বিশেষ প্রতিনিধি::
হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিয়ে বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কের একটি একটি সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে নিজের আইডি থেকে শেয়ার করায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করে কলেজ ছাত্রের উপর উপর হামলা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইর রাজাপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় গুরুতর আহত জাহানুর আহমদ মনির সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি উপজেলার সুখাইর রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা আকবর আলীর ছেলে। এ ঘটনায় রাতেই ৩ জনের নামেল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন আক্রান্ত কলেজ ছাত্র। পুলিশ অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
হেফাজত নেতাকর্মীদের হামলায় আহত কলেজ ছাত্র জাহানূর আহমদ মনির জানান, গত ২ মে তিনি সদ্য বিলুপ্ত হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের বিয়েবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কের একটি সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তার আইডি থেকে শেয়ার করেন। শেয়ারের পরই তার নিজ গ্রামের পার্শবর্তী রহমতপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গণির ছেলে বাবুপুর মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক ও উপজেলা হেফাজত নেতা মাওলানা এমদাদুল হক, রংপুরহাটি গ্রামের বাসিন্দা মো. সুলেমান উদ্দিনের ছেলে ও রাজাপুর মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা সাইদুর রহমান নোমানি এবং রহমতপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজু আহমদের ছেলে সুলতান আহমদসহ কয়েকজন তাকে ‘নাস্তিক ও ধর্মবিদ্বেষী’ আখ্যায়িত করে হুমকি ধমকি দেয়। তাদের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে চলে আসেন তিনি। ভয়ের কারণে গত ঈদেও বাড়িতে যাননি। শুক্রবার তার বড় ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে চুপি চুপি বাড়ি যান তিনি। এই খবর পেয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা এমদাদুল হক, খেলাফত মজলিসের উপজেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সাইদুর রহমান নোমানি এবং রহমতপুর গ্রামের সুলতান আহমদসহ হেফাজতের স্থানীয় নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে রাজাপুর বাজারে মনিরের উপর হামলা চালায়। তারা তাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেন। বর্তমানে তিনি ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় রাতেই হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা এমদাদুল হক, খেলাফত মজলিসের উপজেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সাইদুর রহমান নোমানি এবং রহমতপুর গ্রামের সুলতান আহমদের নামোল্লেখসহ আরো অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ সকালে মাওলানা এমদাদুল হক ও সুলতান আহমদকে গ্রেপ্তার করেছে।
উল্লেখ্য এর আগে গত ৭ এপ্রিল একই উপজেলায় মামুনুল হকের বিয়ে বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কের খবর শেয়ার করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খানকে ধর্মপাশায় মারধর করে হেফাজতের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। পুলিশ উল্টো তাকে হাতকড়া পরিয়ে ক্ষমা চাওয়ায় এবং থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের চাচা আবুল হাশেম আলম ও তার ছেলে আল মোজাহিদসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছাত্রলীগ নেতাকে হেনস্থার ঘটনায় দুই এসআই প্রত্যাহার ও ধর্মপাশা থানার ওসি দিলোয়ার হোসেনকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
ধার্মপাশা থানার ওসি খালেদ চৌধুরী বলেন, রাজাপুর বাজারে হেফাজত অনুসারীদের হাতে প্রহৃত কলেজ ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। দুজনকে গ্রেপ্তার করেছি আমরা। অন্যদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।