বিশেষ প্রতিনিধি::
দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলামের উগ্র কর্মীদের তা-বের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে শেয়ার করায় সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ছেলের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতাকে ধর্ম অবমানার মিথ্যা অভিযোগ এনে লাঞ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগ নেতার মাদরাসা পড়–য়া ও পুত্র নিজ এলাকার ঢাবি ছাত্রলীগ নেতার প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশের প্রতিশোধ নিতে তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ এনে মানুষকে উত্তেজিত করে হেনস্থা করে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়েই অবরুদ্ধ করে তাকে হেনস্থা করা হয় এবং করজোড় করে মাফ চাওয়ানো হয়। এ ঘটনায় ওই ছাত্র ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম আলম স্থানীয় এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের গোষ্ঠীর চাচা। তিনি একসময় জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়শ্রী ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের আফজাল খান একজন মেধাবী ছাত্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও স্যার এফ রহমান হলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার সঙ্গে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাদে হরিপুর সাতঘরিয়া গ্রামের আবুল হাসেম আলমের ছেলে সাবেক শিবির নেতা আল মোজাহিদের বিরোধ ছিল। সম্প্রতি ছাত্রলীগ নেতা আফজল খান দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলামের উগ্র কর্মীদের হামলা ও আক্রমণের কিছু ছবি তার ফেইসবুক একাউন্ট থেকে পোস্ট করেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে আল মোজাহিদ ধর্ম অবমাননা এবং আল্লা-রাসুলের সমালোচনা হিসেবে প্রচার চালিয়ে এলাকাবাসীকে ক্ষুব্দ করে। জয়শ্রী বাজারে তাকে শারিরিকভাবে লাঞ্চিত করে। পরে আওয়ামী লীগের স্থানীয় কার্যালয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে লাঞ্চিত করে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ওই আওয়ামী লীগ নেতা স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের গোষ্ঠীর চাচা। তিনি আগে উপজেলা জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। তিনি আওয়ামী লীগের সুবিধা নিলেও আওয়ামী লীগের নীতি, আদর্শবিরোধী কাজ করে আওয়ামী লীগকে নানাভাবে সমালোচিত করছে তার পরিবার ও সন্তানেরা।
এ বিষয়ে আবুল হাসেম আলমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে ফোন ধরেন তার ছেলে আবুল কাশেম। তিনি নিজেকে এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের চাচাতো ভাই উল্লেখ করে বলেন, আফজল ফেইসবুকে কি লিখছে আমি দেখিনি। শুনেছি আল্লার রসুলের বিরোধীতা করে লিখেছে। এ কারণে আমার ভাই মাদরাসা ছাত্র আল মোজাহিদ তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি করেছিল। এর জের ধরে কিছু মানুষ উত্তেজিত হয়ে তাকে লাঞ্চিত করে। পরে তাকে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে রক্ষা করা হয়। বিষয়টি এখন নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে আমার বাবা কখনো জামায়াতে ছিলেন না।
এদিকে এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক আল আমিন রহমান এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে জয়শ্রী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ছেলে মিথ্যা অবমাননার অভিযোগ এনে জামাত শিবির নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা আফজল খানকে জনসম্মুখে লাঞ্চিত করেছে। স্থানীয় ওই আওয়ামী লীগ নেতাসহ ওই হেনস্থাকারীদের বিচার চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগও এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ধর্মপাশা থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি শুনেছি। ওই ছাত্র অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।