হাওর ডেস্ক ::
করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ও মৃত্যুরোধে সরকারঘোষিত কঠোর লকডাউনের আজ (৩১ জুলাই) নবমদিন পালিত হচ্ছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু হ্রাসের কোনো লক্ষণ নেই। গত কয়েকদিন ধরে দেশে গড়ে দুই শতাধিক করোনা রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউনের মেয়াদ আরো বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
আগামী ৫ আগস্টের পরও দুই সপ্তাহ কঠোর বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সুপরিশে ৫ আগস্টের পর আরো ১০ দিন লকডাউন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বৈঠকে চলমান বিধিনিষেধ আরো ১০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছি। যদিও এ ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।’
খুরশীদ আলম বলেন, ‘যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, আমরা কিভাবে এই সংক্রমণ সামাল দেবো? রোগীদের কোথায় জায়গা দেবো? সংক্রমণ যদি এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে কি পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব? অবস্থা খুবই খারাপ হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এসব বিবেচনাতেই আমরা বিধিনিষেধ বাড়ানোর সুপারিশ করেছি।’
তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘জীবন-জীবিকার সমন্বয় করে’ কিছু বিষয় শিথিল করে বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সরকার রপ্তানিমুখী সব শিল্প ও কলকারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামীকাল রবিবার (০১ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে এসব কারখানা বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত থাকবে। গতকাল শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের এই সময়ে বিধিনিষেধ তুলে দিলে পরিস্থিতি আরো ভয়ংকর হতে পারে। এর পরও রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া হচ্ছে। এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বিষয়টি কঠোর নজরদারির আওতায় রাখতে হবে। না হলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
এর আগে গত ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ দিন জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাধার মুখে পড়ে। অনেক কম্পানি ক্রয় আদেশ হারায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর নেতারা রপ্তানিমুখী বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা কয়েক দফা মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন। গত বৃহস্পতিবারও তারা সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
অনেকটা বাধ্য হয়েই রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে তৈরি পোশাক, চামড়া, পাট ও পাটজাত পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত ও হিমায়িত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, বাইসাইকেল, কেমিক্যাল প্রডাক্টস, ওষুধ, প্রকৌশলী যন্ত্রাংশ, কাগজ ও কাগজ পণ্য, হ্যান্ডি ক্রাফটস, রাবার ও কার্পেট খাতের শিল্পকারখানা খোলা থাকবে। পাশাপাশি এসব খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কারখানা খোলা রাখা যাবে। কঠোর লকডাউন শুরুর আগেই খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, চামড়া প্রক্রিয়াজাত, ওষুধ ও করোনা সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনকারী কারখানা বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তা অব্যাহত থাকবে।
শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণার পর গতকালই গ্রাম থেকে মানুষের ঢাকামুখী ঢল নেমেছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সড়ক-মহাসড়কেও যানবাহন চলাচল বেড়েছে। আজও একই ধারা অব্যাহত আছে।
জরুরি প্রয়োজন ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া হলেও সেগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। অন্যথায় সামনে মহাবিপদ অপেক্ষা করছে বলে সতর্ক করেছেন তাঁরা।