বিশেষ প্রতিনিধি ::
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে বন্ধ ছিল দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। দীর্ঘদিন পর পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ায় বিশ্ব ঐতিহ্য খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের মিছিল শুরু হয়েছে। পর্যটকদের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যটকবাহী নৌকার সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে নৌকা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে পর্যটকরাও টাঙ্গুয়ার হাওরের সংরক্ষিত এলাকা প্রবেশ করে প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনষ্ট’ আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয় জীববৈচিত্রের আদার ও মাদার ফিশারিজ খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরকে। ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বের ১ হাজার ৩১ টি রামসার সাইটের মধ্যে এ হাওরকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট ঘোষণা করা হয়। হাওরবাসীর আর্থ সামাজিক পরিবর্তন, সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ২০০১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবার পর ২০০৩ সালের ৯ নভেম্বর থেকে সরকারি-বেসরকারিভাবে সংরক্ষিত হয়ে আসছিল। ২০১৭ সাল থেকে এখন অরক্ষিত আছে হাওরটি। ব্যবস্থাপনার শুরু থেকেই সংরক্ষণের বদলে সংরক্ষিত এলাকায় পর্যটকদের অবাধ বিচরণের কারণে ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে প্রাণ ও প্রকৃতির। স্থানীয়দের মতে রামসার নীতিমালা অনুসারে সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে হাওরকে পূর্বের প্রাণ ও প্রকৃতির কাছে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হলেও এই দীর্ঘ সময়ে বিনষ্ট হয়েছে হাওরের সম্পদ। এর মধ্যে গত দেড় দশক ধরে সংরক্ষিত এলাকায় পর্যটকদের উৎপাত বেড়েছে। স্পিডবোট, ইঞ্জিন নৌকা, লঞ্চসহ ইঞ্জিন চালিত যানবাহনের শব্দে ও পর্যটকদের ব্যবহৃত বর্জ্য হাওরের জলজ ও স্থলজ বিনষ্ট হচ্ছে বলে পরিবেশ কর্মীদের অভিযোগ। তাই সংরক্ষিত এলাকায় পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয়রা। নাহলে হাওরের প্রকৃতি ও পরিবেশ দিন দিন আরো খারাপ হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে দীর্ঘদিন পর পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারির পর গত বৃহষ্পতিবার বিকেল থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের মিছিল শুরু হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিক ছোট বড়ো পর্যটকবাহী নৌকা হাওরে ঘুরছে অবাধে। এসময় সচেতনতার অভাবে অনেক পর্যটক উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে, প্লাস্টিকের পানির বোতলসহ নানা ধরনের বর্জ্য হাওরে ফেলে দিচ্ছেন। তাছাড়া অনেক নৌকা চালক ও পর্যটক নিয়ে ব্যবসা করেন এমন সংগঠন এ সুযোগে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। প্রশাসন গত বছর টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী নৌকার ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও কেউ তা মানছেনা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ায় বাণিজ্যির কয়েকটি ট্যুারিস্ট গ্রুপ প্যাকেজ দিয়ে পর্যটকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের গ্রাম ইকরামপুরে আব্দুর রশিদ বলেন, বৃহষ্পতিবার বিকেল থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের চাপ বেড়েছে। আমাদের পরিচিত একদল পর্যটক নৌকা ম্যানেজ করতে পারছিলেন না। সবগুলো আগাম বুকিং হয়ে গেছে। পরে অনেক কষ্টে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে আমরা একটি নৌকা ম্যানেজ করে দিয়েছি। তবে শুক্রবার কয়েকশ নৌকা পর্যটক নিয়ে হাওরে প্রবেশ করেছেন। তারা অবাধে ঘুরাঘুরিসহ হাওরের প্লাস্টিকের বোতলসহ নানা জিনিষ ফেলে দিচ্ছেন।
গোলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা খসরুল আলম বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের সংরক্ষিত এলাকায় পর্যটকবাহী অনেক নৌকা নোঙ্গর গেড়েছে। অনেকে উচ্চ ডেসিবলের সাউন্ড ব্যবহার করছেন যা হাওরের পাখ পাখালি ও উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর। হাওরের প্রকৃতি ও পরিবেশ বিবেচনা করে সচেতনভাবে পর্যটন করার দাবি জানাই। একইসঙ্গে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সুবিধাগুলো ব্যবহারের দাবিও জানান তিনি।
তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, বৃহষ্পতিবার থেকে অনেক পর্যটক টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। আমরা সবাইকে পরিবেশের ক্ষতি না করে পর্যটন করার আহ্বান জানিয়েছি। আমাদের এলাকার মানুষের হাতের তৈরি খাবারসহ নানা কিছু ক্রয় করে এলাকার মানুষদের সহায়তার দাবিও জানিয়েছি। একই সঙ্গে প্রশাসন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে নৌ চালকরা যাতে বেশি ভাড়া নিতে না পারেন তার জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে।