বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ জেলার চারটি উপজেলার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা ব্যাংকের বদলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এতে প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ভাতা ভোগীরা বিপাকে পড়েছেন। কারণ তাদের অনেকেরই মোবাইল নেই এবং মোবাইল ব্যবহারও করেননা। তাদের অনেকেই ভাতা পাওয়ার জন্য নতুন মোবাইল কিনে ভাতার নতুন মোবাইল নম্বরে ব্যাংকিং হিসাব চালু করেছেন।
সুনামগঞ্জ সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে আগে এই ভাতা সরকার মালিকানাধীন ব্যাংক থেকে প্রদান করা হতো। উপকারভোগীরা নিজস্ব একাউন্ট বই দিয়ে ভাতা তুলতে পারতেন। তবে ভাতা তুলতে গিয়ে সারাদিন ব্যাংকে অবস্থান করতে হতো। এতে বয়ষ্কদের কষ্ট হতো এবং অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়তেন। এই অবস্থায় সরকার ঘরে বসে সুবিধাভোগীদের ভাতাপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং কম্পানির মাধ্যমে ভাতা মোবাইলে পাঠিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার সদর, দিরাই, শাল্লা, ধর্মপাশা ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতাপ্রাপ্তদের ভাতা ‘বিকাশ’র মাধ্যমে দেবার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কার্যক্রমও শুরু হয়ে গেছে। অনেকের ভাতাও মোবাইলে চলে যাচ্ছে। কিন্তু অনেকের ভাতা এখনো মোবাইয়ে যায়নি।
সুনামগঞ্জ সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৯৮ জন সামাজিক সিরাপত্তা কর্মসূচির সরকারি ভাতা পাচ্ছেন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন ৭৬ হাজার ৮৫৬ জন, বিধবা ভাতা পাচ্ছেন ২৫ হাজার ৬৩৪ জন। প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে ২৭ হাজার ৯০৮ জন। সম্প্রতি সরকারি সিদ্ধান্তে চারটি উপজেলা ও একটি পৌরসভার ৪৮ হাজার ৬৪৭ জনের বিধবা, বয়ষ্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতা ‘বিকাশ’র মাধ্যমে প্রদানের সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক লোকজন ও প্রতিবন্ধীরা মোবাইল ব্যবহার না করায় বিপাকে পড়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী তারা নতুন সিম কিনে নম্বরটির হিসাব খুললেও তাদের ভাতা আসছেনা। ভাতা ভোগীদের অনেকেই এসব বিষয় ইউপি সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যানদেরও অবগত করছেন।
সমাজসেবা অফিস সূত্র জানিয়েছে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ১২ হাজার ৩৩৩ জন, দিরাই উপজেলার ১৩ হাজার ৮৪৬ জন, শাল্লা উপজেলার ৬ হাজার ৪৯১ জন, ধর্মপাশা উপজেলার ১৩ হাজার ৫২৪ জন এবং সুনামগঞ্জ পৌরসভার ২ হাজার ৪৫৩ জনের ভাতা ইতোমধ্যে ‘বিকাশ’র মাধ্যমে প্রদানের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। তবে বয়স্কদের অনেকেরই হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মিলায় বিকাশ একাউন্ট করা যাচ্ছেনা। যার ফলে ভাতাপ্রাপ্তি নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন।
হাসনগরের শ্রবণ প্রতিবন্ধী সুজাত আলী বলেন, আমাদের জন্য ব্যাংকই ভালো ছিল। এখন নতুন নম্বরে বিকাশ চালু করে দিয়েছি। কিন্তু টাকা পাচ্ছিনা। সমাজসেবায় গেলে বলে আমরা কাজ করে দিয়েছি। তার মতো আরো অনেকেরই এই সমস্যা বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিবন্ধী সংগঠন সমূহের সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব এম. তাজুল ইসলাম তারেক বলেন, আমাদের প্রতিবন্ধীদের অনেকেই মোবাইল ব্যাবহার করেননা। তারা সমস্যায় পড়েছেন। নতুন সিম কিনলেও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা ব্যবহার করতে পারেননা। তাছাড়া বয়ষ্ক ভাতা যারা পান তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে ভাতা নিয়ে তারা শঙ্কিত আছেন।
শাল্লার বাহারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিধান চৌধুরী বলেন, এখন থেকে আমাদের উপজেলা মোবাইল ব্যাংকিয়ে বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেকের ভাতা আসছে। অনেকের আসছেনা। তাই তারা আমাদের অফিসে যাতায়াত করছেন। আমরা তাদের সমাজসেবায় গিয়ে জানান আহ্বান জানাচ্ছি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা যাতে উপকারভোগীরা ঘরে বসে পান সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে সরকার। তবে বয়ষ্ক ও প্রতিবন্ধীদের সমস্যা হলে আমি সমাজসেবা অধিদপ্তরকে বিষয়টি দেখার জন্য বলব। যাতে কারো কোন সমস্যা না হয় এবং তালিকাভূক্তরা ভাতা পান সেই বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করা হবে।