বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও যুবলীগ নেতা অরিন্দম চৌধুরী অপুর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পুলিশের এসল্ট মামলা নতুন মোড় নিয়েছে। গত ১১ আগস্ট ডিআইজি অফিসের পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা শাল্লায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় পরিদর্শন দলকে একটি ভিডিওর কথা জানানো হয় তাকে। ওই ভিডিওতে প্রত্যক্ষদর্শী নৌকার মাঝির বক্তব্য রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ওই ভিডিও রেকর্ডে নৌকার মাঝি বলেছেন, নৌকা থেকে নামতে গিয়ে শাল্লা থানা থেকে সদ্য প্রত্যাহারকৃত এসআই শাহ আলী হোচট খেয়ে আঘাত পেয়ে আহত হন। পরে তিনি এ ঘটনায় তার উপর হামলা হয়েছে উল্লেখ করে পূর্ববিরোধের জেরে অপুসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ১৩ জুলাই এ ঘটনায় অপুকে গ্রেপ্তারের পর গত ৮ আগস্ট তিনি জামিন মুক্তি পান। জুলাই মাসের শেষ দিকে এসআই শাহ আলীকে প্রত্যাহার করা হয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে অরিন্দম চৌধুরী অপু গত ১৭ মার্চ শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন। এ কারণে এলাকার ১১ জন সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি তাকে হুমকি ধমকি দিলে তার ছোট ভাই এডভোকেট অমিতাভ চৌধুরী রাহুল শাল্লা থানায় লিখিত ডায়েরি করেন। সাধারণ ডায়েরিটি নিতে টালবাহানা করেন এসআই শাহ আলী। এক পর্যায়ে অপুর ভাই পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি সাধারণ ডায়েরি নিতে বাধ্য হন এবং ডায়েরির তদন্ত তাকে দেওয়া হয়। এরপর এসআই শাহ আলী সাধারণ ডায়েরি তুলে নিতে সাম্প্রদায়িক শক্তির হয়ে অপুর পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করলে তারা পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে মৌখিক নালিশ করেন। এ ঘটনায় এসআই শাহ আলীকে শোকজ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন এডভোকেট অমিতাভ চৌধুরী রাহুল। এরপর থেকেই অপু ও তার পরিবারের প্রতি ক্ষুব্দ ছিলেন এসআই শাহ আলী বলে অভিযোগ করেন অপুর পরিবারের লোকজন।
জানা গেছে গত ১৩ জুলাই ওসির চার্জে ছিলেন এসআই শাহ আলী। ওই রাতে তার উপর অপুসহ ৫ জন হামলা করেছে বলে তিনি থানায় মামলা করেন। রাত সাড়ে তিনটায় ঘুমন্ত অপুকে জাগিয়ে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ ঘটনায় এসআই আল মামুন মাদক আইনে অপুসহ দুজনের বিরুদ্ধে আরেকটি পৃথক মামলা দায়ের করেন। বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পুলিশ এসল্ট মামলা দেওয়ার ঘটনায় অপুর পক্ষে সিলেট বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন এবং শাল্লায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৯ জুলাই মামলাটিকে ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যায়িত করে এসআই শাহ আলীর বিরুদ্ধে ডিআইজি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে শাল্লা নাগরিক মঞ্চ। এরপর শাল্লা থেকে এসআই শাহ আলীকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জে নিয়ে আসা হয়।
এদিকে এ ঘটনার তদন্তে গত ১১ আগস্ট শাল্লা থানায় আসেন ডিআইজি অফিসের পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা। এসময় তাকে শাল্লা উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের নৌকা চালক মনির মিয়ার একটি ভিডিও বক্তব্যের বিষয়টি জানানো হয়। এই বক্তব্যটি এই প্রতিবেদকের কাছে এসে পৌঁছেছে। ভিডিওতে মনির মিয়া জানান, গত ১৩ জুলাই রাতে কলেজ রোডের নৌকা ঘাট থেকে কয়েকজন পুলিশ নিয়ে ঘুরাঘুরি করেন এসআই শাহ আলী। দেড় ঘন্টা তারা হাওরে নৌকায় ঘুরেন। পরে তাকে বাসায় দিয়ে আসার জন্য মনির মিয়া ডুমরায় নৌকা নিয়ে আসেন রাত সাড়ে ১২ টার দিকে। এসময় নৌকা থেকে নামতে গিয়ে হোচট খেয়ে আঘাত পান শাহ আলী। পরে বাসার মালিকের ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মাঝির এই বক্তব্যে আলোচিত এ ঘটনার মোড় ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। তারা শুরু থেকেই মামলাটিকে ষড়যন্ত্রমূলক বলে আখ্যায়িত করে আসছেন।
এদিকে অরিন্দম চৌধুরী অপুকে ঘটনার দিন রাতে গ্রেপ্তারের পরই তার মোবাইল ফোন নিয়ে যায় থানা পুলিশ। ৮ আগস্ট মুুক্তির পরে তার মোবাইল ফোন পরিবারকে দেওয়া হয়। তবে মোবাইল হাতে নিয়ে ফেইসবুক, ইমেইল ব্যবহার করতে পারছেননা তিনি। থানায় থাকা অবস্থায় তার ফেইসবুক আইডি ও মেইল আইডির পাসওয়ার্ড বদলে ফেলা হয়েছে বলে তার পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেছেন। গত ৯ আগস্ট তার ও শাল্লা থানার ওসি মো. নূর আলমের একটি এডিট অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার পায়। ওই অডিও রেকর্ডের কণ্ঠ এসআই শাহ আলীর মামলার জনৈক স্বাক্ষীর বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। অপুকে নতুন করে ফাঁসাতে এই এডিট অডিও প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজন।
এডভোকেট অমিতাভ চৌধুরী রাহুল বলেন, আমাদেরকে এলাকাবাসী প্রথমেই বলেছিলেন এসআই শাহ আলী হোচট খেয়ে আঘাত পেয়েছিলেন। আমার ভাইয়ের প্রতি ক্ষুব্দ থাকায় এলাকার আমাদের পরিবারের বিরোধীদের সঙ্গে আতাত করে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করেছিলেন তিনি। এখন নৌকা চালকের ভিডিও সামনে আসায় বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ফেঁসে যাবার ভয়ে তিনি আমার ভাইয়ের কণ্ঠ তার মামলার স্বাক্ষীকে দিয়ে অডিও ক্লিপ ভাইরাল করিয়েছেন। আমরা এই হয়রানি থেকে রেহাই চাই।
এসআই শাহ আলী বলেন, ‘আমি বাইরের মানুষ। তারা সবাই ধরে যদি নিজ এলাকার কাউকে ভিডিও রেকর্ড করে স্বাক্ষী দেওয়ায় তাহলেতো আমার কিছু বলার নাই। তাছাড়া ফাঁস হওয়া এডিট অডিও বিষয়েও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।’
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ মামলায় উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছেন। গত ১১ আগস্ট একটি টিম সরেজমিন এসে কথা বলে গেছে। এ সংক্রান্ত কয়েকটি অডিও বের হইছে। সেটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছেনা কার। যার কারণে বিষয়টি নিয়ে আমরা মাথা ঘামাচ্ছিনা। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে আমরা ব্যবস্থা নেব।
সিলেট ডিআইজি অফিসের পুলিশ সুপার (এএন্ডএফ) জেদান আল মুসা বলেন, আমরা এ ঘটনায় শাল্লা থানা পরিদর্শন করেছি। তবে তদন্তাধীন বিষয়ে কিছু বলতে চাইনা।