হাওর ডেস্ক::
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জের ঝুমন দাসের মুক্তি দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক।
শুক্রবার সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ একথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস.এম.এ সবুর, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহিদুল বারী, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, সংগঠন ‘আমরা করি’র সমন্বয়ক ও মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, উন্নয়ন কর্মী রোকেয়া কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক এম. এম. আকাশ, ঢাবি অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের (ইনসাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংস্কৃতিকর্মী ড. সেলু বাসিত, সাংস্কৃতিক সংগঠন উঠোনের সভাপতি অলক দাস গুপ্ত, সাংস্কৃতিক সংগঠন আনন্দনের সমন্বয়ক এ কে আজাদ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) সভাপতি গৌতম শীল।
তারা বলেন, ‘গত ১৬ মার্চ হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বক্তব্যের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁও ঝুমন দাস ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পুলিশ ওই রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে। তবে পরদিন ১৭ মার্চ সকালে কাশিপুর, নাচনী, চন্ডিপুরসহ কয়েকটি মুসলমান অধ্যুষিত গ্রামের মসজিদে মাইকিং করে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কয়েক হাজার অনুসারী নোয়াগাঁও গ্রামে রিকল্পিতভাবে অতর্কিত হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এই ঘটনায় মামলা দায়ের হলে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরও সপ্তাহখানেক পর ৫৪ ধারায় ঝুমনের বিরুদ্ধে পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। এই মামলায় সে ৮০ দিন ধরে কারাগারে আটক রয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতিতে হামলা ও ভাঙচুরের মামলার আসামিদের অনেকে জামিন পেলেও কয়েক দফা ঝুমনের জামিন দেননি বিজ্ঞ আদালত।’
বিশিষ্ট নাগরিকেরা আরও বলেন, ‘শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হামলার ঘটনা দেশে নতুন নয়। এর আগেও কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বসতিতে, যশোরের মালোপাড়া, ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া-কর্ণাই, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, ব্রাক্ষ্ণবাড়ীয়ার নাসিরনগর, রংপুরের পাগলাপীর, ভোলার বোরহান উদ্দিন, কুমিল্লার মুরাদনগরসহ বিভিন্ন স্থানে একইভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম ও মহানবীকে কটাক্ষ করে পোস্ট দিয়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, এ ধরনের ঘটনায় রাষ্ট্রীয় কঠোরতার বিপরীতে ভিকটিমের প্রতিই রাষ্ট্রের কঠোরতা দৃশ্যমান। এটি স্বাধীন দেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ একইসাথে সংবিধান পরিপন্থি।’
সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানো হেফাজত ইসলামকে সমীহ করতে গিয়ে রাষ্ট্র ভিকটিমদের ন্যায়বিচার বঞ্চিত করছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঝুমন দাসসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার সকলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। সরকার দ্রুততম সময়ে ঝুমনকে মুক্তি দেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন বিবৃতিদাতারা।