতে হবে, ভাবতে হবে, নিজের মত করে বুঝার চেষ্টা করতে হবে, তারপর অন্যরা কি ভেবেছে তা নিয়ে সেটা নিয়ে পড়া শুরু করতে হবে, যাচাই করতে হবে নিজের চিন্তার যৌক্তিকতা বা সত্যতা। জ্ঞানচর্চা এগিয়ে গেছে অনেক। নতুন নলেজ ক্রিয়েশন সোজা নয়, প্রায়ই দেখা যাবে আগেই এটা কেউ ভেবে ফেলেছে। কিন্তু এটার মাধ্যমে বুদ্ধিতে শান দেওয়া শুরু হয়। প্রতিটা মানুষ স্বকীয় ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। এই স্বকীয়তাটুকু বের করে আনা শুরুর একটা দারুন কৌশল হতে পারে এটা।
একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ধরেন, বাচ্চাকে বিয়োগ শেখাচ্ছেন। ১১ থেকে ৭ বিয়োগ করা। ১১ এর এককের ঘরের ১ থেকে ৭ বাদ দেবার সময় একটা ১ কেন ধার নেওয়া হচ্ছে, কোথা থেকে নেওয়া হচ্ছে, সেইটা নিয়ে ভাবতে বলুন বাচ্চাকে। সে সম্ভবতঃ পারবে না। কিন্তু তাকে ভাবান, ভাবতে শেখান। এক দিন ধরে ভাবুক। পরের দিন জবাবটি দিয়ে দিন। একটি নতুন বই দিচ্ছেন তাকে। হোক সেটা উপন্যাস, ছড়া বা রূপকথা। সেটার প্রচ্ছদটি দেখিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করুন, কি মনে হয় তার ঐ ছবিটা দেখে? ভেতরে কি থাকতে পারে সেইটা বোঝা যায়? বইটির নাম থেকে ভেতরের কন্টেন্ট সম্পর্কে কিছু বুঝতে পারে? ক্লাসের শুরুতেই যে চ্যাপ্টারটি পড়ানো হবে সেইটা সম্পর্কে কি ধারণা বা কল্পনা তা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করুন ছাত্রদের। দুই/তিন মিনিট ভাবতে দিন। শুনুন কি ভাবল। আমি একদিন একটা ক্লাস নিচ্ছিলাম। শুরুতেই জিজ্ঞেস করলাম, ১০০০ বছর পর পৃথিবীর চেহারা কেমন হতে পারে? একজন বলল, ততদিনে অ্যালিয়েনরা দুনিয়া দখল করে ফেলবে। আশ্চর্য হলাম। ঐ মুহূর্তে ভেবেই দেখিনি সম্ভাবনাটা। খুব সম্ভাব্য না হলেও, চিন্তাটি মৌলিক মনে হল, যদিও সায়ান্স ফিকশনে এমন আইডিয়া আছে, তবুও সে যে ঐ মুহূর্তে এটা ভাবল, সেটা কিন্তু একটা আলাদা সক্ষমতারই বহিঃপ্রকাশ। সেদিন আরও কয়েকজন তার নিজস্ব নতুন আইডিয়া জানাল। এভাবে ব্রেইনস্টর্মিং এর মাধ্যমে কিছুদিন ভাবতে দিলে তারা নিজেই ভাবার অভ্যাসটি রপ্ত করে ফেলবে, রুপান্তরিত হবে চর্চায়। এই চর্চা ছড়িয়ে পড়লেই মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টি বা অরিজিন্যাল নলেজ ক্রিয়েশনের কালচার শুরু হয়ে যেতে পারে।
(লেখকের ফেইসবুক টাইম লাইন থেকে)

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!