হাওর ডেস্ক::
দেশে করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিলে পাওয়া ভ্যারিয়েন্ট দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে। এই ভ্যারিয়েন্টগুলো ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ বাড়িয়ে চলেছে। এর সঙ্গে সুনামগঞ্জে নতুনভাবে পাওয়া গেছে নাইজেরিয়ার ভ্যারিয়েন্ট বলে পরিচিত বি.১.৫২৫।
মার্চ ও এপ্রিলে সংগ্রহ করা নমুনার সিকোয়েন্সিং করে বি.১.৫২৫ ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি জিআইএসএইড’র আপলোড করা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১১ মার্চ সিলেটের সুনামগঞ্জ থেকে সংগ্রহ করা নমুনা সিকোয়েন্সিং করে নাইজেরিয়ার ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। ২৪ বছর বয়সি এক ব্যক্তির কাছ থেকে এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ বিষয়ে ৭ এপ্রিল জিআইএসএইডে দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইডিইএসএইচআই (আইদেশী) ল্যাবের পক্ষ থেকে তথ্য সাবমিট করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো ভাইরাসের মিউটেশন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। কারণ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ছড়ানোর সুযোগ পাবে। অন্তত মাস্কটাও যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় তবে ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি কমে আসবে।
গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটা (জিআইএসএইড) জার্মান সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিতে একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে করোনাভাইরাসের সবধরনের জিনোম সিকুয়েন্সের তথ্য জমা রাখা হয়। এখান থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী দেখা যায়, এখন পর্যন্ত দেশের দুই বিভাগের ৮টি নমুনা পরীক্ষায় এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়ার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাসের আরেকটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই ভ্যারিয়েন্টটির নাম বি.১.৫২৫। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যে এটি প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয়। একই মাসে নাইজেরিয়াতেও পাওয়া যায় ভ্যারিয়েন্টটি।
মার্চের ৫ তারিখ পর্যন্ত এই ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বের ২৩টি দেশে শনাক্ত হয়। দেশগুলো হলো- যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, ফিনল্যান, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, স্পেন, নিজেরিয়া, ঘানা, জর্দান, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, ইতালি, স্লোভেনিয়া, অস্ট্রিয়া, মালয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও ভারত সাগরের দ্বিপ মায়াটোতেও পাওয়া গেছে।
২০ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) তাদের মহামারি সংক্রান্ত সর্বশেষ আপডেটে এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে উল্লেখ করে।
গবেষকরা বলছেন, যুক্তরাজ্যের শনাক্ত হওয়া অতিমাত্রায় সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৭’র সঙ্গে নতুন বি.১.৫২৫ ভ্যারিয়েন্টের মিল আছে। তবে এটি কতটুকু মারাত্মক তা নির্ণয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এই ভ্যারিয়েন্টটি উদবেগের কারণ হিসেবেও দেখা দিতে পারে। কারণ এই মিউটেশন দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের ভ্যারিয়েন্টেও পাওয়া গেছে যা মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিয়ে ভাইরাসকে প্রবেশে সাহায্য করতে পারে।
এই ভ্যারিয়েন্ট বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্ব্রিজের অধ্যাপক রাবি গুপ্তা গণমাধ্যমকে বলেন, B.1.525- এর মধ্যে যে শক্তিশালী মিউটেশন ধরন রয়েছে তা আরও কিছু নতুন ভ্যারিয়েন্টে দেখা গেছে।
দেশে কোভিড-১৯ বিষয়ক জনস্বাস্থ্য কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল সারাবাংলাকে বলেন, নতুন স্ট্রেইন আসবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ যুক্তরাজ্য সহ অন্যান্য দেশে যখন সংক্রমণের হার বাড়ছিল তখন সেখান থেকেও মানুষ এসেছে আমাদের দেশে। তার মানে আমরা কিন্তু ট্রান্সমিশন কিন্তু কখনো আটকাতে পারি নি। আর তাই এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে সবাইকে ও জনসমাগম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক ডা. শাহরিয়ার রোজেন সারাবাংলাকে বলেন, করোনাভাইরাস একটি m-RNA ভাইরাস এবং এটি স্বাভাবিক যে এখানে মিউটেশন হবে। অধিকাংশ মিউটেশনই উদ্বেগের কারণ না হলেও যখন স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন হয় এবং ভাইরাসের বিপজ্জনক চরিত্রগত পরিবর্তন হয় তখন সেটি বিশাল উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। করোনাভাইরাসের এমন বিপজ্জনক ধরনের উদ্ভব ঘটেছে যুক্তরাজ্যে, সাউথ আফ্রিকা, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফর্নিয়া, নিউইয়র্কে এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। এদের মাঝে সবচেয়ে বিপদজনক হলো যুক্তরাজ্য, সাউথ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলের ভ্যারিয়েন্ট। এই ধরনগুলোর সংক্রমণ ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি।
তিনি বলেন, নাইজেরিয়ার ভ্যারিয়েন্টের বিষয়ে এখনো ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন বলা হয় নাই। এটিকে ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট হিসেবে দেখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। তবে ধারণা করা হচ্ছে এর সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি। একই সঙ্গে এই ভ্যারিয়েন্টের আক্রান্তদের মাঝে মৃত্যুহারও বেশি। কিন্তু এটি নিয়ে যেহেতু গবেষণা চলছে তাই অবশ্যই এর প্রভাব বোঝা যাবে।
তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণের গতিবিধি বোঝার জন্য কমিউনিটি সার্ভিল্যান্স জরুরি। এতে করে ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হবে ও সেই হিসেবে প্রস্তুতি নেওয়া যাবে। তবে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। মাস্ক পড়ার বিষয়টি দৈনন্দিন অভ্যাসের পরিণত করতে হবে। এ বিষয়ে রিল্যাক্স হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।