আমার জন্মের পর থেকে বিশ বছর বয়স পর্যন্ত সময় সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার মির্জাপুর ও টাইলা গ্রামে কেটেছে। টাইলা গ্রামটি সুনামগঞ্জ সদরে হলেও সেটা ছিল দিরাই উপজেলার বর্ডার।সাড়ে সাত বছর বয়স থেকে গ্রামীণ জীবনে কাটানো অবশিষ্ট দিনগুলো সেখানেই ছিলাম। সেই সুবাদে দিরাই শাল্লার মানুষের সাথেই আমাদের পরিচয় ঘনিষ্টতা।বড় সরল ছিল সেখানকার মানুষ।মির্জাপুর গ্রামে আমাদের বাড়ির দক্ষিণে এবং পশ্চিমে যারা প্রতিবেশী ছিলেন তারা মুসলমান। আমাদের সেই প্রতিবেশীদের বাড়িতে পারষ্পরিক অবাধ যাতায়াত ছিল।প্রতিবেশী মুসলমান ছাড়াও গ্রামের অন্যপাড়ার অনেক মুসলমান বাড়ির সাথেও আমাদের হৃদ্যতা ছিল। অনেকের বাড়িতে কারনে অকারণে অনাহূত বা নিমন্ত্রণে যাওয়া হতো।জৈষ্ঠ মাস এলেই টাইলা গ্রামের একদম উত্তরে আমার বান্ধবী বুলবুলদের বাড়ি থেকে খবর আসতো গাছের আম পেকেছে,আমি যেন খেয়ে আসি। গ্রামের একদম দক্ষিণ অংশ থেকে তাদের বাড়ি আম খেতে গিয়ে আমাকে শুধু আম নয় পিঠা পুলি আর সরভরা একগ্লাস দুধও খেতে হতো।বুলবুলের মা,বড় আপা ও ভাবী দাঁড়িয়ে থেকে তদারকী করে আমাকে খাওয়াতেন । সবকিছু না খেলে নিস্তার ছিল না।সেই সময়ে আমাদের কখনো মনে হয়নি যে হিন্দু হওয়ার কারনে আমরা এদেশে সংখ্যালঘু।হিন্দু হওয়ার কারনে মনে হয়নি যে আমরা বিপন্ন।অন্য এলাকার খবর তো জানতাম না।কিন্তু সেই সময়ে মুসলমানের অত্যাচারে দিরাই শাল্লার হিন্দুরা দেশত্যাগ করছে এমন খবর আমাদের কানে আসেনি।কেউ কেউ গিয়েছে শুনতাম তবে তা নিজেদের পরিবার পরিজন ও আত্মীয় স্বজন অনেক আগে থেকেই গিয়ে ভালো ছিল বলে,আত্মীয় পরিজনের কাছকাছি তারাও ভাল থাকার জন্য বা বলা যায় ভাগ্য অন্বেষণে কেউ কেউ চলে গেছে শুনতাম।
আজ সেই দিরাই শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামে হিন্দু বাড়ি ঘরে মুসলমান সম্প্রদায়ের হাজার হাজার বিভিন্ন বয়সী মানুষের মতো দেখতে যাদের মধ্যে অনেক কিশোর আছে যারা লাটিসোটা ও দা কুড়াল হাতে আক্রমণ করে নীরিহ মানুষকে মারধর করেছে।তাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লন্ডভন্ড করেছে এবং লুটপাট চালিয়েছে। প্রাণভয়ে ভীত অসহায় মানুষেরা জীবন বাঁচাতে হাওরে পলায়ন করেছে আর দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার পর ধ্বংসাবশেষের উপর বসে বিপন্ন নারীদের আহাজারির ছবি দেখে মনে হচ্ছে এ যেন শৈশবে মা দিদিমার মুখে শোনা একাত্তুর সালের মার্চ এপ্রিল মাসে পাঞ্জাবী হায়েনাদের আক্রমণের ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার মতো সেই পুরনো চিত্র দেখছি!কিন্তু এসব চিত্র দেখে আমি মোটেও অবাক হইনি কারন সুনামগঞ্জও দেশের আরো তেষট্টিটা জেলার মতোই একটা জেলা আর শাল্লা উপজেলাতো নাসিরনগর,সুন্দরগঞ্জ,রামু,বুড়িমারী ও মুরাদনগরের মতোই বাংলা দেশের একটি উপজেলা।কাজেই ঐসব এলাকায় যদি সাম্প্রদায়িক সহিংস হামলা বা তান্ডব হয় তো শাল্লায় না হওয়ার কি আছে ?
তো বলছিলাম যে কথা-আমার জীবনের বিশ বছর মানে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত গ্রামে বসবাসের সময় আমার গ্রামবাসী মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝে এমন ধারণা ছিলনা যে তারা দেশে সংখ্যাগরিষ্ট বলে এদেশে তারাই একনম্বর নাগরিক,তারাই দেশের মালিক আর আমরা হিন্দু জনগোষ্ঠী তাদের কৃপার পাত্র এরকম মনোভাব কারোর কথা বা আচরণে কখনো মনে হয়নি।১৯৮৮ সালের শেষের দিকে সুনামগঞ্জ শহরে বসবাস করার পরও কিছুদিন সহপাঠী,কলিগ,প্রতিবেশী কারোর আচরণেও তা টের পাইনি। কিন্তু আস্তে আস্তে টের পেতে শুরু করলাম-অফিসের মানুষের মাঝে কি যেন পরিবর্তন ঘটতে চলেছে।অফিসে তখন সংবাদ পত্রিকা রাখতো,তারপর আজকের কাগজ,ভোরের কাগজ,জনকন্ঠ এলো।দেখি অফিসের পিয়নও মাতব্বরী করে।না, এসব পত্রিকা চলবে না।ইনকিলাব রাখতে হবে।একদিন শুনি অফিসে আলোচনা চলছে-শহরের কোন পয়েন্টে যুবলীগের এক হিন্দু যুবক নেতা যে তার দলের একজন মুসলিম কর্মীকে সাংগঠনিক বিশৃংখলার জন্য খুব ধমক দিয়েছে,চড় থাপ্পর দেয়ার কথা বলেছে। তাতে তারা খুবই ক্ষুব্দ।আমাকে পাশে রেখেই তারা কয়েকজন আলোচনা করছে, দেখছেন নি?এখানে হিন্দুলোকের এত পাওয়ার!হিন্দুলোক নেতাগিরি করে?জানেন একটা দুইটা নয় অনেকগুলো হিন্দু যুবক নেতৃত্ব দেয় এখানে।একজন বলে,হতো আমাদের সিলেট!আরেকজন বলে হতো আমাদের কুমিল্লা, হতো আমাদের ফেনী!তাহলে নেতাদের নেতাগিরি বের করে দিতাম।!সেদিন আমার কানে ঠাসকি লেগেছিল।সেদিন অবাক হয়ে এদের মুখের দিকে তাকিয়েছিলাম। ওদের পাশের টেবিলে বসে দিনের আট ঘন্টা সময় কাটাই আর ওরা আমাদের জন্য মনের মাঝে এতখানি বিষ জমা রাখে!এর কিছুদিন পর বাবরি মসজিদে হামলার জের ধরে সুনামগঞ্জ শহরেও একচোট তান্ডব হয়ে গেল।একথা সত্যি সুনামগঞ্জ শহরকে তখনো এবং এখনো যারা লিড করেন তারা মুক্তমনা অসাম্প্রদায়িক এবং মানবিকবোধ সম্পন্ন মানুষ।তারা বিশ্বাস করেন নজরুলের সেই মহৎ কবিতার বানী-“হিন্দু না মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোন জন?তারে বলো ডুবিছে মানুষ,সন্তান মোর মার।” তাদের কারনে সেই ৯২ সালে সেদিনের সহিংসতা বেশী দূর গড়ায়নি।তাঁরা থামিয়ে দিয়েছিলেন।তবে ঐ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরাও সারা দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মতো এই অসাম্প্রদায়িক চেতনা আদর্শবোধ জীবনাচরণ নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্দ রাখেন।আশেপাশের সাধারণ মানুষের চেতনা কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে,দেশের সাধারণ মানুষের চিন্তার প্রবাহকে কারা কিভাবে বদলে দিচ্ছে তা সঠিকভাবে অনুধাবন করার প্রয়োজনীয়তা না রাষ্ট্র, না সমাজ কেউ অনুভব করেননি।যদিওবা করে থাকেন তার জন্য উপরভাসা কিছু মন্তব্য কিছু লেখালেখি পর্যায়ে থেমে থাকা ।হাল আমলে দেশের যে কোনো প্রান্তে গুরুতর কিছু ঘটলে মানববন্ধন প্রতিবাদ সমাবেশ করেই দায় সারা। কিন্তু গুরুতর ঘটনাগুলো ঘটানোর জন্য প্রদীপ জ্বালানোর আগে সলতে পাকানোর মতো তারা যে সারা বছর মানুষের মগজ ধোলাই এর লক্ষ্য নিয়ে সরবে নিরবে দৃশ্যমান বা অদৃশ্যভাবে নানারকম কাজ করে গেছে সেসব প্রতিরোধ করার জন্য কেউ মাঠে নামেনি।উল্টো দেশের অধিকাংশ বা বিরাট সাধারণ জনগোষ্ঠীর মনে অবচেতনেও যে অসাম্প্রদায়িক বোধ চলমান ছিল তা কি করে বদলে গেল তা আমরা দেখেও দেখিনি।অথচ পরিবর্তন চোখের সামনেই হচ্ছিল।খেলার স্টেডিয়াম স্কুল কলেজের মাঠে রাজাকার দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বয়ান শোনানোর জন্য কিসব বিশাল বিশাল আয়োজন হতো। তাতেও মন ভরতো না। গাড়ীতে লঞ্চে দোকানে সাঈদীর ওয়াজের ক্যাসেট বাজতো।(এমনকি যখন তার সাজা হয়ে গেল তখনো শনি তার ওয়াজ গাড়ীতে বাজে।)রাতারাতি পাড়ায় পাড়ায় গ্রামে গঞ্জে মুড়ি মুড়কির দোকানের মতো মাদ্রাসা এতিমখানা গজিয়ে উঠলো।ওখানে কি পড়ানো হয় কি করানো হয় কেউ খবর রাখে না।আগেকার দিনের মাদ্রাসাগুলো থেকে অনেক বিখ্যাত জ্ঞানী গুণী মানুষ তৈরি হয়েছেন শুনেছি।কিন্তু ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নিত্য নতুন গজিয়ে ওঠা মাদ্রাসাগুলো থেকে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা না দিয়ে, জ্ঞানের আলো না জ্বালিয়ে তাদের মনে মানবিকতা, উদারতা না শিখিয়ে হাতে লাঠি দা কুড়াল ধরিয়ে দিয়ে জঙ্গি সন্ত্রাসী তৈরি করা হয়। নিরীহ মানুষের মাঝে ত্রাস সঞ্চার করতে তাদের ব্যবহার করা হয়।
তারপর দেখা গেল ওয়াজ মাহফিলের সংখ্যা বেড়ে গেল। বাজরের গলির আজ এমাথায় তো কাল ওমাথায় ওয়াজ মাহফিল-যেসব ওয়াজ মাহফিলে ধর্মীয় আলোচনার পরিবর্তে, ঈশ্বরের গুনগান না করে কেবল রাজনৈতিক ভাষণ দেয়া হয়। কেবল নারী ও অমুসলিমদের অশ্লীলভাষায় গালিগালাজ করা হয়। সঙ্গীত চর্চা নাটক যাত্রাপালার বিরুদ্ধে মানুষকে ভুল বার্তা দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়।যার কারনে গ্রামে গ্রামে বন্ধ হয়ে গেল যাত্রাপালা,জারীগাণ,পুঁথিপাঠ,মালজোড়া ও বাউল গানের আসর, কিচ্ছার আসর।বন্ধ হয়ে গেল মেলা।বন্ধ হয়ে গেল খেলাধুলা।এতিমখানা মসজিদ মাদ্রাসাকে ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে থেকে কোটি কোটি টাকা এনে একাত্তুরের যোদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী রাতারাতি ধনপতি হয়ে গেল।তারা ব্যাংক তৈরি করলো,হাসপাতাল তৈরি করলো,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করলো আর এসবের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকাও তারা নিজেদের পকেটে ঢুকিয়ে নিল সাধারণ মানুষের মগজ ধোলাই করে তাদের ভেতরে সাম্প্রদায়িকতার বীজও তারা বপন করে দিল আর এভাবেই এই গোষ্ঠী আরো ক্ষমতাশালী হলো এবং তারা রাজনীতিতে একটা দাবার গুটি হয়ে গেলো।তাদেরকে নিয়ে রাজনৈতিক টানাটানি শুরু হয়ে গেলো।তাদেরকে খুশি করতে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা উঠে গেল,প্রাণহীন জড় পদার্থ রাষ্ট্রের গায়েও একটা ধর্মীয় পরিচয়ের তকমা লেগে গেল।সংবিধানের অনেক পরিবর্তন হলো আর একসময় তারা রাজনৈতিক নিয়ামক শক্তিও হয়ে উঠল এবং ক্ষমতারও ভাগীদার হয়ে গেলো।
একটা সময় এমন হলো যে ভোটের হিসাব নিকাশে কারা দেশের শত্রু, কারা জনগণের শত্রু, কারা ইতিহাসের কালো অধ্যায় রচনা করলো সেসব ভুলে যাই আমরা।আর ক্ষমতার মোহে অন্ধ আমরা বুঝতেও পারিনা ওরা কখন ক্ষমতার মসনদে ওঠার সিঁড়ি হয়ে যায়।আসলে ওরা নিজে নিজে হয়না আমরাই মনে করি।আমরাই তাদেরকে ভয় পেয়ে ক্ষমতাবান করে দেই।অপ্রত্যাশিত ভাবে ক্ষমতাবান হয়ে তারা এক এক সময় এক একটা বায়না ধরে লাই দেয়া শিশুর মতো।শিশুর প্রতি আমরা দূর্বল । আমাদের দূর্বলতা বোঝে তারাও একের পর এক বায়না করেই যাচ্ছে পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু কবি সাহিত্যিকের রচনা রাখা যাবে না।কী ভোজবাজির কারবার।রাতারাতি সিলেবাস পাল্টে যায়।তারা দাবী করে জাতীয় সঙ্গীত পাল্টে দাও। তারা দাবী করে ভাস্কর্য থাকবে না দেশে। লালন থাকবেনা, রবীন্দ্রনাথ থাকবে না এখন কী বলে বঙ্গবন্ধুও থাকবে না।এদের স্পর্ধিত উচ্চারণকে অপরাধ হিসেবে আমলে নেয়া হয় না।এদের কোনো বিচার হয়না। বরং সীমাহীন প্রশ্রয় পায় ওরা। ওদের বিরুদ্ধে কিছু বলাকে বরং অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রায়ই দেখা যায় রিকশার পেছনে লেখা- কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।গাছের মাঝে সাইনবোর্ড মারা -কাদিয়ানীদের এদেশ থেকে উৎখাত করতে হবে।তারা মাইকিং করে নব্বই পার্সেন্ট মুসলমানের দেশে এমন হবে না তেমন হবে না।কিন্তু সংবিধান বলেছে “প্রজাতন্ত্রের সকল নাগরিক ধর্মবর্ণ লিঙ্গ নির্বিশেষে রাষ্ট্রে সমান সুযোগ ও মর্যাদা লাভ করবে ” যদি রাষ্ট্রে একজন লোকও অন্য ধর্মের থাকে তাকে আর সবার মতো সমান মর্যাদা ও সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু এদের কথায় মনে হয় এই দশ পার্সেন্ট আমরা বিশাল অপরাধী।দশ পার্সেন্ট হয়েও এদেশে আমরা থেকে গেছি। আমরা চাকরি বাকরি করে খাচ্ছি এবং এদের এই মনোভাব যখন প্রবল হয়ে উঠেছে,এদের এইসব ডায়লগ যখন প্রবলভাবে জোরালো হয়ে উঠেছে তখনো রাষ্ট্রের কর্ণধারগণ সমাজের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মুক্তমনাগণ আমরা সরাসরি প্রতিবাদ করছি না,আওয়াজ তুলছি না।মাঠে নামছি না।ব্রিটিশ আমলে পাকিস্থান আমলে বিপ্লবতো শুধু রাজনীতিবিদরা করেনি বা রাজনীতি দিয়ে করেনি।ইতিহাস স্বাক্ষী দেয় বিপ্লব হয়েছে নাটক দিয়ে,বিপ্লব হয়েছে কবিতাও সঙ্গীত দিয়ে।বিপ্লব হয়েছে যাত্রাপালা দিয়ে।বিপ্লব হয়েছে চরকায় সুতা কেটে।রাজনীতিবিদ রাও বিপ্লবের জন্য,সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক, খেলাধুলাকে তাদের অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।কবি সাহিত্যিক সংস্কৃতিকর্মীরাও মানুষের অধিকারের লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন।আমাদের এখন শুধু আয়েশী জীবন চাই।পালিশ চকচকে জীবন চাই।আমরা গরমে ঘেমে নেয়েযাই।বৃষ্টিতে সর্দি হয়।আমাদের পুতুপুতু বিপ্লবী জীবন। কারন আমরা নিজেকে বিপ্লবী বলতেও ভালবাসি।বলে সুখ পাই এমনও আছি ।
আর আমরা দশ পার্সেন্ট বা সংখ্যালঘু বা মাইনোরিটি রাজা লক্ষণসেনের বংশধর, রাতের অন্ধকারে সতেরো জন অশ্বারোহীর ভয়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া লক্ষণসেনের জ্বীন নিয়ে সেই সাতচল্লিশ থেকে পালাতে পালাতে এই দশ পার্সেন্টে ঠেকেছি।বুক চিতিয়ে লড়তে জানি না।তাদের মাঝে সুবিধাবাদী ধনাঢ্যগোষ্ঠী আছি যারা নিজেদের ধনমান টিকিয়ে রাখার স্বার্থে শব্দও করি না।
রাষ্ট্র, শুভবুদ্ধির সমাজ ও দশ পার্সেন্ট আমাদের এই সাত সতেরো দোষে তারা এভাবে বেড়ে গেছে।সাধারণ মানুষের মাঝে অসাম্প্রদায়িক যে বোধ ছিল তা ঘুমিয়ে পড়েছে।ওয়াজের আফিম খেয়ে,তালিমের আফিম খেয়ে,মানুষের সীমাহীন লোভ-লালসা,ভোগবাদী জীবন যাপন,আরো চাই-আরো খাই মনোভাব অন্যকে উৎখাত করে তার সম্পদ দখল করার দুষ্ট বুদ্ধি মানুষের শুভবুদ্ধিকে নাশ করেছে।
এর থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষের মাঝে সহজ সরল চিন্তা ও শুভবুদ্ধিকে জাগাতে হলে একটা প্রবল ঝাঁকির দরকার।একেবারে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে,চর এলাকা থেকে দূর্গম পাহাড়ী এলাকা থেকে,হাওর থেকে রাজধানী পর্যন্ত মানুষের মনের ভেতর যে ধর্মান্ধতার, সাম্প্রদায়িকতার,কুপমন্ডুকতার, লোভ লালসার,দূর্বৃত্তপনার আবর্জনা জমে আছে সেসব আবর্জনা একটা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সুনামি বা আইলা নামের ঘূর্ণিঝড়ে ভাসিয়ে দিতে হবে আর তা না হলে একর পর এক নাসিরনগর, রামু, মুরাদনগর ও শাল্লার মতো ট্র্যাজেডি ঘটতেই থাকবে।