।। প্রীতিতপা ।।
দাদু, বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী সুকেশ রঞ্জন সরকার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মাতৃভূমি হানাদারমুক্ত করতে বাড়ি ছেড়েছিলেন। মৃত্যুভয় তুচ্চ করে বুক চিতিয়ে লড়াইয়ের মাধ্যমে এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন। জনকের সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে হয়েছিলেন শামিল। ঘাতকরা মহামানব শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িকতার কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করতে চেয়েছিল। ঘাতকদের রূখে দিয়ে বাঙালি জাতির পিতা হত্যার প্রতিশোধ নিতে আবারও অস্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন দাদু। জেল, জুলুম, নির্যাতন সয়ে জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করেছিলেন। প্রাপ্তির প্রত্যাশা না করে আদর্শের অক্ষয় দাগ নিয়ে সম্প্রতি গত হয়েছেন তিনি।
দাদু,
যাঁর কোলে বসে গল্প শুনে কেটেছে আমার শিশুকাল, যাঁর আলোচনা শুনে আমি আলোচনা করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম এবং যাঁর হাত ধরে আমার সৎসঙ্গের আলোচনার জগতে প্রবেশ, যিনি সবসময় আনন্দ আহ্লাদে আমায় ভরিয়ে রেখেছেন তিনি আমার দাদু; যিনি আমায় অসংখ্যবার বঙ্গবন্ধুর গল্প বলতে গিয়ে অশ্রু সংবরণ করতে পারতেন না সেই প্রতিরোধযোদ্ধা ও মুজিবপ্রেমী স্বস্ত্যয়নী ব্রতধারী শ্রী সুকেশ রঞ্জন সরকার।
আমায় কাঁদতে দেখলে বা মন খারাপ থাকলে তিনি কোনো না কোনো ভাবে আমায় হাসাতেন, অথচ তাঁর কথাই আজ লিখতে গিয়ে আমার হাত বারবার কেঁপে উঠছে আর চোখ থেকে অনবরত জল ঝরছে। বারবার শুধু মনে পড়ছে আমায় হাসানোর জন্য নানান গল্প, কৌতুকের আশ্রয় আর নেবেন না দাদু।
ছোট্টবেলা থেকে ইংরেজিতে কিছু পারছিনা, কোনো রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে জানিনা বা কোনো বক্তৃতার স্ক্রিপ্ট লিখতে পারছিনা বললেই, বাপী যাঁর সাহায্য নেওয়ার কথা আমায় প্রথমে বলতেন, তিনি আমার শ্রদ্ধেয় দাদু।
গত পরশুদিন বাপী গিয়ে দেখে আসেন দাদুকে। কিন্তু আমার আর দেখার ভাগ্য হলোনা। বিকেল ৫টার দিকে আমি ভিডিও কল দেই উনাকে দেখার জন্য। চোখ মেলে মিটমিট করে চেয়ে শুধু বললেন, “ভাল থাকিস।” সবাই বলছিলো কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর। কিন্তু তিনি শয্যাশায়ী থাকা সত্ত্বেও তাঁর কন্ঠস্বরে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন পাইনি আমি। বরং ঠিক যেভাবে আগে কথা বলতেন তার চেয়েও শক্তিশালী কন্ঠস্বরে আমায় বললেন, “ভাল থাকিস।” এই আমায় বলা তাঁর শেষ কথা । আর কোনোদিন ওই কন্ঠস্বর শুনব না, আর কোনোদিন আমায় ফোন করে বলবেনা, “কি রে, কি খবর তোর?”
সজ্ঞানে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আজ লাল সবুজের ভাঁজে দেশপ্রেমিক বীর যোদ্ধা মাতৃভূমিতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন । মৃত্যুর আগে বলে গেলেন, “আমি আমার আরাধ্য দেবতা বঙ্গবন্ধুর কাছে চলে যাচ্ছি।” আর কিছু বলার ভাষা নেই আমার। সবাই আমার দাদুর জন্য পরমপিতার রাতুল চরণে প্রার্থনা করবেন, তিনি যেন ওপারে ভালো থাকেন। 🙏🙏🙏
#প্রীতিতপা
২৮শে আগস্ট ‘২১🖤🥀