হাওর ডেস্ক::
সৌদি আরবে যাওয়ার পর বাংলাদেশী শ্রমিকদের নিজ খরচে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন থেকে অব্যাহতি দেয়ার ব্যাপারে সৌদি সরকারের সাথে কথা বলছে বাংলাদেশ সরকার। যাওয়ার আগে দেশেই শ্রমিকদের কোয়ারেন্টিনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সৌদি আরব ঘোষণা করে যে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকদের সেখানকার সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজ খরচে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
মহামারির কারণে এমনিতেই আর্থিক অনটনে থাকা বহু শ্রমিককে এখন কোয়ারেন্টিন প্যাকেজের জন্য বাড়তি ৮০ হাজার টাকার মত খরচ করতে হচ্ছে। যা তাদের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেভাবে টাকা যোগাড় করছেন শ্রমিকেরা
নোয়াখালীর ইমরান হোসেন চার বছর পর সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছিলেন। করোনাভাইরাসের কারণে কাজ হারিয়েছেন তিনি, তবুও বুরাইদা আল কাসিম শহরে ফিরে যাওয়ার জন্য তার রিটার্ন টিকেট কাটা ছিল। হঠাৎ করেই তাতে বাড়তি যোগ হয়েছে সৌদি আরবে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের খরচ।
গতকালই সেখানকার সরকার নির্ধারিত একটি তিন তারা হোটেলে কোয়ারেন্টিন শেষ করে বের হয়েছেন ইমরান হোসেন।
তিনি বলছেন, নিজ খরচে কোয়ারেন্টিনে থাকা তার জন্য অনেক বড় বোঝা। তিনি জানিয়েছেন, “হঠাৎ করে শোনার পর মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার করতে হইছে। এখানে আসছি পনের দিন হল এখনো কোন কাজ নাই। কাজ আছে ধরেন একটা আর তার জন্য বিশটা লোক চেষ্টা করছে। এখানে মালিকরা কাজে নিচ্ছে না। আবার কাজ করিয়ে টাকা দিচ্ছে না।”
“করোনাভাইরাস শুরুর পর থেকে এই অবস্থা। চাকরি নাই – এই অবস্থায় এত টাকা কোথা থেকে শোধ করবো, সেটাই বুঝতে পারছি না।”
প্রবাসী শ্রমিক
ছুটিতে দেশে এসে বহু শ্রমিক গত বছর কাজে ফিরে যেতে পারেননি।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী দেখা দেয়ার পর অনেক বড় বিপর্যয় নেমে এসেছে বাংলাদেশের অভিবাসন খাতে। বহু শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন অথবা নানা বিধিনিষেধের কারণে কাজে ফিরে যেতে পারেননি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আক্তার হোসেন ১৮ বছর ধরে সৌদি আরবে কাজ করেন। দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে ছোট ভাইয়ের জন্য এর মধ্যেও কাজ যোগাড় করেছেন। এ সপ্তাহেই তার রিয়াদে পৌঁছানোর কথা।
আক্তার হোসেন বলছিলেন, “কোয়ারেন্টিন প্যাকেজের জন্য খরচ পরেছে ৭৫ হাজার টাকা। আর টিকেট সহ সব মিলিয়ে খরচ প্রায় দুই লাখের মতো পরেছে। আমি বেতন পাই ১৩ শ রিয়ালের মতো। ভাইয়ের কোয়ারেন্টিনের জন্য মালিকের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছি। প্রতি মাসে বেতন থেকে কেটে নেয়া হবে।”
কোয়ারেন্টিনে অর্থ যোগাড় করতে না পরে সৌদি আরব যেতে পারেননি এমন ঘটনাও রয়েছে।
‘কোয়ারেন্টিনের অর্থ মালিকের দেয়া উচিৎ’
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য মতে, গত বছর করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর পর চাকরি হারিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ অভিবাসী কর্মী বাংলাদেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যাটি আরও বেশি বলা হয়।
এছাড়া যারা বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিলেন, প্রক্রিয়া শেষ করে অপেক্ষায় ছিলেন, লকডাউন এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়ার পর তারাও দেশ ছাড়তে পারেননি।
আগে যেখানে প্রতিবছর সাত থেকে আট লাখ শ্রমিককে বিদেশে পাঠানো হতো, সেখানে গত বছর বিদেশে কাজে যেতে পেরেছেন মোটে দুই লাখের মতো মানুষ।