হাওর ডেস্ক ::
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে আরও ১৮টি মামলায় রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ। এছাড়া একই সংগঠনের অপর যুগ্ম মহাসচিব জুনাইদ আল হাবিবকে আরও সাতটি মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হতে পারে। এদিকে রিমান্ডের তৃতীয় দিন বুধবার মামুনুল হক ওয়াজ মাহফিলের আড়ালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাওলানা মামুনুলকে যেসব মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে সেসবের মধ্যে রয়েছে-পল্টন থানার ১০টি, মতিঝিল থানার চারটি, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার দুটি এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দুটি মামলা। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে ১৩টি, ২০২০ সালে একটি এবং ২০২১ সালে চারটি মামলা রয়েছে। ২০২০ সালে মোহাম্মদপুর থানার নাশকতা ও ভাঙচুর মামলায় ১৮ এপ্রিল মামুনুলকে গ্রেফতার করা হয়।
পরদিন তাকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সাত দিনের রিমান্ড শেষ হলে অন্য মামলায় তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে। এভাবে এক মামলায় রিমান্ড শেষ হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে অন্যসব মামলায় তাকে রিমান্ডে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এদিকে দেশব্যাপী সম্প্রতি নাশকতার ঘটনায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরও রিমান্ডে নেওয়া হবে।
২০১৩ সালে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় পল্টন থানায় করা এক মামলায় জুনায়েদ আল হাবিবকে ১৭ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়। পরদিন আদালতে হাজির করে ওই মামলায় তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। বুধবার তার রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষ হয়েছে। আরও যেসব মামলায় তাকে রিমান্ডে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে সেগুলো সবই পল্টন থানার ও ২০১৩ সালের মামলা। এগুলোর মধ্যে ওই বছরের ৬ মে দুটি, ৭ মে চারটি ও ১৫ মে একটি মামলা করা হয়। মামলাগুলোর মধ্যে তিনটিতে তিনি এক নম্বর আসামি। এছাড়া একটিতে তিন নম্বর, একটিতে আট নম্বর এবং অপর একটিতে ১৩ নম্বর আসামি তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কেবল মামুনুল হক বা জুনাইদ নয়-গ্রেফতার সব আসামিকেই সংশ্লিষ্ট সব মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি বলেন, ঢাকায় হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৬৮টি মামলা হয়েছে। এসবের মধ্যে ২০১৩ সালে ৫৩টি, ২০২০ সালে তিনটি এবং চলতি বছর ১২টি মামলা হয়েছে। ৬৮টি মামলার মধ্যে এ পর্যন্ত চারটিতে (২০১৩ সালের) চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বাকি সবগুলো মামলার তদন্ত চলছে।
চলতি বছরের ১২ মামলায় প্রায় ১০ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামুনুল, জুনাইদ, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজি, মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দি, মাওলানা জালাল উদ্দীন, মুফতি শরীফ উল্লাহ, মুফতি ফখরুল ইসলাম, খুরশিদ আলম কাসেমী, মুফতি শারাফাত হোসাইন, মাওলানা জুবায়ের আহমদ এবং কোরবান আলী কাশেমীসহ অর্ধশতাধিক নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা যে চারটি মামলায় ডিএমপি চার্জশিট দিয়েছে সেগুলোতে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। চার্জশিটভুক্তদের মধ্যে ১৪ জন জামিনে আছেন। বাকিরা পলাতক।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার যুগান্তরকে বলেন, মামুনুলকে যেসব মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হতে পারে সেসবের মধ্যে ২০১৩ সালের ৬ মে মতিঝিল থানার একটি মামলা আছে। এ মামলায় মামুনুল ছাড়াও হেফাজত নেতা মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, তাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, আব্দুল হামিদ পীর, ওবায়দুর রহমান মাহবুব, আনোয়ারুল করিম ও নাছির উদ্দিন মনিরসহ ২৩৭ জনের নাম রয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় জানান, ২০১৩ সালের ৬ মে পল্টন থানায় করা একটি মামলায় এজাহারভুক্ত ১০ নম্বর আসামি মামুনুল। তিনি ছাড়াও মামলায় বাবুনগরী, ফুফতি ফয়জুল্লাহ, মামুনুল হক, মালেক হালিম ও আব্দুর জব্বারসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এতে কয়েকশ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) শাহ আবিদ হোসেন জানান, ৫ মে পল্টন থানায় করা একটি মামলার ৯০ নম্বর আসামি মামুনুল। এ মামলায় আসামি হিসাবে ১৯৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত ১০-১২ হাজার জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় মামুনুল ও বাবুনগরী ছাড়াও মুফতি ফয়জুল্লাহ, মামুনুল হক. মালেক হালিম, আবদুর জব্বার, ইলিয়াস ওসমানী, রফিকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, ডা, শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও হামিদুর রহমান আজাদের নাম রয়েছে।
রিমান্ডের তৃতীয় দিন বুধবার মামুনুল হক কী ধরনের তথ্য দিয়েছেন সে সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশের তেজগাঁও অপরাধ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ যুগান্তরকে বলেন, ওয়াজ মাহফিলের আড়ালে মামুনুল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। আবেগ বা জোশের বশবর্তী হয়ে তিনি অনেক কথা বলেছেন বলেও জানিয়েছেন।