অনলাইন ডেক্স::
পতিব্র জুমার নামাজে নির্দিষ্ট করে দেওয়া খুতবাকে হেফাজতে ইসলাম প্রত্যাখ্যান করার দুদিনের মাথায় সুর বদলিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
হেফাজত একে ‘ধর্মীয় বিষয়ে অবৈধ হস্তক্ষেপ’ আখ্যায়িত করে প্রতিবাদ জানালে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলছে, খুতবা কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি কিংবা কারো জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়াও হয়নি।
এদিকে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রদত্ত খুতবাকে ‘বিতর্কিত’ ও ‘ভুলে ভরা’ উল্লেখ করেছেন হেফাজতে আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। যদিও ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলছে, খুতবার ভুল-ভ্রান্তির বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করলে সাধারণ মুসলমানরা বিভ্রান্ত হতে পারেন।
জানা গেছে, অনেকদিন ধরেই আলেমদের আলোচনার কেন্দ্র ছিল ইসলামী ফাউন্ডেশনের জুমার ‘খুতবা নিয়ন্ত্রণের’ উদ্যোগ। সব সমালোচনা উপেক্ষা করে দেশের সব মসজিদে জুমার নামাজে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) প্রদত্ত খুতবা পাঠের আহ্বান জানানো হয় গত বৃহস্পতিবার। এজন্য জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ সারাদেশের সব মসজিদে দুই পৃষ্ঠার একই খুতবা পাঠিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। শুক্রবার অনেক মসজিদে এই খুতবা পাঠ করা হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাঠানো খুতবায় আরবি লেখায় ব্যাকরণগত ভুল রয়েছে বলেও জানিয়েছেন একাধিক আলেম। অন্যদিকে, দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতা ও আলেমরাও সমালোচনা করেছেন এই উদ্যোগের।
জানা যায়, গত রোববার এক বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলাম জুমার নামাজে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দিষ্ট করে দেওয়া খুতবাকে প্রত্যাখ্যান করে। হেফাজত জানায়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক দেশের জামে মসজিদগুলোতে পাঠানো খুতবা বিতর্কিত ও ভুলে ভরা। ইসলামের ইবাদত-বন্দেগিকে দলীয়করণ ও সরকারিকরণ করা যায় না। দেশের সব মুসলিম জনতা ইবাদত-বন্দেগিতে সরকারের এ অন্যায় হস্তক্ষেপ কখনোই বরদাস্ত করবে না। খুতবার আগে কোনও কোনও মসজিদে কুরআন-হাদিসের আলোকে খতিবরা অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে মুসল্লিগণের উদ্দেশে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শৃঙ্খলামতে চলা, অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকা, ইসলামের বিধি-বিধান সঠিকভাবে পালনের নিয়ম-কানুন নিয়ে বয়ান করেন।
খতিব সাহেবরা খুতবার আগে বয়ান প্রকাশ্যেই দিয়ে থাকেন, যা মুসল্লিরা শুনে থাকেন। আর মুসল্লিদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি নানা শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব দলমতের মানুষই থাকেন। সুতরাং খতিব সাহেবদের কোনো বিভ্রান্তিমূলক বয়ান পেশের সুযোগই নেই। খুতবা লিখে দিয়ে তা পড়তে বাধ্য করা সুষ্ঠু চিন্তা নয়।
মঙ্গলবার খুতবা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুহাম্মদ মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত খুতবা বিষয়ে বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, খুতবা কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি কিংবা কারো জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়াও হয়নি। খুতবা প্রণয়ন কমিটি কর্তৃক প্রণীত কোনও খুতবায় যদি ভুল-ভ্রান্তি থেকে থাকে, তাহলে তা লিখিতভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে জানানোর জন্য সবিনয় অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। খুতবার ভুল-ভ্রান্তির বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করলে সাধারণ মুসলমানরা বিভ্রান্ত হতে পারেন।
খুতবা প্রণয়ন কমিটি জানায়, খুতবা পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর আলোকে দেশের প্রচলিত প্রায় সব খুতবার কিতাবকে সামনে রেখে প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। এখানে কারও ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরা হয়নি এবং এর কোনও অবকাশও নেই। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মকর্তা-কর্মচারী খুতবা প্রণয়নের সাথে সম্পৃক্ত নন। এ কমিটিতে শুধুমাত্র দেওবন্দ, হাটহাজারী ও পটিয়া মাদ্রাসাসহ মিশরের আল-আজহার ও মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ আলেম-ওলামা সম্পৃক্ত রয়েছেন। দেশের অন্যান্য মসজিদের খতিব ও ইমামরা যাতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের জন্য প্রণীত খুতবা থেকে ধারণা নিয়ে খুতবা উপস্থাপন করতে পারেন, এ উদ্দেশ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক দেশের বিভিন্ন মসজিদে শুধুমাত্র নমুনা হিসেবে খুতবা পাঠানো হয়। যদি কেউ পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর আলোকে খুতবা প্রণয়ন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে পাঠান তাহলে তা সাদরে গৃহীত হবে এবং তা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে উপস্থাপনসহ দেশব্যাপী বিতরণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
তাছাড়া আরবি ভাষায় পারদর্শী কোনও বিশেষজ্ঞ আলেম খুতবা প্রণয়ন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে আগ্রহী হলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্বাগত জানাবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ছাড়াও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যাদি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ইসলামের মৌলিক বিষয়ের ওপর পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর আলোকে খুতবা প্রণয়ন করে নিয়মিতভাবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে উপস্থাপন এবং দেশব্যাপী বিতরণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, পরোক্ষভাবে দেশের আলেম-ওলামাদের ছোট করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। তারা এখন কেন এসব কথা বলছে! প্রথমত, রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ভুলে ভরা খুতবা পাঠানো অনাকাঙ্ক্ষিত। ভুল করলে তাদের কাছে গিয়ে কেন বলতে হবে? ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই দেশের আলেমদের পরামর্শ নেওয়া উচিত ছিল। তারা কি সারা জাতিকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করতে চায়? এটা পরিস্কার সারাদেশের আলেমরা মানুষের কল্যাণে কথা বলেন। কাউকে এ বিষয়ে শিখিয়ে দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।
এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, বিশ্বের প্রায় মুসলিম দেশে জাতীয়ভাবে খুতবা রচনা করা হয়। বাংলাদেশে অভিজ্ঞ আলেমদের দ্বারা খুতবা রচনা করা হয় এবং তা বায়তুল মোকাররম মসজিদে পাঠ করা হয়। দেশে গ্রামেগঞ্জে বিজ্ঞ আলেম পাওয়া যায় না। সেজন্য আপাতত সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য দিচ্ছি। সবাই সাড়াও দিচ্ছেন। আমরা আহ্বান করেছি, চাইলে বিজ্ঞ আলেম আমাদের পরামর্শ দিতে পারেন। কেউ কেউ বলছেন, খুতবায় ভুল আছে, এসব কথার ভিত্তি নেই। সন্ত্রাস, জঙ্গি এবং বিকৃত ইসলামের যারা মদদদাতা তারাই তাদের লোক দিয়ে করাচ্ছে। তাদের ভবিষ্যত ভালো না। এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে খুতবা সারাদেশের মসজিদে যাবে। আমাদের উদ্দেশ্য ভালো!