বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের ভাটির জনপদ দিরাই উপজেলার উজানধলের ধ্যানের আকাশ ছেড়ে ২০০৯ সনের এই দিনে লোকান্তরিত হয়েছিলেন বাউল সম্রাট খ্যাত লোকসঙ্গীত মহাজন শাহ আবদুল করিম। আজ তার বারোতম প্রয়াণদিবস। এ উপলক্ষে উজানধলে পারিবারিক উদ্যোগে আলোচনাসভা ও করিমগীতি আসরের উদ্যোগ নিয়েছে শাহ আবদুল করিম পরিষদ। ভক্তবৃন্দ গানে সুরে স্মরণ করবেন গুরু শাহ আবদুল করিমকে। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ট গণসঙ্গীত হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। ভক্তবৃন্দ ডাকেন বাউল সম্রাট হিসেবে।
কোন পুস্তকি বিদ্যা ছিলনা শাহ আবদুল করিমের। কয়েকদিন নৈশ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন তিনি। হতদরিদ্র শাহ আবদুল করিম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বদলে প্রাকৃতিক শিক্ষা ও হাওরের ভাব এবং বিপ্লব তাকে আলোড়িত করেছিল। সচতেনভাবে তিনি গানে মানুষের বন্দনা করেছেন। কুসংস্কার, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। এ কারণে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর রোষানলে বারবার পড়তে হয়েছে তাকে। তারপরও সর্বহারা শ্রেণি তার গানে উৎসাহ পেয়েছে।
ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ৬দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তার সঙ্গীত প্রেরণা দিয়েছে দেশের মানুষদের। হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী, ভাষানী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আবদুস সামাদ আজাদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ বিশিষ্ট রাজনীতিবিদদের সমাবেশে গান গেয়েছেন। তিনি সচেতনভাবেই দেশের মানুষকে গানে সুরে উজ্জিবীত করেছেন।
১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কালনী নদীর তীরের গ্রাম উজানধলে জন্মগ্রহণ করেন শাহ আবদুল করিম। দারিদ্র্যের সঙ্গে আজন্ম যুদ্ধ করে মেরুদণ্ড সোজা করে সঙ্গীত চর্চা করেছেন তিনি -বঞ্চিত মানুষের মুক্তির কথা বলে গেছেন গানে গানে। তার গানে প্রেম-বিরহ ছিল, তেমনি ছিল খেটে খাওয়া মানুষের কথা। বস্তুবাদী, সাম্যবাদী চিন্তা ধারা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চিন্তাধারা তার গানে মূর্ত হয়েছে। এ কারণে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ট গণসঙ্গীত মহাজন হিসেবে বিবেচিত তিনি।
বাউল লাল শাহ বলেন, আমি বাউল সম্রাটের শেষ দিকের শীষ্য। কিছুদিন তার সান্নিধ্য পেয়েছি। তিনি লোভ, হিংসার উর্ধে ওঠে মানুষের জয়গান গাইতেন। আমাদেরকে মানুষ হওয়ার তালিম দিয়ে গেছেন তিনি। তার মতো মহান মানুষ যুগের প্রতিনিধি হয়ে আসেন।
বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের পুত্র শাহ নূরজালাল বলেন, করোনা মহামারির কারণে আমরা ঘরোয়াভাবে বাবার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছি এবারও। তারপরও বাউল ভক্তবৃন্দরা আসছেন শ্রদ্ধা জানাতে। তারা বাউল সম্রাটকে গানে সুরে স্মরণ করবেন।
‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, শোষক তুমি হও হুশিয়ার কথা বলো সবাধানে, মুরশিদ ধনহে, বন্দে মায়া লাগাইছে, রঙের দুনিয়া তরে চাই না, কৃষ্ণ আইল রাধার কুঞ্জে, গান গাই আমার মনরে বুঝাই, বসন্ত বাতাসে, কেন পীরিতি বাড়াইলারে বন্ধু, তোমরা কুঞ্জ সাজাওগোসহ হাজারো কালজয়ী গান রচনা করেছেন তিনি। একুশে পদক, শিল্পকলা একাডেমি পদক, জাতিসংঘের সম্মাননা, লেবাক অ্যাওয়ার্ডসহ নানা সম্মাননাসহ নানা সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।