অনলাইন ডেক্স::
যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দ-িত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডই বহাল থাকলো। রবি ও সোমবার শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ সাঈদীর সাজা কমানোর ও রাষ্ট্রপক্ষের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলেও ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারকের আপিল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেন। তাতে সাজা কমে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ আসে। দীর্ঘদিন পর গত রবিবার থেকে রিভিউ আবেদনের শুনানি শুরু হয়।
রিভিউ রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘‘সাঈদী দেশ, সভ্যতা ও মানুষের জন্য ‘ক্ষতিকর’ এবং তার ফাঁসির রায় না হওয়ায় দুঃখবোধ রয়েই গেল।’’ তবে আদালতের রায় মেনে নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপারধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন এবং তদন্ত সংস্থার ব্যর্থতা ও দুর্বলতার কারণে সাঈদীকে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি।’
আপিল বিভাগ তাদের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপিতে এর আগে প্রসিকিউটরের ব্যর্থতা নিয়ে কিছু কথা উল্লেখ করলেও রিভিউ খারিজের আদেশের সময় প্রসিকিউশনের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত সেই শব্দ উঠিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান। আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপিতে সাঈদীর রায় মৃত্যুদণ্ড না হয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড হওয়ার পেছনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তাদের ব্যর্থতার বিষয়টি উঠে এসেছিল। পরবর্তীতে আইনজীবী এ এম আমিনউদ্দিনের মাধ্যমে সেটিকে রায়ে উল্লেখ না রাখার বিষয়ে আবেদন জানানো হয় ।
এদিকে চূড়ান্ত রায় শোনার পরপরই আদালত থেকে বের হওয়ার সময় সাঈদীর ছেলে মাসুদ-বিন- সাঈদী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ন্যায়বিচার পেলাম না, ন্যায়বিচার হলো না। আমার বাবার একদিনের সাজাও প্রাপ্য ছিল না।’ সাঈদীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ক্ষোভ-দুঃখ যাই থাকুক না কেন রায় মেনে নিতে হবে।’
দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মামলার আপিলের রায়ে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরে বাধ্য করায় সাঈদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আদালত বলেন, যাবজ্জীবন বলতে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত’ কারাবাস বোঝাবে। ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছিল।
২০১৩ সালে ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর দেশজুড়ে সহিংসতা চালায় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। ওই তাণ্ডবে প্রথম তিন দিনেই নিহত হন অন্তত ৭০ জন। কিছু গুজবকে কেন্দ্র করে গাড়ি-দোকানপাট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ৭৭ বছর বয়সী সাঈদী বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। ২০১০ সালের ২৯ জুন থেকে তিনি কারাবন্দি।