বিশেষ প্রতিনিধি::
সদ্যপ্রয়াত সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, লেখক-গবেষক ও আইনজীবী বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু স্মরণে শোকসভায় বক্তারা বলেছেন, বাঙালির শ্রেষ্ট অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও যুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনের মাধ্যমে অমর হয়ে আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু। তাই যতদিন বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ থাকবে ততদিন তিনি বেচে থাকবেন। সহজেই তার স্মৃতি মুছে যাবার নয়। কর্মের মাধ্যমেই তিনি বেচে থাকবেন।
রবিবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত নাগরিক শোকসভায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সদ্যপ্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরুকে স্মরণ করেন নাগরিকবৃন্দ। তারা তার প্রোজ্জ্বল স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার আহ্বান জানান। শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন পৌর মেয়র ও নাগিরক শোকসভা কমিটির আহ্বায়ক নাদের বখত।
শোকসভায় বক্তারা বলেন, বজলুল মজিদ চৌধুরী একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা অন্তপ্রাণ এই মানুষটি মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কল্যাণে জীবনভর কাজ করে গেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সুনামগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি তরুণ প্রজন্মের মাঝে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক ছিলেন। তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন। বক্তারা আরও বলেন, খসরুর বিদায় সুনামগঞ্জ শহরের জন্য একটি নক্ষত্রের পতন। তিনি ছিলেন সাহসী, মানবিক ও প্রতিবাদী মানুষ। সুনামগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে তাঁর লেখা ‘ রক্তাক্ত ৭১ সুনামগঞ্জ ‘ গ্রন্থ একটি সাহসী প্রয়াস। তিনি হাওরের কৃষকদের অধিকার আদায়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁরা ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা মিলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাওয়া ভাতার টাকা না নিয়ে ‘গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ’ নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্টা করে সেই টাকা জনকল্যাণে ব্যয় করছেন। অসংখ্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তাঁর শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। এসব কাজের মাধ্যমেই তিনি বেচে থাকবেন।
শোকসভার শুরুতে প্রয়াত বজলুল মজিদ চৌধুরীর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একমিনিট নীরবতা পালনের পর শুরু হয় আলোচনা পর্ব।
শোকসভায় বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ -৫ আসনের সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ -৪ আসনের সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নুরুল হুদা মুকুট, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ইমন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক, প্রবীণ নারীনেত্রী শীলা রায়, সুনামগঞ্জের প্রবীণ আইনজীবী ও লেখক আবু আলী সাজ্জাদ হোসাইন, হুসেন তওফিক চৌধুরী ও হুমায়ূন মন্জুর চৌধুরী, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে, বর্তমান অধ্যক্ষ নীলিমা চন্দ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম, ব্যাংক কর্মকর্তা নৃপেশ তালুকদার, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি মো. মাসুক আলম, আইনজীবী স্বপন কুমার দাস রায়, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরি ভট্টাচার্য, প্রয়াত বজলুল মজিদ চৌধুরীর মেয়ে সারাফ ফারহিন চৌধুরী। শোকসভা সঞ্চালনা করেন জেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।