হাওর ডেস্ক ::
নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান, দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে ঠাঁই না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির প্রথম বর্ধিত সভায় এ নির্দেশনা দেন ঢাকা বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা।
তারা বলেন, কেউ যদি কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে মোহে পড়ে বা ব্যক্তিগত খাতিরে পদ দেন, তা হলে জবাবদিহি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগের প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্ধিত সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা আমাদের সময়কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সূত্র জানায়, গত বুধবার বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সভা চলে। সভার পুরো সময় উত্থাপন করা হয় নানা অভিযোগ। বিভিন্ন সময়ে সঠিক কমিটি গঠন না হওয়া নিয়েও আলোচনা চলে। অভিযোগের সূত্র ধরে চলে তর্ক-বিতর্কও।
সূত্র জানায়, সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক মার্চে শুরু করে প্রথম তিন মাসে ইউনিট সম্মেলন শেষ করতে বলা হয়। একই সঙ্গে পরের ছয় মাসের প্রথম তিন মাসে ওয়ার্ড এবং বাকি তিন মাসে থানা সম্মেলনের কাজ শেষ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে সম্মেলনের কাজ শেষ করতে না পারলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে বলে নির্দেশনা দেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বর্ধিত সভার উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।
সভায় নগরের থানা-ওয়ার্ডের অন্তত ৫৯ জন নেতা কথা বলেন। তাদের প্রায় অধিকাংশই কমিটিকে বিতর্কমুক্ত দেখতে চান বলে মত প্রকাশ করেন। দলের দুঃসময়ে রাজপথে থাকা পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়নের দাবি জানান তারা। আলোচনার একপর্যায়ে শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম আতিকুর রহমান আতিক আগামীতে ‘চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসমুক্ত কমিটি চাই’ বলে বক্তব্য দেন। এ সময় অনেকেই শেইম শেইম বলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বলেন- ‘আগে নিজে ভালো হোন, তার পর উপদেশ দেন।’
৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর সারোয়ার আলম আলো তার বক্তব্যে ক্যাসিনোকা-ে অভিযুক্ত এনু-রুপমের প্রসঙ্গে তুলে বলেন, তারা কীভাবে আওয়ামী লীগের কমিটিতে জায়গা পায়? কারা তাদের জায়গা দিয়েছিল? আলোর ‘স্ববিরোধী’ বক্তব্যে অনেকের মুখে চাপা হাসি লক্ষ করা গেছে বলে জানায় সূত্র। সভায় নগরের প্রতিটি থানা থেকে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক যে কোনো একজন এবং থানার অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলো থেকে একজন বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান।
‘অভিযুক্তরা ইতোমধ্যে নেতাদের বাসায় গিয়ে হাজিরা দিচ্ছেন। পদ বাগিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন’- থানা পর্যায়ের একজন নেতার এমন বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই তাকে থামিয়ে দেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। তারা জানান, আগামীতে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীকে মূল্যায়ন করা হবে। চাঁদাবাজ, অস্ত্রবাজ, সন্ত্রাসীর স্থান আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে হবে না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সভায় বিশেষভাবে আলোচনায় আসে ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচন প্রসঙ্গ। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশ্ন করে বলেন, ‘ঢাকা-৫ আসনে ভোটার উপস্থিতি কেন ১০ শতাংশ হলো? আপনারা যেভাবে বলছেন তাতে করে প্রত্যেকেই বড় বড় নেতার পরিচয় দিচ্ছেন। বড় বড় নেতা থাকার পরও ভোটার উপস্থিতি এত কম ছিল কেন? আমার জানামতে সেখানে তো আওয়ামী লীগের ভোটই ৩২ শতাংশের বেশি।’
মির্জা আজম বলেন, ইউনিট পর্যায় থেকে কমিটি গঠন শুরু করতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি মাসে থানা-ওয়ার্ডে কার্যনির্বাহী সংসদের সভা করতে হবে। চার মাস পর পর বর্ধিত সভা করতে হবে। বর্ধিত সভায় বিনা কারণে যেসব নেতা উপস্থিত হননি, তাদের কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ করতে হবে। সংগঠন করলে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। কাউন্সিলরদের শীর্ষ পদে রাখা যাবে না। যারা বিদ্রোহী হয়েছিল তাদের কোথাও রাখা হবে না।
সূত্র জানায়, সভায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি গঠন, ইউনিয়ন ভেঙে যেসব ওয়ার্ড করা হয়েছে, সেগুলোয় আহ্বায়ক কমিটি এবং তিন মাসের মধ্যে টিম গঠন করে ইউনিট কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পর ওয়ার্ড ও থানার কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার কথা জানানো হয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী আমাদের সময়কে বলেন, কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজকে নগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে কোনোভাবেই জায়গা দেওয়া হবে না।