1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

ভারতে ভয়ঙ্কর রূপ পাচ্ছে বর্ষা: গবেষণায় নতুন তথ্য

  • আপডেট টাইম :: রবিবার, ৬ জুন, ২০২১, ৪.০৬ পিএম
  • ২৭৫ বার পড়া হয়েছে

হাওর ডেস্ক::
বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতে বর্ষাকাল আসছে আরও বেশি বৃষ্টি, আরও বেশি বিপদ নিয়ে; নতুন এক গবেষণা আরও দৃঢ় করেছে বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের এ ধারণাকে।

জলবায়ুর পরিবর্তন যে বর্ষাকালকে বদলে দিচ্ছে, বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই তা বুঝতে পারছিলেন। কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে করা আগের গবেষণাগুলো থেকেই বোঝা যাচ্ছিল যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ বাড়ায় তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে, তাতে গরম আবহাওয়ায় বাড়তি আর্দ্রতা গ্রীষ্ম ও বর্ষাকে করে তুলেছে আরও বেশি বৃষ্টিপ্রবণ, মাঝে মাঝে হচ্ছে অতি বর্ষণ, কোনো পূর্বাভাস সেখানে টিকছে না।

শুক্রবার সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত নতুন একটি গবেষণা প্রতিবেদন বিজ্ঞানীদের ওই ধারণার পক্ষেই নতুন প্রমাণ হাজির করেছে। গত ১০ লাখ বছরে জলবায়ু কীভাবে বদলেছে, সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এ গবেষণায় ধারণা দিতে চেয়েছেন- কেমন হতে পারে আগামী দিনের বর্ষাকাল।

ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ায় মোটামুটি জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বর্ষাকাল ধরা হয়। এ সময় মৌসুমি বায়ু যে বিপুল বৃষ্টি নিয়ে আসে, তা এ অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এই বৃষ্টি পৃথিবীর এক পঞ্চমাংশ মানুষের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করে। সময়মত বৃষ্টি যেমন ফসল উৎপাদন বাড়ায়, তেমনি আবার অসময়ের অতিবর্ষণ ফসল ধ্বংসও করে। অতিবৃষ্টি নিয়ে আসে বন্যা, কেড়ে নেয় প্রাণ, ধ্বংস করে লোকালয়, ছড়িয়ে দেয় দূষণ। ‍ূ

নতুন এই গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে বর্ষার এই মেজাজ বদলে পুরো অঞ্চলের চেহারা আর ইতিহাসই বদলে যেতে পারে।

এ গবেষণার জন্য ১০ লাখ বছরের জলবায়ু পরিবর্তনের তথ্য বিজ্ঞানীরা কীভাবে পেলেন? না, টাইম মেশিন তাদের নেই। তারা কাজ করেছেন কাদা নিয়ে। প্রতি বর্ষায় পুরো ভারতবর্ষ ধুয়ে বিপুল পলি নিয়ে বৃষ্টির পানি পৌঁছায় বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরে। সাগরের ভূস্তর খনন করে বিজ্ঞানীরা সেই নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

এ কাজে পৃষ্ঠ থেকে ২০০ মিটার গভীর পর্যন্ত মাটির নমুনা নেওয়া হয়েছে, যাতে প্রতি বর্ষায় জমা নতুন স্তরগুলো থেকে বৃষ্টিপাত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

যে বছর বৃষ্টি বেশি হয়, সাগরে স্বাদু পানির যোগান বাড়ে, উপরিভাগের লবণাক্ততা কমে আসে। তাতে সাগরের উপরিতলে থাকা অনেক ক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক জীবের মৃত্যু হয়, সেসব দেহাবশেষ জমা হয় মাটির স্তরের সঙ্গে। এভাবে প্রতিবছর পরতের পর পরত জমে সাগরতলের ভূস্তরে গ্রন্থিত হয় ইতিহাস।

মাটির নমুনা সংগ্রহ করার পর বিজ্ঞানীরা সেসব মৃত প্লাঙ্কটনের ফসিল পরীক্ষা করে অক্সিজেন আইসোটোপ বিশ্লেষণ করেছেন। তাতে ওই সময়ের পানির লবণাক্ততার পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে।

দেখা গেছে, বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি, বরফ স্তর কমে আসার পর মৌসুমি বায়ুতে আর্দ্রতা বাড়তে শুরু করে এবং তারপর আসে সেই অতি বৃষ্টি আর সাগরের পানিতে লবণাক্ততা কমে আসার পর্ব।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের কর্মকাণ্ড বাতাসে গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ যেভাবে বাড়িয়ে চলেছে, তাতে মৌসুমি বায়ুতে সেরকম আরেকটি পরিবর্তন আসন্ন।

এ গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ব্রাউন ইউনিভার্সিটির আর্থ, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস এর অধ্যাপক স্টিভেন ক্লেমেন্স।

তিনি বলেন, “গত ১০ লাখ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে যাওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষা মৌসেুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যায়। ফলে জলবায়ু মডেলগুলোর যে পূর্বাভাস আমরা এতদিন পেয়ে আসছি, তার সঙ্গে লাখো বছরের প্রবণতা দারুণভাবে মিলে যাচ্ছে।”

জার্মানির পোস্টড্যাম ইনস্টিটিউটের ক্লাইমেট ডাইনামিকসের অধ্যাপক অ্যান্ডার্স লিভারম্যান নতুন এ গবেষণায় যুক্ত না থাকলেও মৌসুমি বায়ু নিয়ে বিভিন্ন মডেল ধরে গবেষণা করেছেন এর আগে।

লিভারম্যান বলছেন, জলবায়ু মডেল ধরে তাদের পূর্বাভাসকেন্দ্রিক গবেষণার সঙ্গে নতুন এ গবেষণার ফলাফল মিলে যাওয়ায় তিনি স্বস্ত্বি পাচ্ছেন, কারণ তাদের চেষ্টা ভুল পথে যায়নি।

“এবারের গবেষণায় যে বিপুল তথ্য এসেছে, সেটা অসাধারণ। পৃথিবীর ইতিহাসের লাখ লাখ বছরের কথা বলছে এসব তথ্য। প্রকৃতির যে নিয়ম আমরা প্রতিদিন দেখছি, তা ওই ভূস্তরে স্পষ্ট ছাপ রেখে যাচ্ছে।”

আর এই ঘটনাপ্রবাহ যে ভারতীয় উপমহাদেশের বাসিন্দাদের জন্য দুর্দিন নিয়ে আসছে, সে বিষয়েও নিশ্চিত এই গবেষক।

তিনি বলছেন, সাম্প্রতিক বর্ষ মৌসুমগুলোতে বৃষ্টির আর ক্ষতির পরিমাণ এমনিতেই বেড়ে গেছে। কিন্তু ভবিষ্যতের যে ঝুঁকি তারা দেখতে পাচ্ছেন, তা হবে বিপর্যয়কর। তাছাড়া ঋতু বৈচিত্র্য যেভাবে পাল্টে যাচ্ছে, তাতেও প্রাণ ও প্রতিবেশের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।

অধ্যাপক স্টিভেন ক্লেমেন্স এবং তার সহযোগী গবেষকরা সাগরতলের মাটির নমুনা সংগ্রহ করতে দুই মাসের একটি অভিযানে অংশ নেন। এ কাজে তারা ব্যবহার করেন তেলকূপ খননের কাজে ব্যবহৃত জাহাজ জয়েডস রেজুলেশন, যেটি গবেষণার জন্য বদলে নেওয়া হয়েছে।

২০১৪ সালের নভেম্বরে ১০০ ক্রু এবং ৩০ জন বিজ্ঞানীকে নিয়ে অভিযান শুরু করেছিল জাহাজটি। সাগর তলের মাটি খুঁড়ে সে সময় সংগ্রহ করা নমুনা বিশ্লেষণ করেই বিপুল এই তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেছেন ক্লেমেন্সদের দলটি।

তিনি বলেন, “বহু বছর ধরে আমরা এর পেছনে লেগে আছি। ভালো লাগছে, এসব তথ্য এখন আমরা প্রকাশ করতে পারছি।”

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!