হাওর ডেস্ক ::
ইভ্যালিতে দেশের শিল্প গোষ্ঠী যমুনা গ্রুপের ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের যে খবর এসেছিল তা আদৌ চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন যমুনা গ্রুপের একজন কর্মকর্তা।
শুক্রবার (২৭ আগস্ট) যমুনা গ্রুপের পরিচালক (কমার্শিয়াল) শামসুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইভ্যালির সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়েছে। আর্থিক বিবরণী বুঝতে এখনো অডিট চলছে। সেসব কাজ শেষ হওয়ার আগে হ্যাঁ বা না কিছু বলার সময় এখনো আসেনি। আর ইভ্যালির আগের ব্যবসার দায় নিতেও তারা রাজি নন।
বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির পক্ষ থেকে জমা দেওয়া দায়-দেনার হিসাবে দেখা যায়, দুই লাখ ১৪ হাজার গ্রাহক ইভ্যালির কাছে পণ্য কেনার জন্য বুকিং দিয়েছেন। গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত বুকিং বাবদ গ্রাহকরা ইভ্যালির কাছে ৩১০ কোটি টাকা পাবেন।
গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়ে যথা সময়ে পণ্য সরবরাহ না করা কিংবা অর্থ ফেরত না দেওয়া ও পণ্য সরবরাহকারী মার্চেন্টদের বকেয়া পরিশোধ না করায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইভ্যালির বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে।
আলোচিত ওই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের চেয়ারাম্যানের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। তাদের দেশত্যাগে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই জুলাইয়ের শেষে যমুনা গ্রুপের এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ পাওয়ার খবর দেওয়া হয় ইভ্যালির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
সেখানে বলা হয়েছিল, প্রাথমিক বিনিয়োগ হবে ২০০ কোটি টাকা, ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে মোট এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে যমুনা গ্রুপ।
এ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম ও পরিচালক মনিকা ইসলামের দু’টি বক্তব্যও সেখানে ছিল।
সে সময় ইভ্যালির ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কোনো আপত্তি না করলেও যমুনা গ্রুপের পরিচালক শামসুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাদের সঙ্গে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা হয়েছিল। তাদের কাগজপত্রগুলো অডিট করিয়ে দেখছি। পজিটিভ কিছু থাকলে সেক্ষেত্রে বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু আমরা চাইনি এ পর্যায়ে গণমাধ্যমে কিছু আসুক। কারণ বলার মতো কোনো অগ্রগতি আসলে হয়নি। ’
অডিট কতটা এগিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই পর্যন্ত তাদের কী অবস্থা। আমরা যদি তাদের সঙ্গে যাইও সেক্ষেত্রে আমরা কিন্তু তাদের প্রিভিয়াস লায়েবিলিটি নেব না। এ সমস্ত দায়-দেনা আমরা নেব না। এগুলো আগে পরিষ্কার করতে হবে। ’
প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে সম্মত হওয়ার কথাও অস্বীকার করেন শামসুল হাসান।
‘এখন পর্যন্ত ওখানে কোনো বিনিয়োগ যায়নি। নগদ কোনো টাকা-পয়সা ইভ্যালিকে দেওয়া হয়নি। কীভাবে ২০০ কোটি টাকার প্রসঙ্গ এলো বুঝলাম না। তাদের সঙ্গে আমাদের পণ্যভিত্তিক ব্যবসার লেনদেন রয়েছে। ’
‘২০০ কোটি শব্দটি আমরা উচ্চারণ করিনি। যমুনা গ্রুপ থেকে এ জাতীয় কোনো শব্দ উচ্চারণ করা হয়নি। যখন সবকিছু ঠিক থাকবে, ইনভেস্টমেন্ট তখনই হবে। ’
যমুনা গ্রুপের এ অবস্থানের বিষয়ে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের বক্তব্য জানতে তাকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে হিসাব জমা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান জানান, ইভ্যালি তাদের গ্রাহক ও দায়-দেনার হিসাব বৃহস্পতিবার জমা দিয়েছে।
‘ওরা (ইভ্যালি) জানিয়েছে, দুই লাখ ১৪ হাজার ক্রেতার কাছে তাদের দেনা আছে ৩১০ কোটি টাকা। ’
ইভ্যালি প্রতি ১৫ দিন পর পর গ্রাহক ও মার্চেন্টের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে জানাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত একবারও সেই হিসাব দেয়নি বলে জানান হাফিজুর রহমান। ফলে গত দুই মাসে তারা আদৌ গ্রাহকের কোনো টাকা ফেরত দিয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।