সাজ্জাদ হোসেন শাহ্,: সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে গৃহবধূ আজমিনা বেগম হত্যাকান্ডের মূলহোতা গোলাপ মিয়া (৩০) ও এক নারীসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ৯ সিলেট ও সুনামগঞ্জ সিপিসি-৩ এর সদস্যরা। গোলাপ মিয়া উপজেলার ৫নং বাদাঘাট ইউনিয়নের জামভাগ গ্রামের মৃত নজির হোসেনের ছেলে। অন্যান্য গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, গোলাপ মিয়ার সহযোগী উপজেলার জৈতাপুর (জামবাগ) গ্রামের মৃত আকরম আলীর ছেলে মাদকাসক্ত মোঃ সোহাগ মিয়া (২২) এবং আজমিনার শাশুরী হেলেনা বেগম (৪৫)।
র্যাব ৯ সিলেটের সুনামগঞ্জ সিপিসি-৩ সুত্রে জানা যায়, বুধবার ভোররাতে খুন হন দুই সন্তানের জননী গৃহবধূ আজমিনা বেগম (২৪)। এখুনের ঘটনায় কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারছিলনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এনিয়ে এলাকায়ও চলছিল নানা রকম গুঞ্জন। পত্রিকায় সংবাদ পড়ে র্যাব ৯ সিলেটের অধিনায়ককে বিষয়টি অবহিত করেন র্যাব ৯ সুনামগঞ্জ সিপিসি ৩ এর কোম্পানী কমান্ডার সিঞ্চর আহমেদ।
পরে বুধবার রাতে তাহিরপুর উপজেলার দুই স্থানে অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে সন্দেহভাজনদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে করতে ভোররাতে র্যাব ৯ সিলেটের অধিনায়ক লে. কর্ণেল আবু মুসা মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জ সিপিসি-৩ এর কোম্পানী কমান্ডার সিঞ্চর আহমদ ও সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্’র সহযোগিতায় তাহিরপুর উপজেলার জৈতাপুর (জামবাগ) গ্রামে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার ভোররাতে হতাকান্ডের মূলহোতা গোলাপ মিয়া, আজমিনার শাশুরী হেলেনা বেগম ও সোহাগ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ৯ সুনামগঞ্জ সিপিসি ৩ এর কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে হত্যাকান্ডের মূল রহস্য। গোলাপ মিয়া নিজেই অকপটে স্বীকার করে হত্যাকান্ডের আদ্যোপান্ত।
কিছু কথা:
তাহিরপুর উপজেলার ৫নং বাদাঘাট ইউনিয়নের জৈতাপুর (জামবাগ) গ্রামের মৃত নজির হোসেনের ছেলে গোলাপ মিয়া একটু মাতব্বর টাইপের লোক। গ্রামের ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাতব্বরি করতে সে। আর সেই সুবাধেই যাতায়াত ছিল আজমিনার বাড়িতে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে গড়ে উঠে সম্পর্ক। আর এতে সহযোগীতা করতেন আজমিনার শাশুরী হেলেনা বেগম। বিনিময়ে নিতেন আর্থিক সুবিধা। হেলেনা বেগম শুধু নিজের পুত্রবধূকেই নয় আরো একাধিক মেয়েও সাপ্লাই দিতেন গোলাপের কাছে।
সে রাতে যা ঘটেছিল: রাত তখন অনুমান এগারোটা হবে গোলাপ মিয়া আজমিনার শশুর শাশুরী সবাই মিলে বাড়ির উঠোনে বসে গল্প গুজব করছিলেন। একপর্যায়ে আজমিনার শশুর শাশুরী তাদের শোবার ঘরে চলে যান। এসময় গোলাপ মিয়া আজমিনার ঘরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। দৈহিক মেলামেশা করতে গেলে আজমিনা শশুর/শাশুরী ছেলে মেয়ে সজাগ আছে বলে বাঁধা দেয় আজমিনা। কিন্তু কোন বাঁধাই মানতে রাজি না গোলাপ জোরপূর্বকই মেলামেশা করে চলে যায়।
কিছুক্ষণপর আবারো আজমিনার ঘরে গিয়ে দৈহিক মেলামেশার চেষ্টা করে গোলাপ আবারো বাঁধা দেয় আজমিনা। বাঁধা না মেনে অনেক ধস্তাধস্তির পর জোরপূর্বক দ্বিতীয়বারের মতো দৈহিক মেলামেশা করে গোলাপ। এসময় আজমিনার ছেলে মেয়ে ঘুম থেকে উঠে কান্নাকাটি শুরু করে। পরে তার শশুর আজমিনাকে ডাকতে থাকেন আজমিনা কোন সাড়া না দেয়ায়। পাশের দোকানে বসে থাকা গ্রামের ছিচকে চোর ও মাদকাসক্ত সেহাগ। তাকে দিয়ে আবারো আজমিনাকে ডাক দেওয়ান তার শশুর। সোহাগ ডাক দেয়ার পর দরজা খোলে আজমিনা। গোলাপ তখন আজমিনার ঘর থেকে বেড়িয়ে আসছিলো গোলাপ বেরিয়ে আসার সময় আজমিনা তার গালে জোড়ে তাপ্পর মারে।
তাপ্পর মারার অপমান সইতে না পেরে বাইরে বের হয়ে আসে গোলাপ। এসে দেখে সোহাগের হাতে টিউবওয়েলের হাতল সেই হাতল নিয়ে গিয়ে আজমিনার মাথা ও মুখ লক্ষ করে আঘাত করে লম্পট গোলাপ। আঘাত পেয়ে সাথে সাথে মাঠিতে লুটিয়ে পড়ে আজমিনা।
এসময় গোলাপ ফোনে তার অপর কয়েকজন সহযোগীকে ডেকে এনে তড়িগড়ি করে বাড়ির পাশে লাকড়ীরর মাচার উপর আজমিনাকে রক্তাক্ত অবস্থায় গাছের পাতা ও ডালপালা দিয়ে ঢেকে ফেলে রেখে চলে যায়।
বুধবার রাতের কোন এক সময় তাহিরপুর উপজেলার ৫নং বাদাঘাট ইউনিয়নের জৈতাপুর (জামবাগ) গ্রামের দুই সন্তানের জননী আজমিনা বেগম (২৪)কে হত্যা করে বাড়ির বাইরে লাকড়ী রাখার মাচার উপর ডালপালা ও পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যেও সৃষ্টি হয় জনমনে দেখা দেয় নানান প্রশ্ন।
বৃহস্প্রতিবার সকালে তাহিরপুর থানা পুলিশ উপজেলার ৫নং বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের জৈতাপুর (জামবাগ) গ্রামে বাড়ির পাশে লাকড়ী রাখার মাচার উপর ডালপালা ও পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা শাহনুর মিয়ার স্ত্রী আজমিনা বেগম (২৪) এর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় তাহিরপুর থানা পুলিশ।
র্যাব-৯ সিলেটের সুনামগঞ্জ সিপিসি ৩ এর কোম্পানী অধিনায়ক লেঃ কমান্ডার সিঞ্চন আহমেদ জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃতদের শুক্রবার বিকেলে তাহিরপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।