হাওর ডেস্ক::
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার লাইভ ভিডিও সরিয়ে ফেলেছেন মামুনুল হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) রাতে তার ভেরিফায়েড পেজে এই ভিডিওটি আর পাওয়া যায়নি। শেষ যে ভিডিওটি রয়েছে, সেটি এক সপ্তাহ আগের। এ বিষয়ে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে ব্যক্তিগত ভুলের জন্য ক্ষমা চান হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক।
তিনি বলেন, ‘আমি সবার কাছে দোয়া চাই। আমার ব্যক্তিগত অসাবধানতার কারণে যে ক্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে। আমার অসাবধানতা এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করার করণে যে ক্ষতির সম্মুখীন ব্যক্তিগতভাবে হয়েছি, সেই জন্য আমি নিজেই মর্মাহত। আমার কারণে আজকে সেখানে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের কাছে আমি হাত জোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
এদিকে ওই লাইভ ভিডিওতে স্ত্রীকে খুশি করতে ‘প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে সত্যকে গোপন করার অবকাশ রয়েছে’ বলে মাওলানা মামুনুল হক যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে দুই ধরনের মত পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) তিনি তার ফেসবুক ধারণ করা লাইভে এসে এই বক্তব্য দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলা এই বিতর্কে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরাও যুক্ত হয়েছেন।
এক্ষেত্রে ইসলাম কী বলে? হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এ বিষয়টির সুযোগ ইসলামে রয়েছে। তবে কোনও কোনও আলেম বলছেন, সত্যকে গোপন করার কোনও অবকাশ ইসলামে নেই, বরং সত্যকে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
গত শনিবার (৩ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে একজন নারীসহ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় লোকজন। পরে খবর পেয়ে হেফাজত ও মাদ্রাসার ছাত্ররা সেখানে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে তাকে নিয়ে যায়। মামুনুল জানিয়েছেন, ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি ফেসবুকে ধারণকৃত লাইভে প্রচার করেন, ‘স্ত্রীকে খুশি করতে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে সত্যকে গোপন করার অবকাশ রয়েছে।’
মামুনুল হকের বক্তব্য নিয়ে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেছেন, ‘আমি কয়েকজন ইসলামী শরিয়ত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, যে স্ত্রীকে খুশি করতে ক্ষেত্র বিশেষে মিথ্যে বলার সুযোগ রয়েছে।’
কোন দলিলের ভিত্তিতে এ সুযোগ- এমন প্রশ্নে হেফাজতে ইসলাম ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন বলেছেন, ‘আসমা বিনতে ইয়াজিদ থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেবলমাত্র তিনটি ক্ষেত্রে মিথ্যা কথা বলা বৈধ। ১. স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য যে মিথ্যা বলা হয়। ২. যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য যে মিথ্যা বলা হয় এবং ৩. দুইজন ব্যক্তির মাঝে ঝগড়া-বিবাদ নিরসন করার জন্য যে মিথ্যা বলা হয়। (তিরমিযি শরীফ নং ১৯৩৯ আবু দাউদ নং ৪৯২১)’।
অন্য একটি হাসিসে দেখা যায়- আল্লাহর রাসুল বলেছেন’ অন্তরে যে মহব্বত আছে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা যাবে এবং এমন কথা বলবে যা দ্বারা উভয়ের হৃদ্যতা, অন্তরঙ্গতা ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায় এবং স্থায়ী হয়। এ থেকে অকল্যাণ নয় বরং কল্যাণের সূচনা হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৯৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯২৩; বাজলুল মাজহূদ ১৯/১৬২; ইমাম নববী, শরহে মুসলিম ৮/১৫৭।)
এই হাদিস অনুযায়ী স্ত্রীকে খুশি করতে তার গুনের ও রূপের বর্ণনা বাড়িয়ে বলা যাবে, তবে অন্য কোন বিষয় মিথ্যা বলা যাবে না।
একইভাবে তাবলীগ জামাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ইসলামী শরিয়ত বিশেষজ্ঞ মুফতি সালমান বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) বলেন, ‘স্ত্রীকে খুশি করতে কোন সত্যকে গোপন করার অবকাশ রয়েছে- কিন্তু সেটা কতটুকু। আসলে সত্যকে গোপন করার অবকাশ নেই, তবে সত্যকে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার অবকাশ আছে। উনি (মামুনুল হক) পরবর্তীতে ওনার প্রথম স্ত্রীকে বলেছেন এটা (২য় স্ত্রী সম্পর্কে) শহিদুল ভাইয়ের স্ত্রী। এটা তো সত্য না। উনি সম্পূর্ণ মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। পরবর্তীতে উনি আবার বলেছেন, তার বিবাহিত স্ত্রী। তো তার বিবাহিত স্ত্রী হলে তো শহিদুল সাহেবের স্ত্রী হতে পারে না। আবার শহীদুল সাহেবের স্ত্রী হলে উনার (মামুনুল হক) স্ত্রী হতে পারে না। তিনি তার প্রথম স্ত্রীকে ধোঁকা দিয়েছেন অন্যের স্ত্রী বলে, এটা অপরাধ। উনি জাতির সামনেও মিথ্যা কথা বলছেন। দুই দিক থেকেই তিনি সবাইকে ধোঁকার মধ্যে ফেলেছেন। এটা ঠিক হয়নি। সত্য এড়ানো আর ধোঁকা দেওয়া দুটো ভিন্ন বিষয়।’