তমাল পোদ্দার, ছাতকঃ
দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব থেকেই এ অঞ্চলের লোকজনের যাতায়াতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল ছাতকের ট্রেন। গত বছরের ২৪ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেনটি। করোনা ভাইরাসের কারনে এ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু এখন ট্রেন চলাচল চালু হলেও এ রেলপথে রয়েছে বন্ধ। ওই কারনে যাত্রী চলাচলে গুনতে হচ্ছে অধিক ভাড়া। একজন যাত্রীর সড়ক পথে সিলেট যেতে গাড়ী ভাড়া লাগে ৮০-১৩০ টাকা। আর রেলপথে ছাতক বাজার স্টেশন হতে ভাড়া ১২ টাকা। তাই স্বল্প ভাড়া আর আরামদায়ক ভ্রমণ হিসেবে সাধারণ যাত্রীদের ট্রেনই ভরসা। বুধবার (১৮ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছাতক বাজার রেলস্টেশনের প্রতিটি কক্ষ রয়েছে তালাবদ্ধ। পুরো এলাকা জুড়ে ঝোপঝাড় আর যত্রতত্র ময়লা আবর্জনায় যেন বাসা বেধেছে। ট্রেন বন্ধ থাকায় এ স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত থেকে শুরু করে কেউই আসেন না। মাঝে মাঝে মালবাহী ট্রেন যাতায়াতের সময় একজন কর্মচারী এসে তদারকি করে আবার চলে যায়। রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাত ছাতকে রেলপথ স্থাপিত হয় ১৯৫৪ সালে। দেশের পূর্বাঞ্চলের এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন ছিল ছাতক বাজার রেলস্টেশন। প্রায় ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটি তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী উদ্ভোধন করেন। শুরুতে এ স্টেশন থেকেই আন্তঃনগর সার্ভিস ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্রেন যাতায়াত করতো। প্রতিদিন এখান থেকে চারটি ট্রেন সিলেটে যাতায়াত করতো। এছাড়া মালবাহী ৪টি ট্রেনে সিমেন্ট, পাথর, চুনাপাথর, তেজপাতা ও কমলাসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল কম খরচে পরিবহন করা হতো। ১৯৮২ সালে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, আয় ও অন্যান্য অর্জনের দিক দিয়ে দেশের মধ্যে সর্বোত্তম রেলস্টেশন হিসেবে এটি স্বীকৃতি অর্জন করে। রেলপথে এ অঞ্চলের পন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করে আয়ের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মধ্যে কয়েকবার প্রথম স্থান অধিকারের গৌরব অর্জন করে। শুরুতে ছাতক থেকে সিলেটে একজন যাত্রীর ভাড়া ছিল চার আনা। বর্তমানে ভাড়া ১২ টাকা। এ হিসেবে রেলপথে যাত্রীদের যাতায়াত বাড়তে থাকে। আগের তুলনায় ট্রেনের গতিও বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বল্প ভাড়ার যাতায়াত বাহন হিসেবেই আজো সাধারণ লোকজন ট্রেনকে বেঁচে নেয়। রেলপথে নিয়মিত যাত্রী শহরের সমর কর ও সালাউদ্দিন জানান, ট্রেন বন্ধ থাকায় এখন তাদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়। তাদের মতো অনেকেই সড়কপথে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে এখন সিলেট যাতায়াত করছেন। ছাতকবাজার রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার আবু নাসের মোঃ রাসেল বলেন, কবে ট্রেন চালু হবে এ বিষয়টি তার জানা নেই। দ্রুত ট্রেন চালু করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন এ অঞ্চলের ভুক্তভোগী যাত্রী সাধারণ।