1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

রবির রশ্মির মতো তেজোদীপ্ত অ্যাড. বজলুল মজিদ খসরু।। সুশান্ত দাস

  • আপডেট টাইম :: শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১, ৬.২৬ পিএম
  • ২৩৭ বার পড়া হয়েছে

পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কি:মি। পৃথিবী তার নিজ অক্ষে সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। এতো লক্ষ লক্ষ মাইল দূর থেকেও সামান্য তাপ বিকিরণের সময়ে তেজেদীপ্ততার জন্য তাঁর দিকে থাকানো যায় না। সাহস দেখানোটাও এক বড় চ্যালেংজিং ব্যাপারমাত্র। আমি যে জায়গা থেকে এখন লিখছি এটা হলো পশ্চিমা বিশ্বের প্রাচীন একটি শহর। শীত গ্রীষ্মের ব্যবধানে ১ ঘন্টার তারতম্য হলেও মূল সময়ের পার্থক্য ৬/৭ ঘন্টা বাংলাদেশের সাথে। এখানে মধ্যরাত ১টা হলে পূর্ববিশ্বের বাংলায় হচ্ছে সকাল ৬টা। সূর্য উঠবে। আলোকিত হবে। কিচির মিচির পাখির কলকীকলীতে প্রকৃতিও জেগে উঠবে। সূর্য ছড়াবে তাঁর আলো। তেজোদীপ্তময় হয়ে উঠবে সারা বাংলাদেশ। আর এই বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বকোনে হচ্ছে সুনামগঞ্জ। এই সুনামগঞ্জের সূর্য সন্তান রবি রশ্মির মতো তেজোদীপ্ত হচ্ছে অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ খসরু। যাঁর জন্ম ১৯৫২সালের ২রা এপ্রিল হতে ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারীর বুধবার মৃত্যুদিন পর্যন্ত চোখ রাখলে নখে-দর্পনে উঠে আসে রবির রশ্মি মতো তেজোদীপ্ত তাঁর কর্মযজ্ঞ।
১৯৭১সালে তরুন বয়সে দেশ মুক্তির সৈনিক হিসাবে ঝাপিয়ে পড়া থেকে ১৯৬৯ সাল হতে কলম সৈনিক(যুগভেরী),নীল পতাকার ছায়া তলে ছাত্র রাজনীতি,বিজ্ঞান মাধ্যমে পড়াশুনা থেকে আইন বিষয়ে পড়াশুনা। পড়াশুনা শেষে আইন পেশাকে বেঁচে নিলেও কাগজ-কলমের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেননি আমৃত্যু পর্যন্ত। আর তাইতো নবীন প্রজন্ম,মধ্য প্রজন্ম হতে প্রবীন প্রজন্ম পর্যন্ত,দীর্ঘ কাগজ-কলমের সম্পর্কে বার বার স্মৃতি তর্পণ করছেন। বহুল প্রচারিত দৈনিক সুনামকন্ঠের সম্পাদক বিজন সেন রায়,জেষ্ঠ লেখক কুমার সৌরভ সহ আরো অনেকেই শ্রদ্ধার সহিত স্মৃতিচারন করছেন বারবার। দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর হতে স্থানীয় সবকটি পত্রিকা সহ খ্যায়তমান জাতীয় দৈনিকেও তাঁকে নিয়ে হচ্ছে বিভিন্ন ফিচার।

জীবনের কিছুটা সময় দেশের বাহিরে কাটালেও আশির দশকে প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক হলে সুনামগঞ্জ মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হওয়ার প্রথম দিন থেকেই তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক সুনাম। ১৯৮৯ সালে ‘৭১-এর সুনামগঞ্জ’ সম্পাদনা করেন। গঠন থেকে দায়িত্ব বহন করেছেন মুক্তিযুদ্ধ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ট্রাস্ট, ক্যাপ্টেট হেলাল শিক্ষা ট্রাস্টের সম্পাদক হিসাবে।

শুধু কি তাই ?? নিশ্চয় নয়! মা-মাটি ও হাওরবাসির টানে ২০১৭ সালে গড়ে উঠা ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও’ আন্দোলনে ছিলেন অগ্রদূত। বানভাসা গণমানুষের গণকন্ঠে তুলেছিলেন লুটতরাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। রাজনীতির বাহিরে থেকেও প্রতিষ্ঠিত করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন।

আরো দেখা যায় করোনা মহামারি বিশ্ব যখন শেখায় মানুষ হতে দূরে থাকতে তখনো এই তেজোদীপ্ত মানুষটি সুনামগঞ্জের নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়ে গড়েতুলেছেন “অসহায় পাশে আমরা সুনামগঞ্জ”। দাঁড়িয়েছেন উজ্জ্বল ভাই (প্রথম আলো) উল্লেখিত সেই যাত্রা অভিনয়ের ‘বিবেকের’ ভূমিকায়। লিখতে বিব্রত লাগলেও সেদিন আমাকে পরম স্নেহে, গ্রুপে তুলে ধরেছিলেন দু-একটি লাইনের মাধ্যমে – “আদর্শবাদি পিতার সন্তান আমাদের সুশান্ত। শ্রীকান্ত দাকে নিয়ে একটা স্মারকগ্রন্থ করছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক তাজুল মোহাম্মদ। সুশান্তের সাথে আমার পরিচয় বেশি দিনের নয়। বিগত জানুয়ারিতে আমেরিকা থাকার সময় থেকে। ভাল কাজে তার আগ্রহ দেখে আমি অভিভূত। আজকে অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে শ্রীকান্ত দাকে আরো সম্মানিত করল। ধন্যবাদ সুশান্ত” – (অ্যাড:বজলুল মজিদ খসরু,আমরা অসহায়ের পাশে সুনামগঞ্জ,১৭এপ্রিল২০২০)। আজ সব স্মৃতি। বারবার বলতে ইচ্ছে করছে আংকেল,”শেষ প্রয়োজনটাও শেষ করতে দিলেন না”।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারী ক্লান্ত পৃথিবীএকটু বিশ্রামের জন্য ঘুমন্ত ভাবাবেগে সূর্যকে আড়ালে ধাবমান;ঠিক ঐ সুযোগে আমাদের সূর্যও সন্তানও আমাদের হতে, হয়ে গেলো চিরতরে বিদায়।

এই সূর্য সন্তানের চিরতরে বিদায়ের খবর যখন পূবের আকাশ ধেয়ে পশ্চিমা আকাশে পৌঁছায় তখন দেখি নদী সুরমা,সাগর বঙ্গোপ’র পাড়ি জমিয়ে মহাসাগর আটলান্টিকের উত্তাল ঢেউকেও গ্রাহ্য না করে শোকের ঢেউয়ে হৃদয় কোনায় কম্পন হচ্ছে। চোখের কোনায় চলে আসে ফোটা ফোটা জল। ইন্টারনেটের পাতা খুলতেই দেখি সুনামগঞ্জের উপড় দিয়ে যাচ্ছে শোকের ঢেউ। সাংবাদিক শামস শামীমের পোস্ট পেয়েও অবিশ্বাসের জ্বালায় ফোন না দিয়ে বিভিন্ন জনদের ইনবক্সে দিতে থাকি ম্যাসেজ। এরই মাঝে প্রতিউত্তরে দিয়ে থাকেন শ্রদ্ধাষ্পদ দাদা লেখক কল্লোল তালুকদার। শরীর কম্পনে হাতের চায়ের পেয়ালা দেই রেখে। কি যেন এক অস্থিরতা। বাহিরে করোনার থাবা তবুও পেন্ট পড়ে এই অস্থিরতাকে কাটিয়ে উঠতে যাই হাঁটতে । হঠাৎ শুনতে পাই মেসেঞ্জারে কলিং টোন। দেখি কানাডা হতে তাজুল কাকু(মুক্তিযুদ্ধ গবেষক তাজুল মোহাম্মদ)। কানাডার সাত-সকালে ভারিকন্ঠে বলছেন তোমার ফেইসবুকে “খসরু ভাই চলে যাওয়া সম্পর্কে খবর দেখলাম। আমি সুনামগঞ্জে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছিনা। উনি তো এই মুহুর্তে এখন এই ভাবে যাওয়ার কথা না, আমার সাথেতো গত কিছুদিন যাবৎ কন্টিনিউয়াসলি যোগাযোগ হচ্ছে”। আমিও বললাম হ্যা কাকু,আমিও তেমন কিছু জানি না যদিও ইদানিং কিছুদিন যাবৎ আমি যোগাযোগ করতে পারিনি।

রবির মতো তেজোদীপ্ত মানুষটির সাথে পরিচিতির বাঁধন বেশী দিনের নয়। তবে গাঢ়ত্বটা ছিল অনেক। সাংবাদিক সালেহ চৌধুরীকে হারানোর পর ভাটির জনপদ শাল্লার ৭১-র প্রেক্ষাপট জানতে দিতে হয়েছে সময় অসময়ে কল। অপত্যস্নেহে ছিল ভরপুরে কন্ঠ।

তখন ছিলেন ছেলে দীপের বাসায় আমেরিকায় ভ্রমনরত। বাংলাদেশ হতে আমেরিকার সময় প্রায় ১২ ঘন্টার ব্যবধান হলেও ব্রিটেন থেকে এর ব্যবধান প্রায় অর্ধেক। দেশের তুলনায় ছিলেন অনেকটাই ফ্রি। সেই সুবাধে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলার হয়েছে সুযোগ।

অনেক জায়গায় বেড়ানোর বা ঘুরতে সময় হলে বলতেন তুমি ফ্রি থাকলে পরে আবার কল দিও,আমি ফ্রি হয়ে যাব। দেখতাম নাতি-নাতন,পরিবার পরিজন নিয়ে হাস্যজ্জ্বোল ছবি পোস্ট করতেন ফেইসবুকে।

এর আগে সুনাগঞ্জের আরেক নাট্য নির্মাতা গুরুজেষ্ঠ তুহিন ভাই পাঠান উনার ‘রক্তাক্ত-৭১’এর একটি পাতা। যেখানে শরনার্থী শিবিরের বিশেষ প্রেক্ষাপট নিয়ে কমরেড শ্রীকান্ত দাশের বর্ননা। আমি তুহিন ভাইয়ের পাঠানো নমুনা দেখে কিছুটা আচমকা হলাম। আচমকা বললাম এই কারনে কমরেড শ্রীকান্ত দাশ হতে পারিবারিক ভাবে এই ঘটনা জানা থাকলেও বাহিরে যে এই ঘটনা লিপিবদ্ধ আছে তখনো জানা ছিল না। এ বিষয়ে খসরু আংকেলকে জিজ্ঞেস করতেই উনি গরগর করে স্মৃতিচারন স্বরূপ বলতে লাগলেন আমি তোমাদের বাড়িতে গিয়েছি। এখানে বিশদ ভাবে কিছু লেখা হয়নি। তবে পরবর্তীতে বিশদ ভাবে লিখব। কথা হয়েছিল শরনার্থী শিবিরের কাহিনী নিয়ে আংশিক লিখলেও এই লেখাকে ধরে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক তাজুল মোহাম্মদ প্রণীত “শিল্পী সংগ্রামী কমরেড শ্রীকান্ত দাশ” বইয়ে লিখবেন বিশদ ভাবে।

আরো বললেন মুক্তিযুদ্ধ মূল ১১টি সেক্টরে বিভক্ত হলেও এর মাঝে বিভিন্ন সাব-সেক্টর সহ নানা গ্রুপ-উপগ্রুপ দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যেমন কাজ করেছে বিভিন্ন অঞ্চলে; তেমনি স্বাধীনতা বিরুধী রাজাকাররাও কাজ করেছে বিভিন্ন দলে-উপদলে। বললেন আমার ঠিক এই মুহুর্তে মনে নেই তবে বইয়ে খোঁজলে দেখবায় তোমাদের শাল্লা থানায় একমাত্র হবিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছাড়া আটগাওঁ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান খালেক(দৌলতপুর), বাহারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শরাফত(সুলতানপুর), শাল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কালাই মিয়া চৌধুরী(মনুয়া)সহ আরো বেশ কয়েকজন শান্তি কমিটির সদস্য ছিল। যারা রাজাকারদের চেয়ে ভয়ানক। আর রাজাকাররা ছিল তো অনেক। ছদ্মবেশী শিয়ানা রাজাকাররা লুটপাট,অগ্নিসংযোগ পরোক্ষ ভাবে করিয়ে থাকলেও কোন কোন রাজাকারা গৃহপালিত গরু,ঘরের ধানের গোলা থেকে ধান,বহুমূল্যবান কাঁসারি আসবাব পত্র,নগদ অর্থ লুট করেছে। দেখাযায় প্রত্যন্ত অঞ্চল যুদ্ধবিদ্ধস্ত শাল্লাতে প্রায় ৩০টিরও অধিক গ্রাম একেবারে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিয়েছিল পাকিপ্রেমী স্থানীয়ঐ তালিকাভুক্ত রাজাকারা।

ভাটি অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিংবদন্তী সালেহ চৌধুরী সহ অসংখ্য লেখক অসংখ্য বই লিখেছেন। এর মাঝে অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ খসরু রচিত “রক্তাক্ত-৭১” বইটি এক ও ভিন্ন। অনেকে আখ্যা দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার লেখা ‘রক্তাক্ত ৭১ সুনামগঞ্জ’ বইকে জেলায় মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের একটি প্রামাণ্য দলিল। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চর্চা করছেন, বিশেষ করে তরুণ গবেষক বা গণমাধ্যম কর্মী, তাঁদের কাছে ইতিহাসের বড় উপাদান সেগুলো।

তিনি সেই মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষনাধর্মী লেখক যিনি যুদ্ধের সময়ে এক হাতে যেমন যুদ্ধ করেছিলেন আরেক হাতে তেমনি কলমও ধরেছিলেন। স্বচোখে দেখে যেমন ভাবে শ্রত্রুর মোকাবিলা করেছেন তেমন ভাবে শত্রুদের চিহ্নিত করে বিভিন্ন মাধ্যম হতে লিপিবদ্ধও করেছেন। ফলে ঢালাও ভাবে মুক্তিযুদ্ধের উপর যে একদিক-মূলক বাজারি লেখা তার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে সমান তালে তুলে ধরেছেন উভয়-দিকমূলক লেখা। যা সাহসিকতা,নৈতিকতার এক বিরল দৃষ্টান্ত। কথার ফাঁকে বলতেন অনুকূলের মাঝেও প্রতিকূলে বাস।

তিনি মুক্তিযুদ্ধ থেকে স্বাধীনতার পর জাতির পুনর্গঠন হতে শিক্ষা,সংস্কৃতি,সাংবাদিকতা,আইন সেবা দিয়ে তাঁর বহুমূখী প্রতিভায় যেমন সম্পৃক্ততা দেখিয়েছেন অনুরূপ ভাবে প্রগতিশীল সমাজ ব্যবস্থায় তাঁর তেজোদীপ্ততার রশ্মি ভঙ্গুর-লুটতরাজ সমাজকে ভেঙ্গে নতুন সাহসীকতার বাতিও জ্বালিয়ে গিয়েছেন। তাঁর তেজোদীপ্তময় জীবন কর্ম,মুক্তিযুগ্ধ,মুক্তিযুদ্ধের গবেষনা কর্ম নব প্রজন্ম খোঁজবে বারবার। দৈহিক গঠন অদৃশ্য হলেও তাঁর তেজোদীপ্ততায় গড়ে উঠবে নতুন প্রজন্ম।

উল্লেখ্য সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর মহল্লায় পিতা প্রয়াত মফিজুর রহমান চৌধুরী ও মাতা প্রয়াত মজিদা খাতুন চৌধুরীর ৮ম সন্তানের মাঝে উনি ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৮৬ সালে বিয়ে করেন মুনমুন চৌধুরীকে। তিনি স্ত্রী,এক ছেলে,এক মেয়ে,ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
#
লেখক : সুশান্ত দাস, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী। ইমেইল- sushantadas62@yahoo.co.uk
লন্ডন,যুক্তরাজ্য ।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!