হাওর ডেস্ক::
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ‘বাস্তুচ্যুত’। বাংলাদেশের বিবেচনায় তারা শরণার্থী নয়। এ কারণে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে শরণার্থীনীতি সংস্কার নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের প্রস্তাবিত রূপরেখা প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ সরকার। শরণার্থী বিবেচনার রূপরেখার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্থায়ী করার সুপারিশ আছে। বিশ্বব্যাংক তাদের প্রস্তাবনা প্রতিবেদনে দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছে। তবে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশও চায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফেরত যাক।
রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের নীতি প্রযোজ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল সোমবার তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বাংলাদেশের বিবেচনায় রোহিঙ্গারা ‘শরণার্থী’ না হওয়ায় তাদের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনের বিষয়গুলো প্রযোজ্য নয়। আমরা যে রোহিঙ্গাদের রেখেছি, তারা আমাদের সংজ্ঞাতে শরণার্থী না। তারা হচ্ছে নির্যাতিত ও বাস্তুচ্যুত জনগণ, আমরা কিছুদিনের জন্য তাদের এখানে আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের অগ্রাধিকার ইস্যু হচ্ছে তারা ফিরে যাবে।’ মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারও বলেছে, তাদের নিয়ে যাবে। চার বছর হলো যায়নি; তারা কিন্তু কখনো বলেনি, নেবে না। সুতরাং এরা সাময়িকভাবে আশ্রয় নেওয়া লোক। এখানে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। তারা শরণার্থী না।’
শরণার্থীদের আশ্রয়দাতা দেশে নাগরিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করাসহ একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাবসহ ’রিফিউজি পলিসি রিফর্ম ফ্রেমওয়ার্ক’ নামে ১৬টি দেশের শরণার্থী ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিশ্ব ব্যাংক। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা কার্যালয় থেকে ফ্রেমওয়ার্কের বিষয়ে মতামত চেয়ে জুনের ৩০ তারিখ অর্থমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হয়। প্রতিবেদনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, কাজ করা, চলাফেরা, জমি কেনা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হওয়াসহ সব ধরনের আইনি অধিকার শরণার্থীদের দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই রিপোর্টট যেহেতু প্রথমত এরা (রোহিঙ্গারা) শরণার্থী না, আমরা পুরোপুরি রিজেক্ট করেছি। যদি এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, দুই হাজার কোটি টাকার যে তহবিল তৈরি করেছে, সেখান থেকে এদের জন্য কিছু টাকা দেবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের সঙ্গে বাংলাদেশের চিন্তাভাবনার মোটেও মিল নেই। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, এদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য রিইন্টিগ্রেট করতে হবে, সমাজের সঙ্গে। আমরা বলেছি, তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তাদেওকে তাদের দেশে ফেরত যেতে হবে। এটাই একমাত্র বিষয়। আপনারা সে ব্যাপারে কাজ করেন।’
গত কয়েক দশকে মিয়ানমারে দমন-নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছিল কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের গ্রামে গ্রামে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ শুরু করলে আরো সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গার ঢল বাংলাদেশ আসে। মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিলেও রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহে তা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়। রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ না থাকার কথা তুলে ধরতে রাজি হয়নি এই শরণার্থীরা।