স্টাফ রিপোর্টার, তাহিরপুর::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে এক ফসলহারা কৃষকের চাল কেনার টাকা জোরপূর্বক আদায় করতে গিয়ে লঙ্কাকা- ঘটেছে। পাওনাদারের লোকজন কৃষকের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করতে গেলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে পুুলিশ মারমুখি থাকায় প্রত্যক্ষদর্শী ও শালিসকারীরাও আহত হয়েছেন। গুরতর আহত ৩ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্যদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে উভয় পক্ষকে নিবৃত্ত করতে প্রায় ২০ রাউন্ড ফাকা গুলি (শটগানের গুলি) নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলা শহরের চাল ব্যবসায়ী রতনশ্রী গ্রামের এনামুল হকের কাছ থেকে ভাটি তাহিরপুর গ্রামের ফসলহারা কৃষক ছুরত আলম কিছুদিন আগে ৫০০ টাকার চাল ক্রয় করেন। প্রায় ৬ একর জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তিনি এনামুল হকের টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না। গত মঙ্গলবার ছুরত আলম বাজারে আসলে এনামুল হক তাকে জোরপূর্বক ঘরে তুলে নিয়ে টাকা দেওয়ার চাপ দেন। তিনি অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে হাত বেঁধে শারিরিকভাবে লাঞ্চিত করা হয়। এ নিয়ে মঙ্গলবার রাতে উভয়ের আতœীয়-স্বজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে বুধবার সকালে ছুরত আলমের চাচাতো ভাই মুজিব নূর, আবদুল আউয়াল ও ওয়াহাদ নূর বাজারে আসলে এনামুল হকের লোকজন তাদেরকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। স্থানীয় লোকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। এদিকে প্রকাশ্যে বাজারে তিনজনকে বেধড়ক পেটানোয় ছুরত আলমের আতœীয় স্বজনদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনও ক্ষুব্দ হয়ে উঠেন। এসময় পুলিশ উত্তেজিত লোকদের নিবৃত্ত করতে লাঠিচার্জ ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে। পুলিশ প্রায় অর্ধ শতাধিক ফাঁকা গুলি ছুড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। পুলিশের শর্টগানের গুলিতে বাজার এলাকার আলমগীর খোকনের স্ত্রী বাবলি বেগম (৩৫) ও বাজারের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের শিশুপুত্র রাহাত (৫) আহত হন। এছাড়াও অন্যান্য আহতদের সুনামগঞ্জ সদর ও তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে পুলিশের মারমুখি ঘটনায় তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবরে বুধবার বিকেলে লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনে তিনি তাহিরপুর থানার এসআই রফিক, কনেস্টেবল আবুল কাশেম এবং কঙ্কন দাসের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতনের অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর বলেন, এক কৃষকের পাওনা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রায় ২০ রাউন্ড ফাকা গুলি ছুড়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. বরকত উল্লাহ খান বলেন, কৃষকের কাছে পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে ব্যবসায়ী তাকে বেঁধে রেখেছিল বলে শুনেছি। এতে তার আতœীয়-স্বজনরা ক্ষুব্দ হলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রায় ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে পুলিশ মারমুখি হওয়ার অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা অভিযোগ করেছেন বলে তিনি জানান।