হাওর ডেস্ক ::
গ্রামীণ অর্থনীতি গতশীল করার লক্ষ্যে সংস্কারের মাধ্যমে সব সড়ক টেকসই ও মজবুত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর আওতায় উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামের ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৩৫৩ কিলোমিটার পল্লী সড়কের প্রশস্ততা বাড়ানো হবে। এ লক্ষ্যে ১৭ বছর আগে জারি করা পল্লী অঞ্চলে সড়ক নির্মাণবিষয়ক সরকারি গেজেট বাতিল করে, নতুন গেজেট প্রণয়ণ করা হচ্ছে, যার কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। নতুন প্রস্তাবে গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এতে এলজিইডি ২৪ ফুট পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রামীণ অর্থনীতির অগ্রগতির কারণে পল্লী সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে গ্রামীণ সড়ক যান চলাচলের সক্ষমতা হারাচ্ছে। এ জন্য নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী যান চলাচলের ওপর ভিত্তি করে এলজিইডির আওতাধীন সড়কের সর্বনিম্ন পুরুত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৯০ মিলিমিটার। বর্তমানে সর্বনিম্ন ৫৮২ মিলিমিটার পুরুত্বে এলজিইডি সড়ক নির্মাণ করছে। রাস্তা টেকসই করতে নির্মাণ উপকরণও উন্নত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ৬০-৭০ গ্রেড বিটুমিন ব্যবহারের ওপর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশের এলজিইডি সড়ককে প্রশস্ত ও টেকসই করা না হলে অর্থনৈতিক সুফল পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। বর্তমান যান চলাচল, ক্রমবর্ধমান গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত ট্রাফিক এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনায় এসব সড়ক যথাযথ জ্যামিটিক মানে উন্নীত করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি এবং কৃষিনির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প আধুনিকায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন দিশার সূচনা হতে পারে। বিশেষ করে হস্ত ও বয়ন শিল্প, খাদি ও গ্রামোদ্যোগে উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের ফলে মৎস্য, ফুল, পাট, পান চাষ, পশুপালন, দুগ্ধ প্রকল্প, ইক্ষু চাষ এবং চা ও কাগজ শিল্প আমাদের অর্থনীতিকে নতুন দিশা দেখাতে পারে। এ ছাড়া পাহাড়িদের জুম চাষও অর্থনীতিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। এ কারণে গ্রামীণ সড়কের মানোন্নয়নের বিকল্প নেই ।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, গ্রামীণ সড়কে আগে যেখানে কোনো গাড়ি চলাচল করতো না, সেখানে এখন ভারী পণ্যবাহী ট্রাক, ট্রাক্টর চলাচল করছে। এ কারণে সড়ক দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। আবার রাস্তার প্রশস্ততা কম হওয়ায় যান চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গ্রামীণ সড়কের ডিজাইনে আনা হচ্ছে পরিবর্তন। পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে শিগগিরই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে। সরকার ইতোমধ্যে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। এ পরিকল্পনায় দেশব্যাপী ৮৭২৩০টি গ্রামকে উন্নত ও টেকসই সড়ক যোগাযোগে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা আছে।
জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০৪ সালের গেজেট অনুযায়ী ১২ থেকে ১৮ ফুট প্রশস্ততায় উপজেলা সড়ক নির্মাণ করা হতো। নতুন প্রস্তাবে উপজেলা সড়ক সর্বোচ্চ ২৪ ফুট প্রশস্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ইউনিয়ন সড়ক ১০ ফুট বা ১২ ফুট প্রশস্ততায় নির্মাণ করা হতো, নতুন প্রস্তাবে এর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। তবে এসব সড়ক ভারী যান চলাচলের সুবিধার্থে টেকসই সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে ৩৬৮৭৬ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক এবং ৪১৭৮১ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক আছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্তকর্তারা জানান, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রতিবছর ৩০০০ কিলোমিটার ইউনিয়ন ও উপজেলা সড়ক নতুন ডিজাইনে হালনাগাদ করে নির্মাণ করা পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এসব সড়কের বাঁক সোজাকরণ, ব্রিজ অ্যাপ্রোচ উন্নয়ন, বন্যা লেভেল বিবেচনায় সড়ক বাঁধ উঁচুকরণ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। বর্তমান বাজারমূল্য বিবেচনায় এতে প্রতিবছর প্রয়োজন হবে গড়ে ৪০০ কোটি টাকা।
সরকারের আগের গেজেটে গ্রাম সড়ক কত ফুট হবে তা নির্ধারিত না থাকলেও নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী এখন থেকে গ্রাম সড়কের প্রশস্ততা হবে ১০ ফুট। এতে ব্যয় বাড়বে মাত্র ৫ শতাংশ। বর্তমানে সারা দেশে গ্রাম সড়ক আছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৯৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২ লাখ ১০ হাজার ১১২ কিলোমিটারই কাঁচা সড়ক। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রতি বছর ৪ হাজার কিলোমিটার গ্রাম সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া পাহাড়ি এলাকায় সড়ক এখন থেকে ১২ থেকে ১৬ ফুট প্রশস্ততায় নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে শিল্প এলাকায় ভারী যান চলাচলকারী সড়ক ২০ থেকে ২৪ ফুট করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মহসিন আমাদের সময়কে জানান, গ্রামীণ মানুষরা যেভাবেই হোক নিজেদের কর্ম নিজেরাই জোগাড় করছে। কেউ কেউ ছোট শিল্পকারখানা গড়ে তুলেছে। আবার কেউ কৃষিতে জোর দিয়েছেন। এসব পণ্য শহরে আনার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া পথ নেই। গ্রামীণ অর্থনীতি আগের তুলনায় বিস্তার লাভ করছে। এ অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে যা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। শিগ্্গির জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় এগুলো উত্থাপন করা হবে। তবে গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে অবশ্যই কৃষি জমির দিকে খেয়াল রাখা হবে। এমনিতেই দেশে কৃষি জমি কম, তাই যাতে কৃষি জমি নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল থাকবে।