1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৮ অপরাহ্ন

যে পাঁচ কারণে তালেবান নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব

  • আপডেট টাইম :: সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০২১, ১০.১৩ পিএম
  • ২০৬ বার পড়া হয়েছে

হাওর ডেস্ক::
রবিবার রাত থেকে তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের ক্ষমতা। তার আগে আফগানিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবানের আগ্রাসী অভিযানের মুখে প্রায় নিরবে হার মেনেছে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জোটের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া আফগান সেনারা।

রাজধানী কাবুলসহ দেশের বড় ও প্রধান শহরগুলো দখলে কোনোরকম বাধার মুখেই পড়তে হয়নি তালেবান যোদ্ধাদের।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের সামরিক হস্তক্ষেপে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ছয় বছর আফগানিস্তান শাসন করেছে তালেবান। পুরো সময় ইসলামের বিধানের নামে কঠোর বিধিনিষেধ আর কট্টোর শাসন চাপিয়ে দেয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ ছিল ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক গোষ্ঠীটির ভূমিকা। দীর্ঘ ২০ বছর পর আবার তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন সারা বিশ্ব। কিন্তু কেন? বিষয়টি উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এনপিআরের একটি প্রতিবেদনে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে আফগানিস্তান :

যে কায়দায় গত ১০ দিনে রাজধানী কাবুলসহ বিভিন্ন প্রদেশ দখল করেছে তালেবান, তাতে স্পষ্ট যে, ২০ বছর আগের আর বর্তমানের তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য খুব একটা নেই।

অতীতে নারীদের শিক্ষাগ্রহণের অধিকার প্রত্যাখ্যান, বিরোধী মতাদর্শীদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর, শিয়া হাজারাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন ও বামিয়ানে অমূল্য প্রাচীন পাথুরে বুদ্ধ মূর্তি ধ্বংস করে দেয়াসহ নানা কারণে সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিল তালেবান।

যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত হোসেন হাক্কানির মতে, এবারও যে তালেবান মানবিক মূল্যবোধের প্রশ্নে নতুন করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের চক্ষুশূল হবে না, তা ভাবার কোনো কারণ নেই।

এ পর্যন্ত আফগানিস্তের যেসব অঞ্চল তালেবান পুনর্দখল করেছে, সব জায়গা থেকেই কমবেশি হত্যাকাণ্ড, নারী নির্যাতন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা শোনা যাচ্ছে। হাসপাতালসহ বিভিন্ন অবকাঠামো বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগের কথা জানান হাক্কানি।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের শাসনামলে আফগানিস্তানে নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূত রোনাল্ড নিউম্যান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ভরসা রাখা লাখ লাখ আফগান হঠাৎ আবিষ্কার করেছেন যে তারাই তালেবানের পরবর্তী লক্ষ্য। কারণ গত বছর থেকেই এমন অনেক মানুষ তালেবানের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন।’

উগ্রবাদীদের নিরাপদ চারণক্ষেত্র হতে পারে আফগানিস্তান :

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারসহ কয়েকটি জায়গায় সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ যায় হাজারো মানুষের। হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ওসামা বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তরে আফগানিস্তানের তৎকালীন শাসক দল তালেবানকে অনুরোধ করেছিল ওয়াশিংটন।

বিন লাদেন আফগানিস্তানে আত্মগোপনে বলে দাবি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের বুশ সরকার। যদিও পরবর্তীতে ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সেনা অভিযানে বিন লাদেন নিহত হন পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়।

যেখানে দীর্ঘদিন ধরেই তালেবান, আল কায়েদাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে।

আঞ্চলিক সংকটগুলো বিদ্যমান থাকা অবস্থায় গত কয়েক মাস ধরেই নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সতর্ক করছিলেন যে, শান্তিচুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও বিদেশি সেনাদের ওপর আক্রমণ করুক বা না করুক, কিন্তু তালেবানশাসিত আফগানিস্তান আবারও সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ স্বর্গ হয়ে উঠতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেটা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘তালেবান সন্ত্রাসী এবং তারা সন্ত্রাসীদের সমর্থন দিয়ে যাবে। আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ার পর আল কায়েদা, ইসলামিক স্টেটসহ সব ধরনের সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ স্বর্গ তৈরি করবে তারা। আর এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তায় অব্যাহত হুমকি হয়ে থাকবে গোষ্ঠীটি।’

জাতিসংঘে নিযুক্ত আফগানিস্তানের প্রতিনিধি গোলাম ইসাকজাইয়েরও একই মত। সম্প্রতি তিনিও এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বিভিন্ন সন্ত্রাসীচক্রের সহযোগিতা তালেবানও বরাবর পেয়ে এসেছে।’

তীব্র হবে শরণার্থী সংকট :

বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ শরণার্থী গোষ্ঠী আফগানিস্তানের। ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশটিতে অভ্যন্তরীণ শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ২৯ লাখ। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি গৃহহীন হয়েছে আরও চার লাখ মানুষ।

প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে আগে থেকেই পাকিস্তান ও ইরানে আশ্রয় নিয়ে আছে ২৫ লাখের মতো আফগান শরণার্থী। সাম্প্রতিক সহিংসতায় প্রাণ বাঁচাতে পালানো বেসামরিক আফগানদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে পাকিস্তান, তাজিকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ।

এ ছাড়া ভারত ও ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশে বিভিন্ন সময় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে লাখখানেক আফগান।

আফগানিস্তানে তালেবান শাসকদলের অতীত বর্বরতা অব্যাহত থাকলে আবারও দেশটি অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংকটের কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা ঘনিয়ে উঠছে।

পাকিস্তানও হতে পারে অস্থিতিশীল :

প্রচলিত ধারণা অনুসারে, ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তান দখলে তালেবানকে সহযোগিতা করেছিল পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। প্রতিবেশি ও প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে লড়াইয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ধর্মীয় ও আদর্শগত মিল থাকা আফগানিস্তানকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা করছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে আবার আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দেশ দুটির মধ্যে কূটনীতি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না কখনোই।

বছরের পর বছর ধরে জালোজাইয়ের মতো বিভিন্ন সীমান্ত শিবিরে লাখ লাখ আফগান শরণার্থী রয়েছে পাকিস্তানের আশ্রয়ে। অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশটিতে এত বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর বোঝা ইসলামাবাদে রাজনৈতিক অস্থিরতারও বড় কারণ।

তালেবানের পাকিস্তান শাখা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের উত্থানের পেছনে রয়েছে আফগান তালেবানের হাত।

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক গবেষক মাদিহা আফজাল লেন, ‘সংগঠন দুটির নেতাদের মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্য ও লক্ষ্যের ভিন্নতা আছে ঠিকই, কিন্তু আফগানিস্তানে তালেবানশাসিত সরকার থাকলে তাতে পাকিস্তানি তালেবানও লাভবান হবে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।’

হাডসন ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক পরিচালক হোসেন হাক্কানি ফরেইন অ্যাফেয়ার্সে লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের সমাজে আগে থেকেই সাম্প্রদায়িক বিভক্তি রয়েছে। এর উপর যোগ হয়েছে ইসলামিক উগ্রবাদ। কট্টর ইসলামপন্থিরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় গেলে তা পাকিস্তানের উগ্রবাদীরাও আরও সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাবে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার পাশাপাশি তালেবানকে সহযোগিতা করার যে দ্বিমুখী খেলায় মেতে উঠেছে পাকিস্তান সরকার, তা ঝুঁকিপূর্ণ এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’

চীনের আঞ্চলিক আধিপত্য তৈরির সুযোগ :

২০ বছর আগের তালেবানের সঙ্গে বর্তমান তালেবান সামান্য পার্থক্যের একটি হলো- বর্তমানে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় আগ্রহী দেশটি। গত কয়েক সপ্তাহে তালেবান নেতারা দেশের বাইরের মিত্রদের সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হয়েছে, যার প্রভাবও দৃশ্যমান।

নব্বইয়ের দশকের তালেবান শাসকদল শুধু পাকিস্তান, সৌদি আরব সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বীকৃতি পেতে সক্ষম হয়েছিল। অন্য কোনো দেশের ন্যূনতম সমর্থন না থাকায় বহির্বিশ্বে কোণঠাসা ছিল তৎকালীন তালেবানশাসিত আফগানিস্তান।

গত কয়েক সপ্তাহে তালেবান নেতারা ইরান, রাশিয়া আর চীন সফর করেছেন। এরই মধ্যে আফগানিস্তানে জ্বালানি আর অবকাঠামোগত বিভিন্ন প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছে চীন। এসব প্রকল্পের মধ্যে আছে আফগানিস্তানে উন্নত সড়ক যোগাযোগ গড়ে তোলাও।

অন্যদিকে, বিরল সব খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এখনও হাত পৌঁছায়নি কারো। সেদিকেও নজর রয়েছে বেইজিংয়ের।

সব মিলিয়ে আফগানিস্তানের তালেবানশাসিত সরকারকে বেইজিং যে কোনো সময় স্বীকৃতি দিতে পারে বলে গুঞ্জন জোরালো হচ্ছে বিশ্ব রাজনীতিতে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এশিয়াবিষয়ক প্রকল্প পরিচালক লরেল মাইলার বলেন, ‘পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর স্বীকৃতির পাশাপাশি আঞ্চলিক বৈধতা পেতেও তৎপরতা শুরু করেছে তালেবান।

শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেবে না বলে আগেই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় আফগানিস্তানের যে কোনো বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খর্ব করতে চীন-রাশিয়ার মতো শক্তিধর দেশগুলোকে পাশে পাওয়ারও চেষ্টা করছে তালেবান।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!